নন্দীগ্রাম, 23 এপ্রিল : প্রায় 90 লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের হয় মামলা ৷ অভিযোগ ছিল, তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছেন ৷ সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিও-সহ ওই পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যদের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার হলেন অভিযুক্ত প্রধান ৷ তারপরই রাতভর এলাকায় তাণ্ডব চালায় প্রধান অনুগামী বাইক বাহিনী । এমনকি অভিযোগকারীদের বাড়িতে ইটবৃষ্টি, বোমাবাজির অভিযোগও ওঠে । ঘটনাটি ঘটেছে নন্দীগ্রাম 1 ব্লকের দাউদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ৷ দাউদপুরের প্রধান শামসুল ইসলামের গ্রেফতারের (Nandigram TMC Pradhan Arrested) পর এখন ঘাসফুলের হাতে ঘাসফুলই আক্রান্ত ।
রাজ্যের বিরোধী দলগুলি বারবার একশো দিনের কাজ-সহ একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে । আরও একধাপ এগিয়ে এবার দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ করলেন খোদ ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক ৷ দাউদপুর পঞ্চায়েত প্রধান শামসুল ইসলামের বিরুদ্ধে তিনি আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ করেন ৷ প্রধানের বিরুদ্ধে আগেই অভিযোগ এনেছেন ওই পঞ্চায়েতেরই আরও তিন তৃণমূল সদস্য আব্বাস বেগ, চন্দনা পন্ডা, নাজমা খাতুন ৷ বিডিওর অভিযোগের ভিত্তিতে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা শুরু করল নন্দীগ্রাম থানার পুলিশ ।
পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম 1 ব্লকের দাউদপুর গ্রাম পঞ্চায়েত ৷ এই পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের । জানুয়ারি মাসে এই প্রধানের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের তিনজন পঞ্চায়েত সদস্য । অভিযোগ, জলের সাবমার্সিবল পাম্প না বসিয়ে শুধুমাত্র কাজ সমাপ্তির বোর্ড লাগানো হয়েছে । শুধু তাই নয়, এলাকার সরকারি গাছ কেটে বিক্রি করে সেই টাকাও আত্মসাৎ করেছেন প্রধান বলে অভিযোগ ।
অভিযোগকারীদের কথায়, দলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়গুলি বারবার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি । তাই শেষ পর্যন্ত আইনের দ্বারস্থ হতে হয়েছে । অভিযোগকারীদের আবেদনের মান্যতা দিয়েই কলকাতা হাইকোর্ট জেলা প্রশাসনকে বিভাগীয় তদন্ত করার নির্দেশ দেয় ।
আরও জানা যাচ্ছে, হাইকোর্টের নির্দেশ মতো জেলা প্রশাসনের তরফে প্রধানকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল । প্রধান লিখিতভাবে তার উত্তর দিয়েছিলেন । ব্লক প্রশাসনের তরফে তদন্ত রিপোর্ট হলদিয়া মহকুমা শাসকের কাছে জমা দেওয়া হয় । হলদিয়া মহকুমা শাসকের নির্দেশে নন্দীগ্রামে 1 নম্বর ব্লকের বিডিও সুমিতা সেনগুপ্ত 6 এপ্রিল শামসুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন ৷ বিডিওর অভিযোগের পরই প্রধানের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে নন্দীগ্রাম থানা । জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, মামলা শুরু হওয়ার পরই নোটিস দেওয়া হয়েছে দাউদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানকে । কোনও উত্তর না পেয়ে অবশেষে শুক্রবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে ।
বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি প্রলয় পাল বলেন, "ওদের সম্বন্ধে যত কম বলা যায় ভাল । কারণ কাটমানি খেয়ে খেয়ে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে । ওরা তাই কাজ করার থেকে চুরি করতেই বেশি পটু । শুধু এই দাউদপুর পঞ্চায়েতে শামসুল ইসলাম কেন, বহু পঞ্চায়েতে কোটি কোটি টাকা চুরি হয়েছে । আর একটা করে শামসুল তৈরি হয়েছে । ভারতীয় জনতা পার্টি এই সব দুর্নীতির প্রতিবাদ করে এবং দাবি জানায় প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের ।"
পুলিশ জানায়, দাউদপুর গ্রামের প্রধানকে গ্রেফতারের পর যাতে এলাকায় অশান্তি না ছড়ায় তার জন্য তাঁকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷ শনিবার তাঁকে হলদিয়া মহাকুমা আদালতে তোলা হবে । তিন অভিযোগকারী আব্বাস, চন্দনা, নাজমা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ৷ তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে রয়েছে । এইদিন সকাল থেকেই রাস্তার উপর টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন প্রধানের অনুগামীরা ।
আরও পড়ুন : Nandiram TMC Protest : গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরে নন্দীগ্রামে বিক্ষোভের মুখে দোলা