চণ্ডীপুর, 22 মার্চ: চার দিন ধরে নিখোঁজ এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হল। অভিযোগ, প্রণয়ঘটিত টানাপোড়েনের জেরেই খুন করা হয়েছে যুবককে। মৃতের নাম সূর্যদীপ সাঁতরা (21)। বাড়ি চণ্ডীপুর থানার কালিকাখালি গ্রামে। গতকাল চণ্ডীপুর ব্লকের BDO অফিসের পিছনের নয়নজুলি থেকে উদ্ধার করা হয় সূর্যদীপের মৃতদেহ।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সূর্যদীপ সাঁতরার সঙ্গে বছর দেড়েক আগে পাশের গ্রাম সরীপুর এলাকার এক কিশোরীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অভিযোগ, মাস চারেক আগে চণ্ডীপুর থানায় কর্মরত গোপাল প্রধান নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ার ওই কিশোরীকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তারপর থেকে সূর্যদীপের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়। যদিও কিছু দিনের মধ্যে সম্পর্ক পুনরায় স্বাভাবিক হয়। অভিযোগ, কিশোরী ও সূর্যদীপের সম্পর্কে চিড় ধরাতে না পেরে দু'জনকেই ফোনে হুমকি দেওয়া শুরু করে গোপাল। এমন কী গোপাল দশ দিন আগে চণ্ডীপুর বাজারে সূর্যদীপকে সম্পর্ক থেকে না বেরিয়ে এলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় বলে অভিযোগ।
মৃতের পরিবারের তরফ জানা গেছে, 18তারিখ সন্ধ্যার সময় সূর্যদীপের ফোনে একটি ফোন আসে। এরপরই সাইকেল নিয়ে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। জানা গেছে, ওই দিন প্রেমিকার সঙ্গে দেখাও করেন। তারপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন। ফোনে বারবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি তাঁকে। এলাকা ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খোঁজ নেওয়ার পরে 19তারিখ সকালে পরিবারের তরফে চণ্ডীপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। এর আগেও সিভিক ভলান্টিয়ার গোপালের হুমকি কথা থানায় মৌখিক ভাবে জানিয়েছিল সূর্যদীপের পরিবারের লোকেরা। অভিযোগ, পুলিশ সেই সময় ব্যবস্থা নেয়নি। পরিজনরা বলছেন, সেদিন পুলিশ ব্যবস্থা নিলে সূর্যদীপকে প্রাণ হারাতে হত না।
চণ্ডীপুর থানায় কিশোরী ও তার বাবা প্রদীপ পাল, মা কাকলি পাল ও সিভিক ভলান্টিয়ার গোপাল প্রধানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ছেলেকে খুনের অভিযোগ জানিয়েছেন সূর্যদীপের বাবা দীপক সাঁতরা। অভিযোগের ভিত্তিতে চণ্ডীপুর থানার পুলিশ তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে।
সূর্যদীপের বাবা বলেন, "আমার ছেলের সঙ্গে ওই কিশোরীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। পরে কিশোরীকে সিভিক ভলান্টিয়ার গোপাল প্রধান প্রেমের প্রস্তাব দেয়। দু'জনের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি গোপাল। তাই গোপাল ও মেয়ের পরিবারের লোকজন ষড়যন্ত্র করে আমার ছেলেকে খুন করে প্রমাণ লোপাটের জন্য পুকুরে ফেলে দেয়। পুকুরে জল মারার কাজ হচ্ছিল সে সময়ই ছেলের মৃতদেহ ভেসে ওঠে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থানে গিয়ে মৃতদেহ চিহ্নিত করি। থানায় চারজনের নামে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছি। আমরা অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি চাই।"
চণ্ডীপুর থানার OC ইমরান মোল্লা বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে চারজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য তমলুক জেলা হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, মাসখানেক আগে ভূপতিনগরে ঠিক এইভাবে যুবককে খুন করার পর দেহ রাস্তায় ফেলে পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা চালিয়েছিল প্রেমিকা ও তার পরিবারের লোকেরা।