দত্তপুকুর, 15 জানুয়ারি: 24 ঘণ্টা পার! চড়-কাণ্ডে এখনও অধরা অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী (Accused TMC Worker) শিবম রায়। ঘটনার পর থেকেই বেপাত্তা তিনি। বাড়িতেও নেই তিনি। শিবম কোথায় রয়েছে, তা নিয়েও অন্ধকারে পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের দাবি, "ঘটনার পর শিবম আর বাড়িতে ফিরে আসেনি। মোবাইলেও পাওয়া যাচ্ছে না তাঁকে।" স্বভাবতই দুশ্চিন্তায় রয়েছে পরিবারের সদস্যরা। অন্যদিকে, 24 ঘণ্টা পরও অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী শিবম রায় পুলিশের নাগালে না-আসায় আতঙ্কের প্রহর নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন আক্রান্ত বিজেপি নেতা সাগর বিশ্বাস। তাহলে কি শাসকদলের কর্মী হওয়ার কারণেই পুলিশ অভিযুক্তকে ধরতে গড়িমসি করছে? নাকি এই ঘটনায় পুলিশের ওপর উপর মহলের কারোর চাপ রয়েছে? এমনই সব প্রশ্ন দানা বাঁধতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলে।
প্রসঙ্গত, শনিবার উত্তর 24 পরগনার দত্তপুকুরের নীলগঞ্জ সাইবনা এলাকায় চলছিল 'দিদির সুরক্ষা কবচ'-কর্মসূচি (Didir Surakshakabach in Duttapukur)। সেই কর্মসূচিতে 'দিদির দূত'-হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ (Rathin Ghosh)। সেখানেই এলাকার অনুন্নয়ন এবং স্থানীয় নন্দদুলাল মন্দিরের সংস্কার নিয়ে অভিযোগ জানাতে গিয়ে দিদির দূতেদের হাতে আক্রান্ত হতে হয় স্থানীয় বাসিন্দা তথা বিজেপি নেতা সাগর বিশ্বাসকে। অভিযোগ, কর্মসূচি চলাকালীন আচমকাই সাগরের গালে সপাটে চড় কষিয়ে বসান তৃণমূল কর্মী শিবম রায়। এমনকী আক্রান্ত ওই বিজেপি নেতাকে ঘাড় ধাক্কা দিতে দিতে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় মন্দির চত্বর থেকে। নিমেষের মধ্যে সেই ঘটনার দৃশ্য ছড়িয়ে পড়তেই বিতর্ক দানা বাঁধে। পরে অবশ্য আক্রান্তের পিঠ চাপড়ে ক্ষমা চেয়ে নেন মন্ত্রী রথীন ঘোষ।
যদিও তাতে বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। ঘটনার জেরে শনিবার গেরুয়া শিবিরের দিনভর আন্দোলনে তেতে ছিল নীলগঞ্জের সুভাষনগর এলাকা। আন্দোলনের পাশাপাশি চড়-কাণ্ডে অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে দত্তপুকুর থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয় বিজেপির তরফে। তারপর কেটে গিয়েছে 24 ঘণ্টারও বেশি সময়। এখনও অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী শিবম রায়ের হদিশ পায়নি পুলিশ। স্বভাবতই পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে। এই বিষয়ে আক্রান্ত বিজেপি নেতা সাগর বিশ্বাস বলেন, "অভিযুক্ত ওই তৃণমূল কর্মী বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ, পুলিশ তাঁকে নাকি খুঁজে পাচ্ছে না। আক্রান্ত হওয়ার পরও যদি সঠিক বিচার না-পায় তাহলে মানুষ আর পুলিশ প্রশাসনের ওপর ভরসা রাখবে কীভাবে?
আরও পড়ুন: চড়কাণ্ডে অভিযুক্ত 'হাওয়া'! গ্রেফতারের দাবিতে দত্তপুকুরে মিছিল গেরুয়া শিবিরের
তিনি আরও বলেন, "পুলিশের কাছে একটাই অনুরোধ, অবিলম্বে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হোক।" তাঁর কথায়, "ঘটনার পর থেকে বিভিন্নভাবে চাপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। বলা হচ্ছে আমিই নাকি, সেখানে গিয়ে ভুল করেছি।' দিদির সুরক্ষা কবচ'-এ কি শুধু তৃণমূলের লোকজনই অভিযোগ জানাতে পারবে? বাকি রাজনৈতিক দলগুলির কি কোনও অভিযোগ কিংবা দাবিদাওয়া পেশ করার অধিকার নেই? তাহলে সেই কর্মসূচি করার কোনও মানে নেই। 'দিদির সুরক্ষা কবচ'-এ সুরক্ষিত নন রাজ্যের মানুষ। সম্পূর্ণ ব্যর্থ এই কর্মসূচি। দলীয় নেতৃত্বরা বিষয়টির দিকে নজর রাখছেন। সেই মতো পরবর্তী আন্দোলন ঠিক করা হবে।"
অন্যদিকে, ঘটনার পর শনিবার সংবাদ মাধ্যমের সামনে ছেলের হয়ে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন শিবমের মা অনিমা রায়। অথচ একদিন যেতে না-যেতেই রবিবার ভাইয়ের হয়ে ব্যাট ধরে বিতর্ক বাড়িয়েছেন শিবমের দিদি সবিতা সাহা। তাঁর দাবি, "ও কি কাউকে মার্ডার করে ফেলেছে? একই জায়গায় থাকলে অনেক সময় নিজেদের মধ্যে মারামারি হয়? অথচ সেই সামান্য ঘটনাকে বড় করে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে ৷"এই নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের এক্তিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সবিতা।