ETV Bharat / state

পুরুলিয়ার এই গ্রাম যেন শিল্পীর রাঙানো ক্যানভাস

author img

By

Published : Aug 11, 2019, 6:59 PM IST

Updated : Aug 12, 2019, 5:54 PM IST

গোটা একটা গ্রামের ইতি উতি ছড়িয়ে আছে সৌন্দর্য আর ভাবনার মিশেল । সুগনিবাস, জঙ্গলমহলের প্রান্তিক পুরুলিয়া জেলার হুড়া থানার এই গ্রামটা দেখলে মনে হবে সুখেরই নিবাস । সকলে এখানে যেন শিল্পী । আর গ্রামটা শিল্পীর রাঙানো ক্যানভাস ।

সুগনিবাস

পুরুলিয়া, 11 অগাস্ট : 'তু লাল পাহাড়ির দেশে যা রাঙা মাটির দেশে যা...' গানটা মনে পড়লেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে লালমাটির রাস্তা, ছোটো বড় টিলা, জঙ্গল আর বন্যপ্রাণ । সঙ্গে ঝরনার হালকা আওয়াজ, পাখির ডাক আর বিস্তীর্ণ মাঠ । হচ্ছে লালমাটির অঞ্চল পুরুলিয়ার কথা । যার কথা বলতে গেলে ছৌ, মাদল, ঝুমুর বা পটনাচের কথা উঠে আসতে বাধ্য । একাধিক শিল্পকলায় সম্বৃদ্ধ এই জেলায় ফি বছর পর্যটকের ভিড়ও কম নয় । অযোধ্যা, জয়চণ্ডী পাহাড়, বাগমুণ্ডি, বারন্তিতে ভিড় হলেও অনেকেই চেনে না সুগনিবাসাকে । যাকে এককথায় বলা যেতে পারে মুক্ত প্রদর্শনশালা ।

টিলায় ঘুরতে ঘুরতে বা লাল মাটির সরু রাস্তা দিয়ে যেতে গিয়ে চোখে পড়তেই পারে মাটির বাড়ির দেওয়ালে আলপনা, বিভিন্ন রঙের ছবি বা পটচিত্রের আদলে তৈরি কোনও লোককথা । গোটা এলাকাটিকে একঝলক দেখে মনে হবে মুক্ত প্রদর্শনশালা । যেখানে ইতিউতি ছড়িয়ে আছে সৌন্দর্য আর ভাবনার মিশেল । গোটা সুগনিবাসা গ্রামটা সাজানো এমনই সৃজনশীলতার মোড়কে ।

আদতে সুগনিবাসার নাম ছিল সুখনিবাস । অপভ্রংশ হয়ে যা পরে সুগনিবাসা হয়েছে । গ্রামটা দেখলে মনে হবে সুখেরই নিবাস । খড় পুড়িয়ে, গিরি মাটি, গোবর, পাতার সবুজ রং বের করে এবং নানা রঙের সেরামিক যুক্ত মাটি থেকে ঘর রাঙান তারা । নানা লোককথা উঠে আসে এই গ্রামের দেওয়ালে । জঙ্গলমহলের প্রান্তিক পুরুলিয়া জেলার হুড়া থানার এই গ্রামে আদিবাসী সাঁওতালদের বসবাস । সকলে এখানে যেন শিল্পী । তবে শিল্পী ভাতা পান না তাঁরা । লোকশিল্প বা কারুকার্যের পাঠও নেওয়া হয়নি কখনও । এমনিতেই বংশানুক্রমে গ্রামকে সাজানোর পাঠ পেয়েছেন ফলে এখন আর কাউকে বলতে হয় না কিভাবে দেওয়াল রাঙাতে হবে ।

শুধু দেওয়ালচিত্র নয় । অবাক হতে হবে গ্রামের পরিবেশের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা দেখে । তবে, স্বচ্ছভারত মিশন বা মিশন নির্মল বাংলার নাম কিন্তু এখানে কেউ শোনেননি । দারিদ্রতা আছে কিন্তু সদিচ্ছার অভাব নেই । তাই তাঁরা রাস্তা এমনভাবে তৈরি করেছেন যাতে বর্ষায় রাস্তায় জল না জমে । বাড়ির এঁটো থালাপাতা কেউ ফেলেন না রাস্তায় । তার জন্য পৃথক গোবর কুঁড় (আবর্জনা ফেলার জায়গা) আছে । কেউ কোনও নিয়মে না বেঁধে দিলেও পরিষ্কার রাস্তাঘাট, পুরুলিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, ঐতিহ্য, দেওয়ালে মন ভালো করে দেওয়া ছবি আর সুন্দর সাজানো ঘরবাড়ি । এভাবেই চলেন গ্রামের সকলে । রয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র এবং একটি ক্লাব ।

