অশোকনগর , 21 জুন : দেশজুড়ে লকডাউনের কারণে বিপর্যস্ত শিল্পব্যবস্থা । ভারী শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পও আজ বিপন্ন । উত্তর 24 পরগনার অশোকনগরের অন্যতম কুটির শিল্প সোনার বাক্স । কিন্তু টানা প্রায় তিন মাস ধরে লকডাউনের কারণে বিপাকে পড়েছেন অশোকনগরের সোনার বাক্স তৈরির কারিগররা । জীবিকা হারিয়ে আজ তাঁরা কেউ মাছ বিক্রি করছেন । কেউ বেচছেন সবজি । অনেকে আবার নাম লিখিয়েছেন 100 দিনের কাজে ।
অশোকনগরের অন্যতম কুটিরশিল্প সোনার বাক্স। স্থানীয় পি এল ক্যাম্প , মধ্যপাড়া , হরিপুর-সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছোটো-বড় মিলিয়ে তিনশো-র বেশি সোনার বাক্স তৈরির কারখানা রয়েছে । এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে পাঁচ হাজার শ্রমিক যুক্ত । পরোক্ষভাবে আরও কয়েক হাজার । অশোকনগরে তৈরি সোনার বাক্স কলকাতা-সহ দেশের বড় বড় শহরে পৌঁছে যায় । মার্চ মাস থেকে লকডাউন শুরু হয় দেশে । তারপর থেকে থমকে গেছে সোনার বাক্স তৈরির কাজ । ফলে, বেশিরভাগ দিন অর্ধাহারে কাটছে কারিগরদের । প্রথম দিকে কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের কিছু আর্থিক সাহায্য করেছেন । চাল-ডাল দিয়েছেন । পরে তাঁরা আর পারেননি । আবার কারখানার মালিকদের অনেকে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে চালাচ্ছিলেন । ব্যাঙ্কের চাপও আসছে । সবমিলিয়ে অশোকনগরের 300টি সোনার বাক্স তৈরির কারখানার একটিও এখন চালু নেই । ফলে সংসার চালাতে কারিগররা মাছ বিক্রি, মাটি কাটার কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন ।
পিএল ক্যাম্প এলাকার একটি কাসকেড কারখানার মালিক ভোলা ঘোষ । তাঁর অধীনে 150 শ্রমিক কাজ করতেন । তিন মাস ধরে তাঁর কারখানা বন্ধ । ভোলাবাবু বলেন , "লকডাউনের কারণে আমাদের ব্যবসা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে । আমার কারখানা থেকে সোনার বাক্স কলকাতা, দিল্লি, চেন্নাই যায়। লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। 150 জন কারিগর বেকার হয়ে গেছেন । প্রথম দিকে আমরা যতটা পেরেছিলাম সাহায্য করেছিলাম । কিন্তু এখন আর সাহায্য করতে পারছি না । বাইরে বিভিন্ন জায়গায় মাল দিয়ে আমাদেরও টাকা আটকে গেছে । যাঁরা মাল নিয়েছেন তাঁরাও এই মুহূর্তে টাকা দিতে পারছেন না । তাই ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিতে হয়েছে । ভেবেছিলাম, তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে । কিন্তু তিন মাস কেটে গেল । কারখানা চালু করতে পারলাম না । ব্যাঙ্কেরও চাপ রয়েছে । নিজেদেরও পরিবার রয়েছে । কীভাবে আমাদের চলবে ? "
তিনি চাইছেন, সরকার তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিক । এই বিষয়ে তিনি বলেন , " সরকার তো সববিষয়ে এগিয়ে আসে । আমাদের গয়নার বাক্স তৈরির দিকে যদি এগিয়ে আসে তাহলে আমরা উপকৃত হব । নতুন করে সবকিছু শুরু করতে পারব । "
দুলাল সাহা সোনার বাক্স তৈরির কারিগর । বাড়িতে বউ-ছেলে রয়েছে । কারখানা বন্ধ হওয়ায় এখন সবজি বিক্রি করেন । তিনি বলেন , " প্রায় 12 বছর আমি সোনার বাক্স তৈরির সঙ্গে যুক্ত । তিন মাস ধরে কোনও কাজ নেই । প্রথম প্রথম মালিকরা সাহায্য করেছেন । কিন্তু তাঁরাই বা আর কতদিন করবেন ? তাই বাধ্য হয়ে এখন সবজি বিক্রি করছি । গাছ কাটার কাজও করেছি কয়েক দিন । পেট তো চালাতে হবে । তাই এই কাজগুলি করতে বাধ্য হচ্ছি । "