কলকাতা, 7 জানুয়ারি: প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ একাধিক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জগঠন কলকাতার বিশেষ সিবিআই আদালতে। সোমবার প্রথমে কালীঘাটের কাকু সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের (হাসপাতালে থাকাকালীন) বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বিচারক। এরপর প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে চার্জ গঠিত হয়।
বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক শুভেন্দু সাহা জানান, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁর তৈরি করা মেসার্স আনন্দ লিমিটেড কোম্পানি থেকে 27.90 কোটি টাকা এবং কয়েক কোটি টাকার গয়না উদ্ধার করে ইডি। একই কোম্পানির এনভেলাপ বাজেয়াপ্ত করা হয় অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায়ের বাড়ি থেকে। 5 লক্ষ টাকার এনভেলাপ উদ্ধার হয়েছে যা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর। এছাড়া তিনি 15 কোটি টাকা দিয়েছিলেন শ্রীমতী বাবলি চট্টোপাধ্যায়কে স্কুল তৈরির জন্য।
জামাই কল্যাণময় ভট্টাচার্যকে প্রচুর পরিমাণে টাকা দিয়েছিলেন, নকল ডিরেক্টর তৈরি করেছিলেন। মেসার্স ইচ্ছে এন্টারটেইনমেন্ট নামে কোম্পানি তৈরি করা হয়েছিল এই বিপুল পরিমাণ আর্থিক তছরূপ করার জন্য। পার্থ ও অর্পিতার যৌথ নাম রয়েছে। রাজীব দে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ফার্ম ব্যবহার করেছেন নির্দেশে। নিজের জামাই কল্যাণময় ভট্টাচার্যকে ডিরেক্টর তৈরি করেন। সেই জন্য পিএমএলএ অ্যাক্টের সেকশন 5 এর আওতায়, পিএমএলএ অ্যাক্টের সেকশন 3 এর আওতায় তথ্য প্রমাণ লোপাট, পিএমএলএ অ্যাক্টের সেকশন 4 এর আওতায় পার্থের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে।
যদিও পার্থ চট্টোপাধ্যায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে এজলাসে বলেন, "এটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক অভিযোগ। তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ। তিনি সেটা আদালতেই প্রমাণ করবেন।" প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে প্রাইমারি বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসেবে কয়েক কোটি টাকার তছরূপের অভিযোগ এই মামলায়। তিনি এই মামলায় অন্যান্য অভিযুক্তদের সঙ্গে মিলিতভাবে এই তছরুপ করেছেন। তাপস কুমার মণ্ডলের সহায়তায় তিনি দুর্নীতি চক্র চালিয়েছেন। 2014 সালের টেট পরিক্ষায় 325 জন চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চাকরি দিয়েছেন।
বিএলএড কলেজের নামে পুত্র সৌভিক ভট্টাচার্যের সহায়তায় বেআইনিভাবে টাকা নিয়েছেন। তিনি এবং তাঁর ছেলে এবং স্ত্রী অন্যান্য পরিবারবর্গের সঙ্গে বেশ কয়েকটি জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। যেখানে মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বিশাল পরিমাণে টাকা দিয়েছেন।
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি বিপুল পরিমাণ টাকা তাপস কুমার মণ্ডল, কুন্তল ঘোষকে দিয়েছিলেন যাতে চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ করানো হয়। তিনি বেনামে বেশ কিছু সম্পত্তি কিনেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে যে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে তা পিএমএলএ অ্যাক্টের সেকশন 3 এর আওতায় পড়ে। তাঁর বিরুদ্ধে সেকশন 4-এর আওতায় চার্জ গঠন হয়েছে ।
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়া এবং পুরনিয়োগ দুর্নীতির মাথা অয়ন শীলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি 1 হাজারের বেশি প্রার্থীকে বেআইনিভাবে চাকরি পাইয়ে দিতে সাহায্য করেছেন। বেআইনিভাবে স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তি তৈরি করেছেন। পিএমএলএ অ্যাক্টের 3 ধারার আওতায় পাওয়া প্রমাণের ভিত্তিতে পিএমএলএ অ্যাক্টের 4 ধারা অনুযায়ী চার্জ গঠন করা হয়েছে।
সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি অয়ন শীলের সঙ্গে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার বিষয়ে জড়িত ছিলেন। তিনি কুন্তল ঘোষের আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে বিপুল অংকের টাকা ট্রান্সফার করেছেন আবার কুন্তল ঘোষ সেইরকম বড় অঙ্কের টাকা পাঠিয়েছেন। পিএমএলএ অ্যাক্টের 3 নম্বর ধারার আওতায় তাঁর বিরুদ্ধে পাওয়া তথ্য প্রমাণ অনুযায়ী পিএমএলএ অ্যাক্টের সেকশন 4 অনুযায়ী চার্জ গঠন হয়েছে।