কাঁথি, 9 নভেম্বর: দিলীপ ও শুভেন্দুকে একহাত নিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) ৷ এদিন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথির (Contai) মুকুন্দপুর বাজারে কুণাল চা-চক্রে যোগ দেন তিনি । সেখানে উপস্থিত ছিলেন কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক তরুণ জানা, পৌরসভার উপ-পৌরপ্রধান সুপ্রকাশ গিরি-সহ অন্যান্য নেতৃত্বরা । চা-চক্রে এসে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে বিভিন্ন আলাপ আলোচনা করেন কুণাল ।
তারপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি শুভেন্দু অধিকারীকে (Suvendu Adhikari) কড়া আক্রমণ করেন ৷ দু'দিন আগে পটাশপুরের একটি সভা থেকে শুভেন্দু বলেন, "তৃণমূলের বক্তব্যের 80 শতাংশ আমাকে নিয়ে রাখা হয় । এমনকী তারা আমার পরিবার এবং ভাইকে নিয়ে কুরুচিকর বক্তব্য রাখতে ব্যস্ত থাকেন ।" এরই পরিপ্রেক্ষিতে এদিন কুণাল ঘোষ বলেন, "শুভেন্দু অধিকারী বড় নেতা বা তাঁকে হাইলাইটস করার জন্য কেউ তাঁর কথা বলে না । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) সময়ে 80 ভাগ পদ নিয়ে তিনি যে বেইমানি-গাদ্দারি করেছেন, সেই কথা তুলে ধরার জন্য তাঁর সম্পর্কে বলা হয় । এটা তাঁকে বড় নেতা হিসেবে কেউ ভেবে বলে না ।"
আর তৃণমূলের চা-চক্র দিলীপদের অনুকরণ করে করা হচ্ছে কি না, এই প্রশ্নের জবাবে কুণাল বলেন, "একদমই নয় ৷ দিলীপবাবুদের হাফ প্যান্ট পরে ছোটবেলা থেকে আরএসএস নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর অভ্যাস ৷ আমরা বরং ছোটবেলা থেকে পাড়ার চায়ের দোকানে আড্ডা দিয়েছি । আমার পাড়ায় নারুদার চায়ের দোকানে আমি আড্ডা দিই । এখানে আছি, তাই এখানে ও আড্ডা দিচ্ছি ।"
বিজেপির গাড়ির সামনে এলে মায়ের কোল খালি হবে । দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) এই হুঁশিয়ারির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, "আমি দিলীপ ঘোষদের বলি, এটা ওদের কালচার । যখন উত্তরপ্রদেশে ও দিল্লিতে কৃষকরা ধরনা দিচ্ছিলেন, তখন বিজেপি মন্ত্রীর ছেলে তাদের উপর গাড়ি তুলে দিয়ে পিষে মেরে দিলেন ৷ তাই এটা ওদের কালচার । তবে হ্যাঁ, দিলীপবাবুকে নিয়ে কোনও চিন্তা নেই । এটা বাংলা, দিলীপবাবুর গাড়ি একবার এগোলে ব্রেক ফেল করবে ।"
ডানকুনিতে কাঞ্চন মল্লিকের নামে নিরুদ্দেশ পোস্টার পড়েছে ৷ এই প্রসঙ্গে কুণাল বলেন, "আমি তো এখন জেলার যেখানে যাচ্ছি, শুনছি এলাকার সাংসদ নিরুদ্দেশ । তাকে কোথাও দেখা যায় না । আমি হলদিয়া গেলেও শুনছি সাংসদ নিরুদ্দেশ । এখানে তো এসেছি তরুণবাবুদের সঙ্গে লোকজন দেখা যায়, জোড়া সাংসদদের সঙ্গে লোকজন দেখা যায় না । জোড়া সাংসদ নিরুদ্দেশ, এতো ভয়ঙ্কর ব্যাপার । অতএব কে কোথায় পোস্টার দিচ্ছে সে ভেবে লাভ কী । নন্দীগ্রামে 34 জন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে চেয়েছিল । তাদের মধ্যে 33 জন তৃণমূলে যোগ দিয়েছে । আর একজনকে বুঝিয়ে বাজিয়ে পায়ে হাতে ধরে রেখেছে । তাহলে স্কোর কত দাঁড়ালো !! 33/1। আমি বিজেপি নেতাদের বলছি আপনারা যারা যারা শুভেন্দুর কাছে বিক্ষোভে দেখা করতে চান । আপনাদের অভিযোগ জানাতে চাইলে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন না । এমনকী দেখা করছে না শুভেন্দু অধিকারী । তারা একবার এসে আমাকে ছুঁয়ে চলে যান । তাহলে দেখবেন আপনাকে পায়ে ধরে, জুতো পালিশ করছে কোলে বসিয়ে রাখবে শুভেন্দু ।"
কুণাল ঘোষ আগে কখনও রাজনীতি করতেন না ৷ দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, "আপনি যখন হাফপ্যান্ট পরে আরএসএস করতেন তখন বিজেপি করতেন না । 1987-88 সালে যখন বামফ্রন্টের পুলিশের গুলিতে ছাত্র পরিষদের নেতাদের মৃত্যু হয় ৷ তখন লালবাজারে ঢুকে যে বিক্ষোভ হয়েছিল, সেখানে কুণাল ঘোষ নেতৃত্ব দিয়েছিল । অতএব দিলীপ ঘোষকে আমি অনুরোধ করছি এই ফুল প্যান্ট পড়ে রাজনীতির সময়ে হাফপ্যান্ট পড়ে রাজনীতি করার ইতিহাসটা একটু পড়ে নিলে ভালো হয় ।"
আরও পড়ুন: 'মায়ের কোল খালি হয়ে যাবে', কেশিয়াড়িতে ফের বিতর্কে দিলীপ ঘোষ !
বেশি করে মদের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে রাজ্যের আর্থিক সংকট মেটানোর জন্য । দিলীপ ঘোষ কটাক্ষ করে একথা বলেন ৷ তাঁর এই মন্তব্যের পালটা দিলেন কুণাল ৷ তিনি বলেন, "দেখুন যতক্ষণ না দেশে এই লাইসেন্স দেওয়া নিষিদ্ধ করা হচ্ছে, ততক্ষণ কেউ যদি আইনসম্মতভাবে আবেদন করেন, সেটাকে আটকানোর কোন সরকারের ক্ষমতা নেই ।"