বারাসত,16 মে: লকডাউন যেন ওলট-পালট করে দিয়েছে শৈশব। পড়ুয়াদের অনেকেই এখন বইয়ের মধ্যে মাথা গোঁজার বদলে সংসারের হাল ধরতে ব্যস্ত।কেউ বেরিয়ে পড়ছেন সবজির ডালা নিয়ে।আবার কেউ মাইলের পর মাইল সাইকেলের প্যাডেল ঘুরিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে হাজির হচ্ছেন পাড়ায় পাড়ায় । তেমনই একজন 13 বছরের কিশোর আসিফ গাজিও।তাঁকে-ও সংসারের হাল ধরতে বাইরে বেরোতে হয়েছে।
ছোট্ট কাঁধে সংসারের গুরু দায়িত্ব।সাইকেল নিয়ে বিভিন্ন শাকপাতা বিক্রি করছে পাড়ায় ঘুরে ঘুরে।সেখান থেকে যেটুকু উপার্জন হচ্ছে,তা তুলে দিচ্ছেন মায়ের হাতে।লকডাউনের মধ্যে এটাই এখন রোজকার নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্লাস এইটের ছাত্র আসিফের।
আসিফের বাড়ি বারাসতের পাল পাকুরিয়ায়।বাবা সফিক গাজি পেশায় ভ্যান চালক।লকডাউনের জেরে বন্ধ রোজগার।পরিবারে আসিফ ছাড়াও মা,দুই দাদা ও ছোট বোন রয়েছে।এক দাদা গাড়িচালক।লকডাউনের কারণে সে-ও বের হতে পারছে না গাড়ি নিয়ে।অপর দাদা সবজির ভ্যান নিয়ে বাইরে বেরোচ্ছেন।তা থেকে যেটুকু উপার্জন হয়,তা দিয়ে ছয় জনের সংসার ঠিকমতো চলেনা।তার উপর রয়েছে আসিফ ও বোন নৈসুন খাতুনের পড়াশোনার খরচও।সংসার চালাতে গিয়ে কার্যত হিমশিম খেতে হচ্ছিল মেজদাদা বারিকুল গাজির।এই অবস্থায় সংসারের হাল ধরতে আসিফকে-ও বেরতে হয়েছে রাস্তায়।কোরোনার ভয় উপেক্ষা করেই প্রতিদিন মাইলের পর মাইল সাইকেল চালিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে বিভিন্ন শাকপাতা।কোনও দিন বিক্রি হচ্ছে সব শাকপাতা।আবার কোনও দিন বিক্রি হচ্ছে না অর্ধেকও।দিনের শেষে যেটুকু আয় হচ্ছে,তা তুলে দিচ্ছেন মা আসমাত তারা বিবি-র হাতে।লকডাউনে এটাই এখন রোজকার নিয়ম ওই কিশোরের।
লকডাউনে আসিফের মতো আরও অনেক খুদে পড়ুয়াকে এভাবেই সংসারের হাল ধরতে বেরোতে হচ্ছে । এই বিষয়ে আসিফ বলে,"আগে বাবা ও দুই দাদার আয়ের ওপর কোনও রকমে সংসার চলত।কিন্তু,লকডাউন জারি হওয়ার পর থেকে বাবা আর ভ্যান নিয়ে বের হতে পারছেন না।বড় দাদা ওবোদুল গাজির আয়ও বন্ধ। একা মেজ দাদার পক্ষে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছিল না।তাই,পরিবারকে সহযোগিতা করতে শাকপাতা বিক্রির পথ বেছে নিতে হয়েছে। " তাঁর আক্ষেপ, "প্রশাসন কিংবা স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে যদি আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যেত,তাহলে হয়তো এভাবে বাইরে বেরোতে হতনা"।