দেখুন ভিডিয়ো

এবিষয়ে গ্রামের বাসিন্দা সুখু মাণ্ডি, অষ্টমী কিস্কু, রমণী কিস্কুরা জানান, প্রাকৃতিক রং, গোবর এবং খড়িমাটির রং দিয়ে সাজানো হয় দেওয়াল । পূর্বপুরুষদের আমল থেকে এভাবেই গ্রামকে সাজিয়ে তোলা হয় । এর জন্য নিজেদের ট্যাঁকের সামান্য পয়সা আর পরিশ্রম লাগে । গ্রামের কেউই যত্রতত্র নোংরা আবর্জনা ফেলে না । এর মূল কারণ হল গ্রাম স্বচ্ছ থাকলে গ্রামের মানুষের মনটাও স্বচ্ছ থাকবে । আক্ষেপ সরকারি সাহায্য পেলে আরও আরও কিছু করে দেখাতে পারতেন । তাদের পরিশ্রম, একাগ্রতা ও সৃজনশীলতার বিষয়টি এককথায় স্বীকার করে নিয়েছেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন, "ওদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে । ওরা যা পারে আমরা তা পারি না । আদিবাসীদের একটা বৈশিষ্ট হল ওরা সাধারণের থেকে অনেক বেশি স্বচ্ছ থাকে ।"

এবছর ভালো বৃষ্টি হয়নি । তাই দেওয়ালে এখনও চকচক করছে গোরুর দুধ দোয়া বা বিভিন্ন লোকগল্পের ছবি । না হলে অন্যান্য বছর বর্ষার শেষেই শুরু হয়ে যায় নিজেদের বাড়ির দেওয়ালকে নতুন করে রাঙিয়ে তোলার পালা । সরকারি সাহায্য নয়, নিজেরাই গোটা গ্রামকে আস্ত একটা মুক্ত প্রদর্শনালয়ের মতো সাজিয়ে রেখেছে, যা বাকি দেশের কাছে অবশ্যই শিক্ষণীয় ।

পুরুলিয়া, 11 অগাস্ট : 'তু লাল পাহাড়ির দেশে যা রাঙা মাটির দেশে যা...' গানটা মনে পড়লেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে লালমাটির রাস্তা, ছোটো বড় টিলা, জঙ্গল আর বন্যপ্রাণ । সঙ্গে ঝরনার হালকা আওয়াজ, পাখির ডাক আর বিস্তীর্ণ মাঠ । হচ্ছে লালমাটির অঞ্চল পুরুলিয়ার কথা । যার কথা বলতে গেলে ছৌ, মাদল, ঝুমুর বা পটনাচের কথা উঠে আসতে বাধ্য । একাধিক শিল্পকলায় সম্বৃদ্ধ এই জেলায় ফি বছর পর্যটকের ভিড়ও কম নয় । অযোধ্যা, জয়চণ্ডী পাহাড়, বাগমুণ্ডি, বারন্তিতে ভিড় হলেও অনেকেই চেনে না সুগনিবাসাকে । যাকে এককথায় বলা যেতে পারে মুক্ত প্রদর্শনশালা ।

টিলায় ঘুরতে ঘুরতে বা লাল মাটির সরু রাস্তা দিয়ে যেতে গিয়ে চোখে পড়তেই পারে মাটির বাড়ির দেওয়ালে আলপনা, বিভিন্ন রঙের ছবি বা পটচিত্রের আদলে তৈরি কোনও লোককথা । গোটা এলাকাটিকে একঝলক দেখে মনে হবে মুক্ত প্রদর্শনশালা । যেখানে ইতিউতি ছড়িয়ে আছে সৌন্দর্য আর ভাবনার মিশেল । গোটা সুগনিবাসা গ্রামটা সাজানো এমনই সৃজনশীলতার মোড়কে ।

