দত্তপুকুর, 29 অগস্ট: উত্তর 24 পরগনার দত্তপুকুরের মোচপোল গ্রামে রমরমিয়ে চলত কেরামত আলির বেআইনি বাজি কারবার । বিস্ফোরণস্থলের 50 মিটার দূরে বিস্ফোরণকাণ্ডের মূল চক্রী নিহত কেরামত আলির আরও একটি বেআইনি বাজি গোডাউনের হদিস পেল ইটিভি ভারত । সেখানে মজুত করা রয়েছে বাজি ও রাসায়নিক । ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেরামত ও তাঁর ছেলে-সহ 9 জনের মৃত্যুর দু’দিন পর, মোচপোল গ্রামে ফের মিলল বাজির পাহাড়ের খোঁজ ।
স্থানীয়দের দাবি, বাড়ি ভাড়া নিয়ে বেআইনি বাজির কারবার ফেঁদে বসেছিল কেরামত আলি । গুদামে এখনও মজুত রয়েছে প্রচুর রাসায়নিক । পাশেই আরও একটি বন্ধ ঘরে বাজি রাখা ছিল বলে দাবি স্থানীয়দের । ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এই ধরনের গুদাম থাকায় আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারা ।
তাঁদের অভিযোগ, এর আগেও গুদাম ভাড়া করে বাজির কারবার চালাত কেরামত । বসতি এলাকায় বিপজ্জনক ব্যবসা নিয়ে আপত্তি জানালে কেরামত আলি হুমকিও দিত বলে অভিযোগ । মোচপোল গ্রামে এই ধরনের বেআইনি বাজির গুদাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের ।
দত্তপুকুরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে 9 জনের মৃত্যুর পর টনক নড়েছে পুলিশের । সোমবার রাতে দত্তপুকুরের মোচপোল কাঠুরিয়া-সহ বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে 12 হাজার 940 কেজি নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধার করেছে পুলিশ । রাতেই 5-6টি গাড়ি করে উদ্ধার হওয়া বাজি নিয়ে যাওয়া হয় থানায় । বাজি উদ্ধারে তল্লাশি চালানোর পাশাপাশি, এফআইআর-এ নাম থাকা রমজান আলি ওরফে কালোর খোঁজ করছে পুলিশ ।
আরও পড়ুন: দত্তপুকুরে বিস্ফোরণস্থলের অদূরে পেঁয়াজ গোডাউনের আড়ালে উদ্ধার বিপুল পরিমাণ বাজি
মূল অভিযোগকারী প্রভাস চক্রবর্তীর অভিযোগে নাম রয়েছে এই আইএসএফ কর্মীর । তাঁর বিরুদ্ধে কেরামত আলির সঙ্গে যোগসাজশে বেআইনি বাজি কারবারে মদত জোগানোর অভিযোগ রয়েছে । এছাড়া আব্দুল মোহিত নামে আরও এক চক্রীর নাম উঠে আসছে দত্তপুকুর বিস্ফোরণকাণ্ডে । যিনি ঘটনার 15 মিনিটের মধ্যেই সপরিবারে বাড়ি ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন অন্যত্র ।
সূত্রের খবর, বিস্ফোরণস্থলের অদূরে পরিত্যক্ত ইটভাটায় যে অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি হদিস মিলেছিল, সেটি বকলমে চালাতেন আব্দুল মোহিত-ই । যেখানে ইতিমধ্যেই রাসায়নিক সরঞ্জাম, টেস্ট টিউব, মেশিনপত্র থেকে শুরু করে জার্মানির সিল দেওয়া বিকার, সমস্ত কিছুরই সন্ধান পাওয়া গিয়েছে । যদিও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তার খবর পরিবেশন হতেই সেটি সিল করে দেওয়া হয় পুলিশের তরফে । পুলিশের এই তদারকি ও তৎপরতা দেখে এলাকাবাসীর দাবি, আগে তারা তৎপর হলে এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা যেমন এড়ানো যেত, তেমনই এতগুলো মানুষের প্রাণহানিও হত না । ফলে, পুলিশ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে ।
আরও পড়ুন: বিস্ফোরণস্থলে এনআইএ, আইএসএফের ঘাড়েও দোষ চাপালেন পুলিশ সুপার
এদিকে, বিস্ফোরণস্থলের আশপাশের গোডাউনগুলিতে এখনও প্রচুর বিস্ফোরক ও নিষিদ্ধ শব্দবাজি মজুত থাকায় কার্যত ঘুম উড়েছে স্থানীয় লোকজনের । সেগুলো বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে প্রশাসনের তরফে । ফলে, আরও বিপুল পরিমাণ বাজি উদ্ধার হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে । ইতিমধ্যে পুলিশ এই ঘটনায় তিনটি পৃথক মামলা দায়ের করেছে ৷ অন্যদিকে, দত্তপুকুরের মোচপোল গ্রাম যে বেআইনি বাজি কারবারের জতুগৃহে পরিণত হয়েছে, তা বলাই যায় ।