হলদিয়া, 16 মে : ফের অচলাবস্থা তৈরি হল হলদিয়া বন্দরে । আজ সকাল থেকে বন্দরের জহর টাওয়ারের নিচে আন্দোলন শুরু করে INTTUC-এর মেরিন ক্রু-র সদস্যরা । যার জেরে বন্ধ হয়ে যায় বন্দরের স্বাভাবিক কাজকর্ম । ফলে বড় ক্ষতির মুখে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
আন্দোলনকারীদের দাবি :
- এক, কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বিনীত কুমারের অপসারণ
- দুই, 18 জন মেরিন ক্রু-র সদস্য যাদের নামে হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে একটি চার্জশিট জমা দিয়েছিলেন চেয়ারম্যান বিনীত কুমার, সেই চার্জশিট প্রত্যাহার করতে হবে ।
উল্লেখ্য, গতকাল হলদিয়া বন্দরের কোল ইয়ার্ডে ইলেক্ট্রো স্টিল কাস্টিং (ECL) সংস্থার কয়লা সারেঙ্গি উদ্যোগ নামে অপর একটি সংস্থা দশটি ট্রাকে বোঝাই করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে । অন্যদিকে রিপ্লে অ্যান্ড কম্পানি নামে একটি সংস্থা ECL-এর কয়লা গ্লোবাল এন্টারপ্রাইজ় নামে একটি সংস্থার ট্রাকে বোঝাই করেছিল । ঘটনাটি ECL-এর সুপারভাইজ়ার জানতে পেরে CISF-এর কাছে তাদের মাল চুরির অভিযোগ জানিয়েছিল । অভিযোগ পেয়ে CISF অভিযুক্ত তিন সংস্থার অপারেটর, ড্রাইভার মোট সহ তিনজনকে ঘটনাস্থান থেকে আটক করেছিল । CISF-এর অভিযোগের ভিত্তিতে হলদিয়া থানার পুলিশ ওই তিন ব্যক্তিকে আটক করেছিল । তাঁদের মুক্তির দাবিতে গতকাল দুপুর তিনটে থেকে বন্দরের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন । শেষে দীর্ঘ আলোচনার পর গতকাল রাতে স্বাভাবিক হয় বন্দরের কাজ ।
অন্যদিকে, গত মঙ্গলবার রাতে বন্দরে সারপ্রাইজ ভিজিটে এসেছিলেন কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বিনীত কুমার । তাঁর অভিযোগ, হাজিরা খাতায় মেরিন ক্রু সদস্যদের উপস্থিতির স্বাক্ষর থাকলেও অনেকেই তখনও পর্যন্ত কাজে যোগ দেননি । তিনি 18 জনের নামে একটি চার্জশিটও জমা দেন বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে । তারপর আন্দোলন শুরু করে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের মেরিন ক্রু-র সদস্যরা । যার জেরে ফের তৈরি হয় অচলাবস্থা । এনিয়ে দফায় দফায় কর্মী সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠক করে বন্দর কর্তৃপক্ষ । কিন্তু এখনও পর্যন্ত মেলেনি সমাধান সূত্র ।
কিন্তু কারা এই মেরিন ক্রু সদস্য ?
বন্দরের যে সকল কর্মীরা বার্থে জাহাজ টেনে ঢোকায় ও দড়ি দিয়ে জাহাজ বাঁধার কাজ করে তাদের মেরিন ক্রু সদস্য বলা হয় । মেরিন ক্রু-র সদস্যরা আন্দোলন শুরু করায় বন্দরে কোনও জাহাজ ঢুকতে ও বের হতে পারছে না । ফলে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বন্দরে। এর জেরে বড় ক্ষতির আশঙ্কা করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ ।
এপ্রসঙ্গে INTTUC নেতা তথা হলদিয়া পৌরসভার চেয়ারম্যান শ্যামল আদক জানিয়েছেন, তাঁদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বন্দরের স্থায়ী কর্মীদের শোকজ় না করেই বেআইনিভাবে চার্জশিট ধরিয়েছেন কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বিনীত কুমার । তাই কর্মীদের স্বার্থে এই আন্দোলনে তাঁরা নেমেছেন । যতক্ষণ না চার্জশিট বাতিল করা হবে ও চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা হবে তাঁদের আন্দোলন চলবে ।
অন্যদিকে BSM (ভারতীয় মজদুর সংঘ)-এর সম্পাদক প্রদীপ বিজলি বলেন, "আমরা কর্মীদের সব রকম স্বার্থরক্ষায় পাশে থাকলেও বন্দরকে অচল করে এই আন্দোলন কোনও ভাবেই সমর্থন করছি না । শাসক দলের একের পর এক আন্দোলনের জেরে হলদিয়া বন্দরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে ।"
এই প্রসঙ্গে হলদিয়া বন্দরের জেনেরাল ম্যানেজার (শিপিং) স্বপন সাহা রায় জানিয়েছেন, শ্রমিক সংগঠনের লাগাতার আন্দোলনের জেরে ইতিমধ্যেই প্রায় 5 কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে । বন্দরে ঢুকতে না পেরে জাহাজ অন্যত্র চলে যাচ্ছে । একের পর এক আন্দোলনের জেরে শিল্পপতিরা কাঁচামাল না পেয়ে সমস্যায় পড়েছেন । বারবার আন্দোলনকারী শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসলেও তাঁরা কোনও শর্ত মানতে নারাজ ।