বারাসত, 20 অক্টোবর: উৎসবের আনন্দের জোয়ারে যখন গা ভাসিয়েছে আপামর বাংলা, তখনই অন্য মানুষদেরও মুখে হাসি ফোটাতে মানবিকতার নজির গড়ল বারাসত পৌরসভা ৷ মহাষষ্ঠীর বোধনের আগেই তিন প্রবীণ 'দেব-দেবী'কে জরাজীর্ণ ও অসুস্থ অবস্থা থেকে উদ্ধার করে তাঁদের পুনর্জন্ম দেওয়ার চেষ্টা চালালেন পৌরসভার চেয়ারম্যান ৷ আর এই মহান যজ্ঞে তাঁকে পুরোপুরি সঙ্গ দিলেন বারাসত হাসপাতালের সুপার ৷ অসুস্থ তিন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে তাঁদের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হল হাসপাতালে ৷ তাঁদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং ভবিষ্যতেও তাঁদের যাবতীয় দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছে পৌরসভা ৷
ষষ্ঠীর দিন বারাসত পৌরসভার এমনই মানবিক মুখ দেখল শহরবাসী । আর গোটা ঘটনায় যাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য তিনি হলেন, বারাসত পৌরসভার চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় । হাসপাতাল সূত্রে খবর, দীর্ঘদিন ধরে না খাওয়া দাওয়ার ফলে তিন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগছেন । তার জেরে তাঁদের শরীরে নানারকম রোগও বাসা বেঁধেছে । এই অবস্থায় ওই তিন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে সুস্থ করাই চ্যালেঞ্জ পৌরসভা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ।
তিনজন হলেন শশধর রায় । বয়স 72। রীণা রায় । বয়স 70 । আর তৃতীয়জন হলেন কাজল পোদ্দার । যাঁর বয়স প্রায় 90-র কাছাকাছি । শশধর এবং রীণা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী । কাজল রীণার বড় দিদি । শশধরের শ্যালিকা । দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা বারাসত পৌরসভার 9 নম্বর ওয়ার্ডের ভাটরাপল্লির ফ্ল্যাটে বসবাস করেন । ফ্ল্যাটের আবাসিক কিংবা পাড়া প্রতিবেশী কারও সঙ্গেই তেমন কোনও কথাবার্তা নেই । বেশিরভাগ সময়ই এই তিন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ফ্ল্যাটের বন্ধ কামরায় থাকতেন । ফলে বন্ধ ফ্ল্যাটের ভিতরে তাঁরা কীভাবে থাকছেন তা আবাসিকদের পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না ।
সূত্রের খবর, শুক্রবার ওই ওয়ার্ডে ডেঙ্গি অভিযানে গিয়ে পৌরসভার স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রথমে নজরে আসে বন্ধ ফ্ল্যাটের বিষয়টি । দীর্ঘক্ষণ কড়া নাড়লেও দরজা না খোলায় সন্দেহ তৈরি হয় তাঁদের মনে । বিষয়টি জানানো হয় ফ্ল্যাটের আবাসিকদের । তাঁরা এসে ডাকাডাকি করলে বেশ কিছুক্ষণ পর অবশ্য ফ্ল্যাটের দরজা খোলেন শশধর রায় । দরজা খুলতেই দুর্গন্ধ নাকে আসে সকলের । সবাই লক্ষ্য করেন, শশধরের স্ত্রী রীণা এবং তাঁর শ্যালিকা কাজল জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছেন ঘরের মেঝেতে । গোটা ঘরটিই তখন অগোছালো ও অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় । সেই দৃশ্য দেখে তড়িঘড়ি স্বাস্থ্যকর্মীরা বিষয়টি জানান পৌরসভার চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায়কে ।
আরও পড়ুন: বোধনের মধ্যে দিয়ে আজ থেকে শুরু দেবীর আরাধনা, রাজ্যবাসীকে মহাষষ্ঠীর শুভেচ্ছা মমতার
এরপর তাঁর উদ্যোগেই পৌরসভার অ্যাম্বুলেন্সে চাপিয়ে অসুস্থ তিন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে সোজা নিয়ে যাওয়া হয় বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে । সেখানেই আপাতত চিকিৎসা চলছে তাঁদের । তিন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এতটাই অসুস্থ যে, তাঁরা কথা বলার মতো অবস্থাতেও নেই । ফলে হাসপাতালে তাঁরা কোনও কিছুই ঠিকমতো বলতে পারেননি । এ দিকে,হাসপাতালে পৌঁছে ওই তিনজনের চিকিৎসার ব্যাপারেও খোঁজখবর নেন বারাসত পৌরসভার চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় ।
তিনি বলেন,"ওখানকার আবাসিকদের কাছ থেকে ফোন পেয়ে প্রথমেই আমি হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করি । তিনি আমাকে তৎক্ষণাৎ বলেন, অসুস্থ ওই তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে । হাসপাতাল সুপার ওঁদের চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নিয়েছেন । মানবিক দিক থেকেই আমরা ওঁদের পাশে দাঁড়িয়েছি । সুস্থ হওয়ার পর ওই তিন বৃদ্ধ-বৃদ্ধার যাবতীয় দায়িত্ব নেওয়া হবে পৌরসভা থেকে । এটুকু আমরা আশ্বস্ত করছি ৷"
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, "যেহেতু তিনজনই গুরুতর অসুস্থ, তাই ওঁদের সুস্থ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেওয়াটাই হবে আমাদের লক্ষ্য । সেই দিক থেকে বলতে পারি, আমরা ওঁদের চিকিৎসায় কোনও রকম ত্রুটি রাখব না । দেখাশোনা করার লোক না থাকলে যেটা হয় !পরিচর্যার অভাবেই ওঁরা এতটা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ষষ্ঠীর দিন চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় যেভাবে উদ্যোগ নিয়ে তাঁদের ভর্তির ব্যবস্থা করেছেন তা সত্যিই অনবদ্য ৷"
পৌরকর্মীরা কোনওরকমে তিন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে অ্যাম্বুলেন্সে চাপিয়ে নিয়ে যান বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে । সেখানেই অসুস্থ তিনজনকে ভর্তি করে নেওয়া হয় ।