দেগঙ্গা, 24 মে: পেশায় ক্ষেতমজুর । অন্যের জমিতে কাজ করে কোনও রকমে সংসার চলে । নুন আনতে পান্তা ফুরোয় দিনমজুরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টেই কি না, ঢুকেছে প্রায় 100 কোটি টাকা ৷ অবাক লাগলেও বাস্তবে এমনটা হওয়ায় রাতের ঘুম উড়েছে মহম্মদ নাসিরুল্লা মণ্ডলের । কীভাবে এত টাকা একসঙ্গে অ্যাকাউন্টে ঢুকল, তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পাড়ছেন তিনি । উলটে থানা মারফত নোটিশ হাতে পেয়ে দিশেহারা নাসিরুল্লা। ইতিমধ্যে তাঁর রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংকের অ্যাকাউন্টটিও ব্লক করে দেওয়া হয়েছে । যাতে কোনও রকমের লেনদেন হতে না-পারে অ্যাকাউন্ট থেকে । তার জেরে আরও ফাঁপড়ে পড়েছেন ওই দিনমজুর ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দেগঙ্গার চৌরাশি পঞ্চায়েতের বাসুদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা বছর 26-র মহম্মদ নাসিরুল্লা মণ্ডল । পরিবারে বাবা-মা ছাড়াও রয়েছে তাঁর স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে । ছ'জনের সংসার চলে নাসিরুল্লার আয়ের ওপর । তাও আবার কোনওরকমে । সংসারের টাকা বাঁচিয়ে কখনও হয়তো সামান্য টাকা নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করেছেন । আবার প্রয়োজনে সেই টাকা তুলেও নিয়েছেন । একসঙ্গে কয়েক হাজার টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করার সামর্থ্য কখনও হয়নি নাসিরুল্লার । টাকা হাতে পাওয়া তো দূরের কথা । দেগঙ্গার রাষ্ট্রায়ত্ত যে ব্যাংকে তাঁর অ্যাকাউন্ট রয়েছে সেখানে সর্বসাকুল্যে রয়েছে মাত্র সতেরো টাকা । তিনিই রাতারাতি কোটিপতি হয়ে গিয়েছেন ভুয়ো লেনদেনের জেরে ।
সূত্রের খবর, সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সাইবার ক্রাইম থানার তরফে একটি নোটিশ পাঠানো হয় উত্তর 24 পরগনার দেগঙ্গা থানাকে । সেই নোটিশ সামনে আসতেই প্রকাশ্যে আসে বিষয়টি । ইতিমধ্যে জঙ্গিপুর সাইবার ক্রাইম থানা থেকে পাঠানো সেই নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে দিনমজুর নাসিরুল্লার হাতে । সেখানে লেখা রয়েছে আগামী 30 মের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে দেখা করতে হবে তাঁকে । এরপরই সটান তিনি হাজির হন দেগঙ্গার ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে । সেখান থেকেও তাঁকে একই কথা বলা হয় । একদিকে পুলিশের হাজিরা দেওয়ার নোটিশ । অন্যদিকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় 100 কোটি জমা পড়ায় এখন নাওয়াখাওয়া চলে গিয়েছে নাসিরুল্লা ও তাঁর পরিবারের । এই পরিস্থিতিতে কী করবেন । আর কী করবেন না । তা যেন ঠাহর করে উঠতে পারছেন না ।
এই বিষয়ে মহম্মদ নাসিরুল্লা মণ্ডল বলেন, "আমি একজন দিনমজুর । অন্যের জমিতে কাজ করে কোনও রকমে সংসার চলে । প্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারছিলাম না । পরে শিক্ষিত একজন নোটিশটি দেখে পুরো ঘটনাটি খুলে বলে । জানায় 100 কোটির থেকে এক পয়সা কম ঢুকেছে আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে । এত টাকা একসঙ্গে ঢোকায় টেনশন বেড়েছে । কী করব বুঝে উঠতে পারছি না ৷" অন্যদিকে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হোক, এখন সেটাই চাইছেন নাসিরুল্লার পরিবারের লোকেরা ।
আরও পড়ুন: বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ নিয়ে তিনমন্ত্রীর ভিন্ন মত, সমালোচনার ঝড় রাজনৈতিকমহলে