পুরুলিয়া, 10 জুন : কারও বাড়ির দেওয়ালে ঝোলানো রয়েছে ড্রাম ৷ কারও বাড়িতে বাক্স-বন্দী ট্রাম্পেট, সানাই ৷ দু'মাস ধরে ধুলো পড়ছে বাদ্যযন্ত্রগুলোতে ৷ কখনও ধুলো ঝেড়ে অভ্যেসের বশে বাড়িতেই চলে তালিম ৷ কিন্তু, এতে টাকা রোজগার হচ্ছে না ৷ জুটছে না দু'বেলার ভাতও ৷ যাঁরা একসময় অন্যের বাড়ির লোকেদের বাজনার তালে মাতিয়ে রাখতেন, তাঁরাই আজ আধপেটা খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন ৷
কোরোনা রুখতে মার্চের শেষেই দেশজুড়ে শুরু লকডাউনের ৷ 31 মে তা শেষ হলেও রয়েছে অনেক বিধিনিষেধ ৷ আস্তে আস্তে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে সব কিছু ৷ কিন্তু, সামাজিক অনুষ্ঠান বা জমায়েতে এখনও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা ৷ নিয়মের গেরোয় কাটছাঁট অনুষ্ঠানে ৷ উপস্থিত থাকছে হাতে গোনা কিছু মানুষ ৷ আর তার জেরেই কাজ হারিয়েছে ব্যান্ড পার্টির ব্যবসার সঙ্গে যুক্তরা ৷ দীর্ঘ তিন মাস নেই কোনও বুকিং ৷ রোজগার একেবারে বন্ধ ৷ ভরসা বলতে রেশনের চাল ৷ কখনও বাড়ির জিনিসপত্র বন্দকও দিতে হয়েছে ৷ এভাবে চললে বাড়ি, জমি বিক্রিও করতে হতে পারে শঙ্কা তাঁদের ৷
পুরুলিয়ার 1 নম্বর ব্লকের বিখ্যাত ব্যান্ড বাজনার দলের সদস্য সন্টু কালিন্দী ও তপন কালিন্দীরা বলেন, "অন্যান্য বছর এই সময় আমাদের বাজার রমরমা থাকে ৷ ডাক পড়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৷ রোজগারও হয় খুবই ভালো ৷ কিন্তু, এ বছর কোরোনার জেরে সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসাও বন্ধ ৷ রোজগার বন্ধ ৷ সংসার চলবে কীভাবে ভেবে পাচ্ছি না ৷ বাড়ির জিনিসপত্র বন্দক রেখে সংসার চালাচ্ছি ৷ সরকারি সাহায্য বলতে শুধু রেশনের চাল ৷ কিন্তু, তা দিয়ে মাসের পর মাস চলে না ৷ রোজগার একেবারে বন্ধ ৷ এভাবে চললে নিজেদের ব্যবসা ধরে রাখা মুশকিল হয়ে পড়বে ৷"
অন্যদিকে, ক্ষতির মুখে কার্ড ব্যবসায়ীরাও ৷ পত্রের দ্বারা নিমন্ত্রণের চলও যেন হারাতে বসেছে কোরোনার জেরে ৷ সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় কার্ড ছাপানোও বন্ধ ৷ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বিয়েবাড়ি, অন্নপ্রাশনের মতো থাকে প্রচুর অনুষ্ঠান ৷ মাস খানেক আগে থেকেই চলে কার্ড ছাপানোর কাজ ৷ কিন্তু, এবার কোরোনার জেরে বন্ধ ছাপাখানা ৷ ফলে বন্ধ ব্যবসাও ৷
পুরুলিয়া শহরের কার্ড ব্যবসায়ী সুরজ আগরওয়াল বলেন, "লকডাউনে দোকান একেবারে বন্ধ ছিল ৷ ফলে এই সময় রোজগা একেবারেই হয়নি ৷ লকডাউন শেষ হলেও কার্ড ছাপানোর বুকিং একটাও পাওয়া যায়নি ৷ সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ ৷ হাতে গোনা কয়েকটি সামাজিক অনুষ্ঠান হলেও তা ছোটো করে করছে মানুষ ৷ কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণ জানানো এখন বন্ধ ৷ এই অবস্থায় কর্মীদের বেতন দিতে পারছি না ৷ কবে স্বাভাবিক হবে সব কিছু, সেই আশায় দিন গুনছি ৷"