সুতাহাটা , 24 জুলাই : এবার কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠল স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও স্কুলের কেরানির বিরুদ্ধে ৷ হলদিয়ার সুতাহাটা ব্লকের শিমুলবেড়্যা যোগেন্দ্র উচ্চ বিদ্যাপীঠের ঘটনা । অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক সমর সিংহ ও বিদ্যালয়ের কেরানি মিল্টন মণ্ডল রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন ৷ সেই টাকা ফেরতের দাবিতে গতকাল সকাল থেকে স্কুলের গেটে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী । এর জেরে গতকাল বন্ধ হয়ে যায় শিমুলবেড়্যা যোগেন্দ্র উচ্চ বিদ্যাপীঠের পঠন-পাঠন ।
বিদ্যালয় সূত্রে খবর, দীর্ঘদিন ধরে রাজ্য সরকারের প্রকল্প যেমন সবুজসাথী ও কন্যাশ্রী প্রকৃতি প্রকল্পের আবেদনপত্র পূরণ করার জন্য ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে তিরিশ টাকা করে নেওয়া হত ৷ যা সম্পূর্ণ বেআইনি । একাধিকবার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা এই নিয়ে অভিযোগ জানালেও এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ ৷ শেষ পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীরা ও অভিভাবকরা স্কুলের সার্কেল ইন্সপেক্টর কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ জানায় ৷ দিন পনেরো আগে শিমুলবেড়্যা যোগেন্দ্র উচ্চ বিদ্যাপীঠে যান সুতাহাটা উত্তর চক্রের পরিদর্শক অরিন্দম চাউলা ৷ তিনি স্কুলে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে যান প্রধান শিক্ষককে ৷ অভিযোগ, তারপরও তাঁর কথা কানে তোলেননি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ৷
এরপর গতকাল টাকা ফেরতের দাবিতে স্কুলের গেটে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে স্কুল পড়ুয়ারা । কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে বিক্ষোভ ৷ বিক্ষোভের জেরে স্কুলে ঢুকতে পারেননি শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীবৃন্দরা ৷ এক প্রকার বাধ্য হয়েই ফিরে যেতে হয় তাঁদের । প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ চলার পর ছাত্র-ছাত্রীরা তা প্রত্যাহার করে নেয় । এর জরে বন্ধ হয়ে যায় গতকালের পঠন-পাঠন । অভিযোগ, বিক্ষোভের আঁচ বুঝতে পেরেই গতকাল বিদ্যালয় যাননি সমরবাবু ও মিল্টন ।
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে সমর সিংহ বলেন, "স্কুলের কাজেই আমি গতকাল DI অফিসে এসেছি । স্কুলের কম্পিউটার না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ফরম ফিলাপ বাবদ এই টাকা নেওয়া হয়েছে । স্কুল পরিদর্শকের নির্দেশে সেই টাকা আমরা গতকালই ফেরত দিয়ে দিয়েছি । আমার বিরুদ্ধে কিছু সহকারি শিক্ষক একজোট হয়েছে চক্রান্ত করে ফাঁসানোর জন্যই ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে এই আন্দোলন করছেন ।"
অপরদিকে টাকা ফেরত পাওয়ার কথা মানতে নারাজ ছাত্রছাত্রীরা । তাদের অভিযোগ, এখনও পর্যন্ত ফেরত দেওয়া হয়নি সেই টাকা । স্কুলের ক্লাস টেনের ছাত্র শেখ জহিরুল বলে, "বারবার প্রধান শিক্ষকের কাছে টাকা ফেরতের জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম । তাই প্রধান শিক্ষক আমাদের স্কুল থেকে TC দেওয়ার এমন কী গ্রেপ্তারের হুমকি দেন । এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের অপমানজনক কথা বলেন । তাই আজ আমরা টাকা ফেরতের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছি । আমরা চাই স্কুল কর্তৃপক্ষ সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দিয়ে দিক ।
"
অপরদিকে স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা চৈতালি হালদার বলেন, "ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে এভাবে টাকা নেওয়া কোনওভাবেই উচিত হয়নি । প্রধান শিক্ষক টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেছেন বলে শুনেছি । ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে এভাবে টাকা নেওয়ার কারণে শিক্ষকদের প্রতি সমাজে খারাপ বার্তা যাচ্ছে। ইচ্ছা ছিল ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাড়িয়েই আন্দোলনে সামিল হওয়ার । আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই দ্রুততার সাথে ছাত্রছাত্রীদের টাকা ফেরত দেওয়া হোক ।"