বারাসত, 12 অক্টোবর : হরষে নয়, বারাসতে সপ্তমীর সকাল শুরু হল বিষাদে ! শব্দবাজি প্রাণ কাড়ল পাঁচ বছরের শিশুর। মৃত শিশুর নাম সায়ন সেন। ঘটনায় নাম জড়িয়েছে বিল্টু নামে স্থানীয় এক যুবকের। অভিযোগ, সে পাড়ার শিশুদের সঙ্গে নিয়ে একটি কৌটোর মধ্যে শব্দবাজি রেখে ফাটাচ্ছিল ৷ তখনই শব্দবাজির প্রতিঘাতে কৌটার একটি অংশ ছিটকে গিয়ে লাগে ওই শিশুর গলাতে। রক্তাক্ত অবস্থায় তড়িঘড়ি তাঁকে বারাসত জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি । চিকিৎসা শুরুর আগেই মৃত্যু হয় ওই শিশুর । ঘটনায় অভিযুক্তের কড়া শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছে মৃত শিশুর পরিবার। পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
বারাসত পৌরসভার 29 নম্বর ওয়ার্ডের বড়পোল চৈতন্য নগর এলাকায় মাস দুয়েক আগে স্ত্রী, দুই সন্তান নিয়ে ভাড়া আসেন সবজি ব্যবসায়ী সুমন সেন। বছর পাঁচেকের সায়ন ছিল ছোট ছেলে । সপ্তমীর সকালে ভাড়া বাড়িতে মায়ের সঙ্গে ছিল সায়ন। সেই সময় পাড়ার এক যুবক শিশুদের সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় বাজি ফাটানোর আয়োজন করে । অভিযোগ, কৌটার মধ্যে শব্দবাজি রেখে ফাটাচ্ছিল সে। বাজির শব্দ শুনে সায়নও সেখানে চলে আসে ৷ কিছুক্ষণ পর ঘটে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, "শব্দবাজির প্রতিঘাতে কৌটার একটি অংশ ছিটকে সরাসরি লাগে ছোট্ট সায়নের গলায়। রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়ে সে।" এরপর উদ্ধার করে তাকে তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয় বারাসত জেলা হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা শুরুর আগেই মৃত্যু হয় তার । হাসপাতাল সূত্রে খবর, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জেরেই মৃত্যু হয়েছে শিশুটির। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব পাড়ার সকলে। প্রশ্ন উঠেছে শব্দবাজি নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে সকলের চোখ এড়িয়ে তা পৌঁছে গেল ওই যুবক কিংবা শিশুদের হাতে ! কীভাবে তা প্রকাশ্যে ফাটানো হচ্ছিল? এমনও প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন মহলে।
এদিকে ঘটনার পর থেকেই শোকে কাতর মৃত সায়নের পরিবার। বাকরুদ্ধ মৃত শিশুর বাবা-মা। সন্তানকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তাঁরা। ইটিভি ভারতকে সায়নের মা ঋতু সেন জানান, ঘটনার সময় বাড়ির সামনেই রান্না করছিলেন তিনি । সায়ন তাঁর সামনেই খেলছিল। হঠাৎই শব্দবাজির জেরে কৌটোর ধারালো অংশ ছিটকে এসে সায়নের গলায় আঘাত করে । একইসঙ্গে দোষীর কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি ৷ একই সুর মৃত শিশুর বাবা সুমন সেনের গলাতেও।
স্থানীয়দের একাংশ আবার দাবি করেছে শব্দবাজি ফাটানোর সঙ্গে অভিযুক্ত যুবকের কোনও যোগই ছিল না। বাবাই দাস নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, "পাড়ার ছোটরাই সকলে মিলে বাজি ফাটাচ্ছিল। তখনই ঘটে যায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। আমরা নিজেরাও মর্মাহত। ঘটনার জেরে পাড়ার পুজোও বন্ধ হওয়ার মুখে। কীভাবে ওই পরিবারকে সান্ত্বনা দেব বুঝে উঠতে পারছি না।"
খবর পেয়ে দুপুরের দিকে বারাসত থানার আইসি দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম তদন্তে যায় ঘটনাস্থানে। স্থানীয় লোকজন এবং পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে । পরে বারাসত হাসপাতালে গিয়ে মৃতের পরিবারের সঙ্গেও কথা বলে তারা।