পুরুলিয়া, 9 সেপ্টেম্বর : কোভিড পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের বাড়িতে রেশন সামগ্রী পৌঁছে দিতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে 'দুয়ারে রেশন' প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হয়েছে ৷ আগামী 15 সেপ্টেম্বর এর সূচনা হবে ৷ শুরুর আগে প্রকল্প নিয়ে জটিলতায় পুরুলিয়ার রেশন ডিলাররা ৷
গতকাল পুরুলিয়া সফরে আসেন খাদ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি (Jyotsna Mandi, Minister of State For Food & Supplies, Independent Change) । দুয়ারে সরকার (Duare Sarkar) নিয়ে জেলাশাসক দফতরে জেলা প্রশাসন ও ডিলারদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি । তাঁর কাছে খাদ্য বিতরণের জন্য বকেয়া কমিশনের টাকা দেওয়ার দাবি জানান রেশন ডিলাররা । তবে জেলার দুর্গম এলাকায় নেটওয়ার্ক সমস্যা থাকায় 'দুয়ারে রেশন' নিয়ে জটিলতা আরও বাড়বে বলে অভিযোগ করেছেন ডিলাররা ।
কী বলছেন রেশন ডিলাররা-
এ প্রসঙ্গে ওয়েস্ট বেঙ্গল এমআর ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন-এর (West Bengal M.R. Dealers' Association) সম্পাদক প্রভাশীস লাল সিং দেও বলেন, "আমরা মুখ্যমন্ত্রীর দুয়ারে রেশন বাস্তবায়নের পক্ষে । কিন্তু আমাদের অসুবিধেগুলো আজকের বৈঠকে সবার কাছে তুলে ধরেছি ৷ জেলার খাদ্য নিয়ামককেও জানিয়েছি ৷" তিনি নিজেই স্বীকার করে নিলেন অসুবিধেগুলো সমাধানের ব্যবস্থা না করলে এই প্রকল্প কী করে শুরু হবে, তা নিয়ে তাঁর নিজেরই সন্দেহ রয়েছে ।
তিনি আরও বলেন, "17 পাতার যে অর্ডার বেরিয়েছে, সেখানে ডিলারদের জন্য একটা লাইনও ব্যবহার করা হয়নি ৷ আগামী দিনে কী ভাবে ডিলাররা তাঁদের পরিবহণের খরচ বহন করবে, তাঁদের কর্মচারীদের বেতন দেবে, তাঁদের কমিশন কী হবে ?" এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা বের হলে, তবেই রেশন ডিলাররা পাইলট প্রজেক্টে রাজি হবেন বলে সাফ জানিয়ে দিলেন সম্পাদক প্রভাশীস ৷ তবে খাদ্য প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস মিলেছে যে মুখ্যমন্ত্রী সবার কথাই ভেবে দেখছেন, জানালেন রেশন ডিলার সংগঠনের সম্পাদক ৷ তিনি বলেন, "প্রকল্প রূপায়িত করতে মুখ্যমন্ত্রী ডিলারদের হতাশ করবেন না ৷ খাদ্য প্রতিমন্ত্রী এই আশ্বাস দিয়েছেন ৷"
তবে তাঁর দাবি, 'দুয়ারে সরকার' যে ভাবে চলছে, তার থেকেও বেশি পরিষেবা রেশন ডিলাররা দেবেন ৷ শুধু তাঁর শর্ত, "পাড়া বা টোলার মোড়ে ক্যাম্প করব ৷ সেখান থেকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করব ৷ দরজায় দরজায় গিয়ে এই খাদ্য বিলি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় ৷" তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, "আমাদের দাবি তো মানতে হবে ৷ তবে 15 তারিখের আগে আরও আলাপ-আলোচনা হবে ৷" তিনি আশা করছেন, কোনও একটা সমাধান পাওয়া যাবে ৷
আরও পড়ুন : Lighting on Duare Sarkar Camp : বাঁকুড়ায় দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে বজ্রপাত, আহত কমপক্ষে 10
খাদ্য প্রতিমন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি
পুরুলিয়ায় বৈঠকে এসে খাদ্যপ্রতিমন্ত্রী বলেন, "নির্দিষ্ট কোনও জেলায় নয়, সব জায়গাতেই দুয়ারে রেশন প্রকল্প চালু হচ্ছে ৷ একটি জেলায় যতগুলি রেশন দোকান রয়েছে, তার 50 শতাংশ দোকান নিয়ে এই প্রজেক্ট শুরু হবে ৷" তিনি জানান, মানুষকে এর মাধ্যমে কতটা সুবিধে দিতে পারা যাবে, কোথাও কোনও অসুবিধে হচ্ছে কি না, সেটা দেখা হবে ৷ তিনি বলেন, "এই মাস থেকে শুরু হচ্ছে এবং চলবে ৷" রেশন ডিলারদের কমিশন দেওয়া নিয়ে ভাবনাচিন্তা রয়েছে, কিন্তু কোনও নির্দেশিকা বেরোয়নি ৷ তবে তিনি আশ্বস্ত করেন, "রেশন ডিলাররা আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে, আমরাও তাঁদের কথা ভাবব ৷"
দুয়ারে রেশন প্রকল্পে জনগণের ক্ষতি হবে, দাবি গেরুয়া শিবিরের
রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পকে কটাক্ষ করে জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বিবেক রাঙ্গা বলেন, জনসাধারণের জন্য যে পরিষেবাগুলি সরকার চালু করছে, তার উদ্দেশ্য রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণ করা ৷ তাঁর প্রশ্ন, "কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই প্রকল্প ঘোষণা করে চলেছে রাজ্য সরকার । কী ভাবে রেশন বিতরণ হবে, মানুষের দরজায় পৌঁছাবে ? কে পৌঁছে দেবে ? যাঁরা পৌঁছে দেবেন, তাঁরা কী পাবেন ?" বিজেপি নেতার অভিযোগ এই সমস্ত বিষয়টা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে ৷ কেউ কিছু জানে না ৷ তিনি বলেন, "শুধু রাজনৈতিক স্বার্থে তড়িঘড়ি ঘোষণা করে চলেছে রাজ্য সরকার । দুটো-পাঁচটা ঘরে রেশন সামগ্রী বিতরণ করে কাগজে ছাপানো হবে, সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে যাবে ৷ আর দেখানো হবে দুয়ারে রেশন চালু হয়ে গিয়েছে ৷" কিন্তু তারপর মানুষ যেটুকু সুবিধে পেত, সেটুকুও পাবে না ৷ বরং তাঁর আশঙ্কা, "যা ক্ষতি হওয়ার, তা সাধারণ মানুষের হবে । বাকি সবাই নিজেরা রাজনীতি করে বেরিয়ে যাবে ৷ সাধারণ মানুষ রেশনের জন্য এদিক ওদিক দৌড়াতে থাকবে ৷"
গতকাল খাদ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এই দাবি পূরণের আশ্বাস পেলেও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানালেন না রেশন ডিলাররা । তাই 15 সেপ্টেম্বর থেকে পাইলট প্রজেক্টের বাস্তবায়ন নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়ে গেল ।