দিঘা, 8 ডিসেম্বর : মাস চারেক আগে প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে দিঘা গেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সে সময় দিঘা বিজ্ঞান কেন্দ্রের সামনে একটি চায়ের দোকানে নিজে হাতে সেদিন চা বানিয়েছিলেন তিনি ৷ নেত্রীর হাতে চা খেয়ে আপ্লুত হয়েছিলেন সাংসদ শিশির অধিকারি, মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারি, মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ৷ সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল সোশাল মিডিয়ায় ৷ রাতারাতি এলাকার পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন চা বিক্রেতা পরিমল জানা ৷ কিন্তু আজ সেই পরিমলবাবুর গলায় আক্ষেপ, "দিদি দোকানে চা খেয়ে গেলেন, কিন্তু আমার জন্য কিছু করলেন না ৷ এটা দুঃখের বিষয় ৷ "
ডিসেম্বরের 10 তারিখ থেকে দিঘায় শুরু হচ্ছে শিল্প সম্মেলন ৷ সম্মেলন শুরুর আগে গত মাসে জেলা প্রশাসনের তরফে চালানো হয় উচ্ছেদ অভিযান ৷ প্রশাসনের নির্দেশ মেনে নিজের দোকানের কিছুটা অংশ ভেঙে ফেলতে বাধ্য হন পরিমলবাবু ৷ আর বাকি অংশটুকু রাস্তা থেকে কয়েক ফুট পেছনের দিকে সরিয়ে নেন ।
পরিমলবাবু বলেন, "আমার দোকানে দিদি আগে এসেছিলেন ৷ চা খেয়েছিলেন ৷ আমার আশা ছিল যে হয়তো দিদি আমার জন্য কিছু ব্যবস্থা করবেন ৷ আমি বলেছিলাম দোকানের জন্য কিছু ব্যবস্থা করুন ৷ উনি বলেছিলেন দেখবেন ৷ কয়েকদিন আগে প্রশাসনের তরফে আমার দোকানটা ভেঙে দেওয়া হয়েছে ৷ এখন আমার করে খাওয়ার মত কিছু নেই ৷ এই দোকানই আমার রুজি-সম্বল ৷ দিদি যদি আমার জন্য কিছু ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে আমি এখানে বসে রোজগার করতে পারতাম ৷ এটা দিদির কাছে আমার অনুরোধ ৷ " তিনি আরও জানান, এখন তাঁকে নিয়ে অনেকেই হাসি ঠাট্টা করেন ৷ বলেন, দিদি তাঁর দোকানে চা খেয়েছিলেন তাই তাঁর এ অবস্থা ৷ অনেকে আবার প্রশ্ন করে, দিদি চা খেলেন কিন্তু কী দিলেন ৷ তাই পরিমলবাবুর অনুরোধ, "দিদি যেন আমার অন্নের ব্যবস্থা করে দেন ৷ দোকানটা যেন থাকে ৷ "
দোকানের ভিতরে এখনও জ্বলজ্বল করছে মুখ্যমন্ত্রীর চা বানানোর নানা মুহূর্তের ছবি ৷ রাতারাতি শিরোনামে উঠে আসা সেই দোকান এখন উচ্ছেদের তালিকায় ৷ পরিমলবাবু বলেন, "এ ভাবে উচ্ছেদ অভিযানের শিকার হতে হবে ভাবতে পারিনি । পুনর্বাসন পাইনি । "
পরিমলবাবুর বড় মেয়ে ক্লাস টেনের ও ছোট মেয়ে ক্লাস এইটের ছাত্রী । তিনি এবং তাঁর স্ত্রী দু'জনে চা বানিয়ে কোনও রকমে সংসার চালান ৷ দোকানই তাঁদের উপার্জনের একমাত্র সম্বল ৷ উচ্ছেদ অভিযানের পর পুনর্বাসনের জন্য 'দিদিকে বলো'-তে একাধিকবার ফোন করেছিলেন পরিমলবাবু ৷ কিন্তু শুধুই আশ্বাস মিলেছে ।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, "দেশ-বিদেশের অতিথিরা যাতে কোনও অসুবিধায় না পড়েন তার জন্য দিঘার ফুটপাতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় ৷ বিধি মেনেই প্রশাসনের তরফে চালানো হয়েছে উচ্ছেদ অভিযান ৷ " জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, যে সব অস্থায়ী দোকানদারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যাপারটি দিঘা- শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদ দেখছে ৷