আদতে সুগনিবাসার নাম ছিল সুখনিবাস । অপভ্রংশ হয়ে যা পরে সুগনিবাসা হয়েছে । গ্রামটা দেখলে মনে হবে সুখেরই নিবাস । খড় পুড়িয়ে, গিরি মাটি, গোবর, পাতার সবুজ রং বের করে এবং নানা রঙের সেরামিক যুক্ত মাটি থেকে ঘর রাঙান তারা । নানা লোককথা উঠে আসে এই গ্রামের দেওয়ালে । জঙ্গলমহলের প্রান্তিক পুরুলিয়া জেলার হুড়া থানার এই গ্রামে আদিবাসী সাঁওতালদের বসবাস । সকলে এখানে যেন শিল্পী । তবে শিল্পী ভাতা পান না তাঁরা । লোকশিল্প বা কারুকার্যের পাঠও নেওয়া হয়নি কখনও । এমনিতেই বংশানুক্রমে গ্রামকে সাজানোর পাঠ পেয়েছেন ফলে এখন আর কাউকে বলতে হয় না কিভাবে দেওয়াল রাঙাতে হবে ।

শুধু দেওয়ালচিত্র নয় । অবাক হতে হবে গ্রামের পরিবেশের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা দেখে । তবে, স্বচ্ছভারত মিশন বা মিশন নির্মল বাংলার নাম কিন্তু এখানে কেউ শোনেননি । দারিদ্রতা আছে কিন্তু সদিচ্ছার অভাব নেই । তাই তাঁরা রাস্তা এমনভাবে তৈরি করেছেন যাতে বর্ষায় রাস্তায় জল না জমে । বাড়ির এঁটো থালাপাতা কেউ ফেলেন না রাস্তায় । তার জন্য পৃথক গোবর কুঁড় (আবর্জনা ফেলার জায়গা) আছে । কেউ কোনও নিয়মে না বেঁধে দিলেও পরিষ্কার রাস্তাঘাট, পুরুলিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, ঐতিহ্য, দেওয়ালে মন ভালো করে দেওয়া ছবি আর সুন্দর সাজানো ঘরবাড়ি । এভাবেই চলেন গ্রামের সকলে । রয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র এবং একটি ক্লাব ।

দেখুন ভিডিয়ো

এবিষয়ে গ্রামের বাসিন্দা সুখু মাণ্ডি, অষ্টমী কিস্কু, রমণী কিস্কুরা জানান, প্রাকৃতিক রং, গোবর এবং খড়িমাটির রং দিয়ে সাজানো হয় দেওয়াল । পূর্বপুরুষদের আমল থেকে এভাবেই গ্রামকে সাজিয়ে তোলা হয় । এর জন্য নিজেদের ট্যাঁকের সামান্য পয়সা আর পরিশ্রম লাগে । গ্রামের কেউই যত্রতত্র নোংরা আবর্জনা ফেলে না । এর মূল কারণ হল গ্রাম স্বচ্ছ থাকলে গ্রামের মানুষের মনটাও স্বচ্ছ থাকবে । আক্ষেপ সরকারি সাহায্য পেলে আরও আরও কিছু করে দেখাতে পারতেন । তাদের পরিশ্রম, একাগ্রতা ও সৃজনশীলতার বিষয়টি এককথায় স্বীকার করে নিয়েছেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন, "ওদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে । ওরা যা পারে আমরা তা পারি না । আদিবাসীদের একটা বৈশিষ্ট হল ওরা সাধারণের থেকে অনেক বেশি স্বচ্ছ থাকে ।"

এবছর ভালো বৃষ্টি হয়নি । তাই দেওয়ালে এখনও চকচক করছে গোরুর দুধ দোয়া বা বিভিন্ন লোকগল্পের ছবি । না হলে অন্যান্য বছর বর্ষার শেষেই শুরু হয়ে যায় নিজেদের বাড়ির দেওয়ালকে নতুন করে রাঙিয়ে তোলার পালা । সরকারি সাহায্য নয়, নিজেরাই গোটা গ্রামকে আস্ত একটা মুক্ত প্রদর্শনালয়ের মতো সাজিয়ে রেখেছে, যা বাকি দেশের কাছে অবশ্যই শিক্ষণীয় ।

Intro:শিল্পের গ্রাম না হলেও দেওয়াল চিত্রে মনোরম সুগনিবাসাBody:শিল্পের গ্রাম না হলেও দেওয়াল চিত্রে মনোরম সুগনিবাসাConclusion:শিল্পের গ্রাম না হলেও দেওয়াল চিত্রে মনোরম সুগনিবাসা
Last Updated : Aug 12, 2019, 5:54 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.