কলকাতা, 10 মে: কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার সবথেকে ভালো উপায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তথা ইমিউনিটি বাড়িয়ে তোলা । তাই রাজ্যের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ইমিউনিটি বাড়িয়ে তোলার জন্য আগেই ভেষজ, আয়ুর্বেদিক দ্রব্য বিনামূল্যে বিলি করার উদ্যোগ নিয়েছিল পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয় । এবার সেই একই লক্ষ্যে আরও একটি নতুন উদ্যোগ নিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয় । রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষদের যোগব্যায়াম শেখানো হচ্ছে ।
কেন্দ্রীয় সরকারের ডিপার্টমেন্ট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (DST) অধীনে সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনোভেশন হাব রয়েছে । মোট 20টি আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামকে টার্গেট করে বিগত এক বছর ধরে এই হাব থেকে তাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে । কোরোনা আবহে সেরকমই একটি উদ্যোগ, ইমিউন ভিলেজ । পুরুলিয়ার এক নম্বর ব্লকের বরাঘুটু গ্রামের আদিবাসীদের ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে ইমিউন ভিলেজ তৈরির কাজ করা হয় । সেই গ্রামে ক্যাম্প করে আদিবাসীদের বিনামূল্যে আদা, হলুদ, লবঙ্গ, ইউক্যালিপটাস তেলের মতো বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ভেষজ সামগ্রী দেওয়া হয় । সেগুলির ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনও করা হয় তাদের । এবার আদিবাসীদের ইমিউনিটি বৃদ্ধির লক্ষ্যে যোগব্যায়াম ও প্রাণায়াম প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে হাবের তরফ থেকে ।
সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনোভেশন হাবের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর সুব্রত রাহা জানিয়েছেন, "আদিবাসীদের যোগব্যায়াম ও প্রাণায়াম করানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । 20টি টার্গেট গ্রামের মধ্যে মোট চারটি গ্রামে যোগা শিবির করানো হবে । মাসের প্রতি সপ্তাহে এক একটি নির্বাচিত গ্রামে যাওয়া হবে । তিনদিন করে চলবে এই শিবির । যেখানে মূলত বর্তমান প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা অংশগ্রহণ করবেন । ইতিমধ্যেই জয়পুর ব্লকের রোপো গ্রামপঞ্চায়েতের সাঁওতাল অধ্যুষিত একদুয়ার গ্রামে যোগব্যায়াম শিবির করা হয়েছে । এই উদ্যোগের জন্য বিভোর অধ্যুষিত গ্রাম ভূপতিপল্লিকেও নির্বাচন করা হয়েছে । আগামী সপ্তাহের শুক্রবার সেখানে গিয়ে যোগব্যায়াম শিবির করা হবে ।"
আদিবাসীদের গ্রামে গিয়ে তাঁদের যোগা করাচ্ছেন 8-10 অভিজ্ঞ যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক অভিজিৎ দে । সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগে সামিল রয়েছে পুরুলিয়া জেলার আয়ুষ বিভাগও । আয়ুষ বিভাগের চিকিৎসক অমরনাথ কোলে এবং অর্ক মুখোপাধ্যায় নির্বাচিত গ্রামগুলিতে গিয়ে স্বাস্থ্য সম্পর্কে আদিবাসীদের সচেতন করছেন । প্রয়োজনে তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করেন চিকিৎসকরা । এ ছাড়া ইমিউন ভিলেজের মতো এখানেও গোলমরিচ, লবঙ্গ, দারচিনি, কাগজি লেবু ও রসুন দেওয়া হয় । সেইসব জিনিস নিয়ে কীভাবে সকালে বিশেষ চা করে পান করতে হবে তা শেখানো হয় ।
শুধু যোগার মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি নয়, আদিবাসীদের দিয়ে ঔষধি গুণসম্পন্ন গাছ চাষ করানোরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে । যোগা প্রশিক্ষণের সঙ্গে সঙ্গেই 'বনৌষধি ভিলেজ' তৈরির লক্ষ্যেও কাজ করছেন তাঁরা ।