পুরুলিয়া, 24 জুন : অন্যান্য বছর এই সময়ের মধ্যে চারা 6-7 ইঞ্চি বড় হয়ে যায় ৷ কিন্তু এই বছর এখনও চারা রোপণই করা হয়নি ৷ কারণ অতিবৃষ্টি ৷ টানা বৃষ্টিতে আটকে পড়েছেন ধান চাষিরা ৷ আবহাওয়ার যা ভাবগতিক তাতে কবে চারা মাটিতে পুঁততে পারবেন তাও বুঝতে পারছেন না ৷ তাই এখন অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই ৷
এমনিতেই পুরুলিয়া জেলায় বছরে একবারই ধানের চাষ হয় ৷ সেটা এই সময়ই ৷ এই জেলায় আমন ধানের চাষের ক্ষেত্রে অনেকাংশেই নির্ভর করতে হয় বৃষ্টির গতি প্রকৃতির উপর ৷ কারণ পুরুলিয়া জেলাজুড়ে সেচের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে ৷ তাই ধান চাষিদের বৃষ্টির উপর নির্ভর করতেই হয় ৷ তবে এ-বছর অতিবৃষ্টি তাঁদের উল্টো সমস্যায় ফেলেছে ৷ টানা বৃষ্টিতে পুরুলিয়ার ধান চাষিরা দুর্বিপাকে পড়েছেন ৷
এবছর মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ার কারণে চাষিরা ধানের চারা রাখতেই পারেননি ৷ রোপণ করা তো পরের কথা ৷ চাষিরা সাধারণত এক মাস আগে জৈষ্ঠ্য মাস নাগাদ অর্থাৎ মে-জুন মাস নাগাদ বীজতলার মাধ্যমে ধানের চারা রাখেন ৷ তার এক মাস পর থেকেই সেই চারা রোপণ করা শুরু হয় ৷ কিন্তু এইবার গোটা প্রক্রিয়াটাই পিছিয়ে গিয়েছে বৃষ্টির জন্য ৷ পিছিয়ে গিয়েছে বললেও ভুল হবে ৷ বলা ভাল, থেমে রয়েছে ৷ এই বছর এখনও পর্যন্ত কোনও কৃষকই চারা রাখতেই পারেননি ৷
ধানের চারাকে স্থানীয় ভাবে বীজতলা বলে পরিচিত ৷ এই বীজতলা রাখার জন্য শুকনো ঝরঝরে মাটি প্রয়োজন ৷ এই মাটিতে ছড়ানো হয় ধানের বীজ ৷ তা থেকে অঙ্কুরোদ্গম হয় ৷ চারা মাপ মতো হতে হতেই চলে ধানের জমি তৈরির কাজ ৷ তারপর সময়মতো এই বীজতলা ধান জমিতে রোপণ করা হয় ৷ কিন্তু অতিবর্ষণে যা অবস্থা তাতে এখনও পর্যন্ত বীজতলার জন্য সেই মাটি তৈরি করার সুযোগই পাননি চাষিরা ৷ মাঠে গিয়ে দেখা গেল, এখন সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়াতে কেউ কেউ জল জমা খেতেই 'আছড়া বিহণ' দিচ্ছেন ৷
'আছড়া বিহণ' আঞ্চলিক শব্দবন্ধ ৷ উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকলে এই পদ্ধতিতে ধানের বীজতলা তৈরি করেন চাষিরা ৷ শুকনো ধান আগের দিন ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সেই ভেজা ধান জলকাদা জমিতেই ছড়িয়ে দেওয়া হয় ৷ পরে এই বীজ থেকেই অঙ্কুরোদ্গম হয় ৷ সেই চারাই ধান জমিতে রোপণ করা হয় ৷ এ-বছর ধানের বীজতলা রাখার সময় পেরিয়ে যাওয়ায় পুরুলিয়ার চাষিরা এখন বাধ্য হয়েই এই পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছেন ৷
ধানচাষি দশরথ মাহাতো বলেন, 'এ-বছর চাষের অবস্থা শোচনীয় ৷ এক মাস ধরে বৃষ্টির জন্য বীজতলার অসুবিধা হচ্ছে ৷ অন্যান্য যেসব সবজির বীজ ফেলা হয়েছিল, সেসবও নষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷ শুধু তাই নয়, গ্রামের সব কাঁচা বাড়ি কখন পড়ে যায় তার ঠিক নেই ৷ পুরুলিয়ার সব চাষিরাই এনিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ৷'
পরীক্ষিত মাহাতো, নবকুমার মাহাতোরা জানান, এই সময়ের মধ্যে চারা অনেক বড় হয়ে যাওয়ার কথা ৷ কিন্তু এবছর এখনও বীজতলাই তৈরি হল না ৷ তাই উপায় না পেয়ে আছড়া বিহণ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়েছে ৷
আরও পড়ুন : দক্ষিণবঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস, উত্তরবঙ্গেও ভারী বৃষ্টির সর্তকতা