দেগঙ্গা, 1 জুন : ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে উপড়ে পড়া একের পর এক গাছ পরিষ্কার করতে এখন ব্যস্ত প্রশাসনের লোকজন । কিন্তু এর মধ্যেই আমফানের দাপট থেকে রক্ষা পাওয়া বহুমূল্য বেশ কয়েকটি অন্য গাছ (যেগুলির ক্ষতি হয়নি) কেটে পাচারের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে খোদ পঞ্চায়েত সদস্য ও তার দলবলের বিরুদ্ধে । তাও আবার প্রশাসন ও বন দপ্তরের অনুমতি ছাড়াই । ঘটনাটি দেগঙ্গার কলসুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চাণ্ডাল আটি গ্রামের । বেআইনি এই কাজের প্রতিবাদ করতে গিয়ে পঞ্চায়েতের সদস্য নুহু হক ও তার দলবলের রোষের মুখে পড়তে হয়েছে আশিক বিল্লাহ, নাসির মণ্ডলসহ কয়েকজন গ্রামবাসীকে । আক্রান্তও হয়েছেন আশিক বিল্লাহ ও তাঁর পরিবার । অভিযোগ, পঞ্চায়েত সদস্য নুহু হক ও তাঁর দলবল আশিক বিল্লাহর বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায় । ভাঙচুর করা হয় মোটর সাইকেলও । আক্রান্তের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্যসহ 7 জনের বিরুদ্ধে দেগঙ্গা থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে । তবে, পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাউকেই গ্রেপ্তার করেনি । তাঁদের বক্তব্য,"অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে । তদন্ত শুরু হয়েছে ।" যদিও,তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলসুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য নুহু হক ।
আমফানের ধ্বংসলীলায় দেগঙ্গা ব্লকের কলসুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চান্ডাল আটি গ্রামের অসংখ্য গাছ উপড়ে গিয়েছে । ধরাশায়ী হয়েছে মহীরুহগুলিও । এমনিতেই প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে শহর, শহরতলি থেকে গ্রামীণ এলাকায় প্রচুর গাছ ভেঙে গিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে । কলকাতা শহরে উপড়ে যাওয়া গাছ, প্রতিস্থাপন করার চেষ্টাও শুরু হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে । এই পরিস্থিতিতে আমফান ঝড় থেকে রক্ষা পাওয়া বহুমূল্য গাছ কেটে পাচারের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে খোদ কলসুর পঞ্চায়েতের সদস্য নুহু হকের বিরুদ্ধে । চাণ্ডাল আটি এলাকার রাস্তার ধারেই ছিল একটা বড় আকারের বাবলা গাছ । রবিবার সেই গাছেই একের পর এক কুড়ুল চালিয়ে গাছ কাটা শুরু করেছেন কাঠুরিয়ারা । গাছের ডাল কেটে ইঞ্জিন ভ্যানে করে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে বলেও অভিযোগ । আর এই কাজের জন্য বন দপ্তর কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি । এমনই অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসীরা । আর এ নিয়েই সরব হয়েছেন স্থানীয় আশিক বিল্লাহ, নাসির মণ্ডলসহ কয়েকজন । জীবন্ত গাছ কাটার প্রতিবাদ করাতেই পঞ্চায়েত সদস্য নুহু হকের রোষানলে পড়েন আশিক বিল্লাহ ও তাঁর পরিবারের লোকজন । অভিযোগ, নুহু হক ও তাঁর দলবল চড়াও হন আশিকের বাড়িতে । আশিক বিল্লাহর মা খাদিজা বেগম বলেন,"ওরা আমার ছেলে ও ছেলের বউকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় । বাধা দিতে গেলে আমাকেও ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয় । জীবন বাঁচাতে কোনও মতে ঘরে ঢুকে তালা লাগিয়ে দিই । এরপর, ওরা বাইরে থাকা চেয়ার, বাইকে ভাঙচুর চালিয়ে চম্পট দেয় ।" ঘটনার পরই এদিন বিকেলে খাদিজা বেগম দেগঙ্গা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ।
আশিক বিল্লাহ বলেন "পঞ্চায়েত সদস্য নুহু হক অসাধু উপায়ে অর্থ উপার্জনের জন্য ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ গাছের পাশাপাশি জীবন্ত গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন । পরিবেশ ভারসাম্য বজায় রাখা ও গাছের মতো অমূল্য সম্পদকে বাঁচানোর জন্য প্রতিবাদ করাতেই আমার বাড়িতে এসে পঞ্চায়েত সদস্য ও তার দলবল মারধর, ভাঙচুর করেছে ।" যদিও, তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কলসুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য নুহু হক । তিনি বলেন,"মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে । উপড়ে যাওয়া গাছগুলোই শুধু কাটা হয়েছে পঞ্চায়েতের তরফে । কোনও জীবন্ত গাছ কাটা হয়নি ।" এদিকে, এ বিষয়ে বন দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, "বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে । তারপরই এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব হবে ।"