বারাসত, 29 জুন : বিশেষভাবে সক্ষম ও জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে দেখে বয়স বোঝার উপায় নেই । 31 বছর বয়সী সাদিক আনোয়ারকে দেখে যে কেউ ভাববে তাঁর বয়স 14 থেকে 15 বছর ৷ 11 বছর ধরে অনাথ সাদিকের ঠিকানা নিউটাউনের একটি বোধনা হোম । প্রায় পাঁচ বছর ধরে তিনি রেক্টাল প্রোলাপস নামে এক জটিল অসুখে ভুগছিলেন । এই অসুখের ফলে শরীরের বাইরে বেরিয়ে যেত মলদ্বার । হোম কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েও সাদিককে সুস্থ করে তুলতে পারেন নি । অবশেষে মিলল রেহাই ৷ সুস্থতার পথে সাদিক ৷ এই রোগের ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচার করে ধীরে ধীরে তাঁকে সুস্থ করে তুলেছেন বারাসতের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা । গতকাল হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাদিককে তুলে দিলেন তাঁর হোম কর্তৃপক্ষের হাতে ।
রেক্টাল প্রোলাপস নামে এক জটিল রোগে আক্রান্ত সাদিককে সুস্থ করার সবরকম চেষ্টা চালান হোম কর্তৃপক্ষ । চিকিৎসকরা জানান, জটিল এই রোগ থেকে সুস্থ হওয়ায় একমাত্র উপায় অস্ত্রোপচার । তবে তা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ । এরপর করোনা আবহে কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরেও অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি সাদিকের । ফলে, যন্ত্রণায় এতদিন কাতরাচ্ছিলেন তিনি । শেষে উপায় না দেখে হোম কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেন বারাসত জেলা হাসপাতালের সঙ্গে । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সম্মতিতে 15 জুন সেখানে ভর্তি করা হয় বিশেষভাবে সক্ষম সাদিককে ।
ঝুঁকিপূর্ণ এই অস্ত্রোপচারের জন্য চারজন চিকিৎসকের একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয় বারাসত হাসপাতালের তরফে । এই টিমে ছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক রবীন মুখোপাধ্যায়-সহ একজন করে সাইক্রিয়াটিস্ট, অ্যানাসস্থেটিস্ট এবং শল্য চিকিৎসক ৷ হাসপাতাল সুপার সুব্রত মণ্ডল রোগীর বন্ডে সই করে ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারের সম্মতি দেন ৷
আরও পড়ুন : গোটা বিশ্ব থেকে সাহায্য, 16 কোটির ওষুধে প্রাণ বাঁচল শিশুর
এরপর 16 জুন শনিবার অস্ত্রোপচার হয় সাদিকের । অস্ত্রোপচার সফল হওয়ায় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে থাকেন তিনি ৷ এরপর গতকাল হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয় তাকে । এদিন সাদিককে নিতে হাসপাতালে এসেছিলেন বোধনা হোমের সুপার সুব্রত সরকার । তার হাতেই তুলে দেওয়া হয় সাদিককে ।
এই বিষয়ে বারাসত হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, "একদিকে করোনা পরিস্থিতি অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচার । দুটি দিক খেয়াল রেখেই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে আমাদের । তাছাড়া একজন বিশেষভাবে সক্ষম রোগীকে অ্যানাস্থেসিয়া করাটাও সমস্যা ছিল । তবুও হাসপাতালের চার চিকিৎসকের চেষ্টায় অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে । জটিল এই রোগ থেকে ওকে সুস্থ করতে পেরে খুব ভাল লাগছে ।"
চিকিৎসক রবীন মুখোপাধ্যায় বলেন, "এই ধরনের অস্ত্রোপচারে সব সময় ঝুঁকি থাকে । সফল অস্ত্রোপচারে সাদিক সুস্থ হয়ে উঠেছে ৷ চিকিৎসক হিসেবে এটাই প্রাপ্তি ।"
অন্যদিকে, বিশেষভাবে সক্ষম সাদিককে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সুস্থ করে তোলায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রশংসা করেছেন হোমের সুপার সুব্রত সরকার । তিনি বলেন, "ওকে এর আগে অনেকবার সুস্থ করার চেষ্টা করা হয়েছিল । কিন্তু তা সম্ভব হয়নি । কুর্নিশ জানাচ্ছি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মানবিক উদ্যোগকে ।"
আরও পড়ুন : দু'টি মাথা এবং তিনটি হাত নিয়ে জন্মাল শিশুকন্যা