নন্দীগ্রাম, 11 অগস্ট: রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নির্বাচনী কেন্দ্র নন্দীগ্রাম । এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই নন্দীগ্রামের মহম্মদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস । কিন্তু সেখানেই দেখা গেল তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে শুক্রবার এই গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বোর্ড গঠন হলেও বিজেপির পছন্দের লোককেই প্রধান পদে বসাতে হল । এখানেই শেষ নয়, এই পঞ্চায়েতের নতুন প্রধান হলেন গত বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট থাকা শেখ সুফিয়ানের জামাই শেখ নান্টু ওরফে হাবিবুল । আর এই বিষয়টি নিয়েই শোরগোল শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে ।
মহম্মদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন সংখ্যা 18টি । এর মধ্যে তৃণমূল জেতে 12টি আসনে । বিজেপি পায় 6টি আসন । তৃণমূলের তরফ থেকে এদিন হুইপ জারি করে বলা হয়, প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করতে হবে সেখ শাহনওয়াজ খানকে । কিন্তু ভোটাভুটির পরে চিত্রটা ঠিক উলটো দেখা যায় । দলের হুইপকে অমান্য করে সেখ সুফিয়ানের জামাই সেখ হাবিবুলকে সমর্থন করেছেন তৃণমূলের 6 জয়ী প্রার্থী ৷ বিজেপির 6 সদস্যও তাঁকে সমর্থন করেন ৷ যার ফলে সমস্ত হিসেব নিকেষ উলট পালট করে দলের অফিসিয়াল প্যানেলের বিরুদ্ধে গিয়ে বোর্ড গঠন করে তৃণমূল । ফলে তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে এই পঞ্চায়েত প্রধান পদে যাঁর নাম পাঠানো হয়েছিল তিনি আর প্রধান হতে পারলেন না ।
আর এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক গুঞ্জন । তাহলে কি ভোটে সেখ সুফিয়ান টিকিট না পেয়ে দলে নিজের গুরুত্ব বোঝাতে এভাবে তাঁর অনুগামীদের কাজে লাগালেন ! যদিও এই বিষয়ে সেখ সুফিয়ানের কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি । তবে বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন সুফিয়ানের জামাই তথা নয়া পঞ্চায়েত প্রধান শেখ হাবিবুল । তিনি বলেন, "কে কাকে সমর্থন করল সেটা বড় কথা নয় । মানুষের ভোটে নির্বাচিত সদস্যরা আমাকে ভোট দিয়েছেন । তাঁদের ভোটে জিতেই আমি প্রধান হয়েছি ।ঠ
আরও পড়ুন: বিজেপি প্রার্থীকে প্রধান করে বোর্ড গঠন করল তৃণমূল, অপহরণের অভিযোগ বিরোধীদের
যদিও ওই ঘটনার পর মুখে কুলুপ এঁটেছে স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব । তবে জানা গিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানাতে চলেছেন শেখ শাহনাওয়াজ ও তার অনুগামীরা । এই অবস্থায় তাঁরা এই নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেন সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে । তবে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই সুফিয়ানকে নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল জেলা তৃণমূলের অন্দরে । এদিন এই ঘটনার পর আরও একবার শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে একুশের নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজেন্টের দায়িত্ব সামলানো শেখ সুফিয়ানের তখনকার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ৷
আরও পড়ুন: উপপ্রধান তালিকায় নাম নেই ! পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করতে দিল না তৃণমূলের প্রাক্তন প্রধান
তবে এই বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন নন্দীগ্রামে তৃণমূল কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক কুণাল ঘোষ । তিনি জানান, শেখ সুফিয়ান দলের পুরোন দিনের নেতা৷ তাঁর জামাই দায়িত্ব পেয়েছেন৷ স্থানীয় বিষয় অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়৷ অনেক সময় চেনাজানার কারণেও এরকমটা হয়ে যায়৷ তবে দল রিপোর্ট নিয়ে সবটা দেখছে । সবাই দলে ছিলেন, আছেন, থাকবেন । একমাত্র যাঁরা ভোটের আগে হারানোর চেষ্টা করেছেন, তাঁদের দলে নেওয়া হয়নি ।