হালিশহর, 26 এপ্রিল: সন্ধ্যেবেলা বাংলা ক্যালেন্ডার এবং হাতে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে বাড়ির পথে বঙ্গবাসী । আজকের দিনে প্রতিবছরই এই চিত্র দেখা যায় শহর-গ্রাম বাংলায় এবং মফস্বলে । আজ অক্ষয় তৃতীয়া । বৈশাখ মাসের এই দিনটিতে রাজ্যের বিভিন্ন দোকানে লক্ষ্মী গণেশ পুজো হয় । শুরু হয় নতুন খাতার প্রচলন । কবি-সাহিত্যিকরা এই দিনে তাদের নতুন বই প্রকাশ করেন বই পাড়া থেকে । অক্ষয় তৃতীয়া এলেই দোকানে লক্ষ্মী-গণেশের পুজো হয় । সকাল থেকেই গঙ্গার ঘাট এবং মন্দিরগুলিতে মানুষের ঢল নামে । সারাবছরের কেনা বেচায় পরিচিত দোকানদার আমন্ত্রণ পত্র পাঠায়, লেখা থাকে "শুভ অক্ষয় তৃতীয়া" ।
অশৌচ অবস্থা থেকে শৌচ ও মুক্তি লাভের জন্য সকাল থেকেই গঙ্গার ঘাটগুলিতে থাকে মানুষের ভিড় । আজ থেকেই শুরু হয় ফলহারিণী কালীপুজোর কাঠামো তৈরির কাজ । তবে এবছর পরিস্থিতি আলাদা । লকডাউনের জেরে দোকান-বাজার সবই বন্ধ । অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনীয় সামগ্রীর কিছু দোকান কেবল খোলা রয়েছে । গৃহবন্দি মানুষের ঘর থেকে বেরোনোর উপায় নেই । হালিশহরের গঙ্গার ঘাটগুলি সকাল থেকেই ফাঁকা । প্রতিবছর গঙ্গা স্নান সেরে রামপ্রসাদের মন্দিরে পুজো দিয়ে যাঁরা দোকানে গিয়ে লক্ষ্মী গণেশ পুজো করতেন, তাঁদেরও আজ দোকানের ঝাঁপ বন্ধ । জীবন-মরণের লড়াই যেখানে, সেখানে কী আর অক্ষয় তৃতীয়া করার মানসিকতা থাকে কোনো দোকানদারের!
আসাম বঙ্গীয় সারস্বত মঠ বা নিগমানন্দ সরস্বতী আশ্রমে প্রতি বছর এইদিনে মহোৎসব হয় । প্রচুর মানুষ সকাল থেকে ভিড় করেন মন্দির চত্বরে । নাটমন্দিরগুলিতে তিল ধারণের জায়গা থাকে না । 20 হাজারেরও বেশি মানুষ পাত পেড়ে এখানে অন্নভোগ গ্রহণ করন । কিন্তু এবছর চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা । অসম বঙ্গীয় সারস্বত মঠের সন্ন্যাসী স্বামী বিমলানন্দ সরস্বতী জানান, ‘‘বিপর্যয়ের কারণে এ বছর কোনও অনুষ্ঠান করা হচ্ছে না । প্রতিবছর ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে ভক্তরা সমবেত হন । এবছর এই দুর্যোগে টেলিফোনেই আশ্রমের খোঁজখবর নিচ্ছেন দূর-দূরান্তের ভক্তরা । কোরোনা ভাইরাসের ত্রাসে নিগমানন্দ আশ্রমের পরিবেশ সম্পূর্ণ আলাদা । কবে আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে জীবন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে ।