ETV Bharat / state

মন্দা হোটেল ব্যবসায়, গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে প্রশাসনের কাছে স্যানিটাইজ়েশনের দাবি - হোটেল ব্যবস্যায় কোরোনার প্রভাব

পূর্ব মেদিনীপুরে জাতীয় কিংবা রাজ্য সড়কের উপর দিয়ে গেলেই দু'ধারে চোখে পড়বে সারি-সারি খাবার দোকান। একসময় সেখানে প্রবেশ করলেই দেখা যেত গ্রাহকদের ভিড়। তবে কোরোনা আতঙ্কে গ্রাহকের অভাবে এখন সেইসব হোটেলেই মাছি তাড়াচ্ছেন দোকানিরা। তাই গ্রাহকদের আস্তা ফেরাতে সরকারের কাছে হোটেলগুলি জীবাণুমুক্ত করতে আবেদন জানালেন হোটেল ব্যবসায়ীরা।

lockdown effect
lockdown effect
author img

By

Published : Jun 27, 2020, 4:09 PM IST

তমলুক, 27 জুন : পূর্ব মেদিনীপুরে অবস্থিত বাঙালির প্রিয় পর্যটন কেন্দ্র দিঘা, মন্দারমণি। ফলে, প্রতিদিনই রাজ্য ও ভিন রাজ্য থেকে বহু পর্যটক আসেন এই জেলায়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপর দিয়ে গিয়েছে 6, 41, 116 বি জাতীয় সড়কসহ একাধিক রাজ্যসড়ক। পর্যটক ও লরি চালকদের খাওয়া দাওয়ার জন্য এই সড়কগুলির দু'-ধার দিয়ে গজিয়ে উঠেছে হাজার হাজার ছোটো-বড় হোটেল। জাতীয় সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় লরির চালক, খালাসি কিংবা পর্যটকদের খাওয়া-দাওয়ার জন্য একমাত্র ভরসা এই হোটেলগুলিই। তবে যে দোকানগুলিতে একসময় তিল ধারণের জায়গা থাকত না, লকডাউন ও কোরোনা আতঙ্কে এখন সেখানে মাছি তাড়াচ্ছেন দোকানিরা।

লকডাউনের জেরে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল পর্যটন কেন্দ্রগুলি। জাতীয় বা রাজ্য সড়কে কমেছিল লরি ও অন্যান্য গাড়ির যাতায়াত। পরে আনলক-ওয়ানে ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিল হলেও আগের মতো রাস্তায় দেখা মিলছে না যানবাহনের। এমনকী কোরোনা আতঙ্কে দিঘা-মন্দারমণিমুখী হচ্ছেন না পর্যটকরা। আর যাঁরা কাজের তাগিদে রাস্তায় বেরোচ্ছেন তাঁরাও কোরোনা সংক্রমণের ভয়ে ইচ্ছে থাকলেও বাইরের খাবার থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন। হোটেলের স্পাইসি খাবারের লোভ সংবরণ করে প্রাণে বাঁচতে আস্থা রাখছেন বাড়ি থেকে আনা খাবারের উপরেই। ফলে দিনদিন রকমারি খাবারের পসরা সাজিয়েও দিনের শেষে তা ফেলে দিতে হচ্ছে হোটেল ব্যবসায়ীদের। সেই ক্ষতিপূরণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই কর্মী সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন অনেক হোটেল মালিক। তাঁদের দাবি, সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মানলেও কোরোনা আতঙ্কের জেরে হোটেলমুখো হচ্ছেন না গ্রাহকরা। আর তাই গ্রাহকদের হোটেলের প্রতি আস্থা ফেরাতে সরকারি উদ্যোগে হোটেলগুলিকে স্যানিটাইজ় করার দাবি জানিয়েছেন হোটেল ব্যবসায়ীরা। গ্রাহকরা হোটেলমুখী হলেই ব্যবসা ফের জমে উঠবে বলে আশা তাঁদের । আর তা না হলে ক্ষতির অঙ্ক যেভাবে বাড়ছে তাতে কতদিন এভাবে হোটেল চালানো সম্ভব হবে তা নিয়ে দিশেহারা রাস্তার ধারে গড়ে ওঠা ছোটো বড় হোটেল ও ধাবার মালিকেরা।

লকডাউনে তিন মাস ধাবা বন্ধ রাখার পর পেটের তাগিদেই ফের হোটেল খুলেছেন মেচোগ্রামের বাসিন্দা উত্তম কুমার সিংহ। রোডে স্বল্পসংখ্যক গাড়ি চলা ও আতঙ্কের জেরে খদ্দের না আসায় ব্যাপক সংকটের সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, "আগে সারাদিন ব্যবসা করে চার থেকে পাঁচশো টাকা লাভ হত। কিন্তু এখন যা খাবার বানাই খদ্দেরের অভাবে তার অধিকাংশই ফেলে দিতে হচ্ছে। লাভের চেয়ে ক্ষতিই হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। সরকার যদি কোনও সহযোগিতা না করে তাহলে আর এভাবে ব্যবসা চালাতে পারব না। ভবিষ্যতে কী হবে বুঝে উঠতে পারছি না।"

lockdown effect
হোটেলে খাবার খাচ্ছেন গ্রাহকরা

ওই ধাবার এক গ্রাহক, পেশায় ট্রাক চালক সুশান্ত কর্মকার বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা নিশ্চিন্তে খাওয়া-দাওয়া করতে পারছি না। ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আমরাও যেমন সমস্যায় পড়ব, ঠিক তেমনি হোটেল ব্যবসায়ীরাও সমস্যায় পড়বেন। "

কোলাঘাট ব্লকের 6 নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে থাকা প্রতিষ্ঠিত একটি হোটেল মালিক শ্রীকান্ত দাস জানান, "আমরা সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মী সংখ্যা কমিয়ে হোটেল খুলেছি। প্রতিদিনই গ্রাহকদের জন্য খাবার তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারছি না। সংক্রমণের ভয়ে এক-তৃতীয়াংশ খদ্দেরও আসছেন না। প্রতিদিন গড়ে প্রায় 20,000 টাকার খাবার ফেলে দিতে হচ্ছে। কতদিন সমস্ত কর্মীকে নিয়ে এভাবে হোটেল চালাতে পারব বুঝে উঠতে পারছি না। সরকারি উদ্যোগে যদি হোটেলগুলিকে প্রতিনিয়ত স্যানিটাইজ় করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে হয়ত গ্রাহকরা হোটেলের দিকে পা বাড়াবেন। আর তা না হলে দিনের পর দিন আমাদের ব্যবসায় ক্ষতি হতেই থাকবে।"

"জেলার হোটেলগুলিকে ফের পুনরুজ্জীবিত করতে সরকারি উদ্যোগে জীবাণুমুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে", বলে জানিয়েছেন কোলাঘাট পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি রাজকুমার কুন্ডু। তিনি জানিয়েছেন, "ইতিমধ্যেই ব্যবসায়ীদের তরফে আবেদন পাওয়ার পর BDO ও পঞ্চায়েত সমিতির স্তরে একপ্রস্থ আলোচনা হয়েছে। আমরা জানি বর্তমান পরিস্থিতির কারণে হোটেল ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সেই ক্ষতির মুখ থেকে ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে আমরা জেলা দমকল বিভাগের সঙ্গে কথা বলে হোটেলগুলি স্যানিটাইজ় করার চেষ্টা করব। সরকারি উদ্যোগে এই কাজ করা হলে মানুষের আস্থা হোটেলগুলির প্রতি আরও বাড়বে এবং হোটেল ব্যবসা ছন্দে ফিরবে।

তমলুক, 27 জুন : পূর্ব মেদিনীপুরে অবস্থিত বাঙালির প্রিয় পর্যটন কেন্দ্র দিঘা, মন্দারমণি। ফলে, প্রতিদিনই রাজ্য ও ভিন রাজ্য থেকে বহু পর্যটক আসেন এই জেলায়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপর দিয়ে গিয়েছে 6, 41, 116 বি জাতীয় সড়কসহ একাধিক রাজ্যসড়ক। পর্যটক ও লরি চালকদের খাওয়া দাওয়ার জন্য এই সড়কগুলির দু'-ধার দিয়ে গজিয়ে উঠেছে হাজার হাজার ছোটো-বড় হোটেল। জাতীয় সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় লরির চালক, খালাসি কিংবা পর্যটকদের খাওয়া-দাওয়ার জন্য একমাত্র ভরসা এই হোটেলগুলিই। তবে যে দোকানগুলিতে একসময় তিল ধারণের জায়গা থাকত না, লকডাউন ও কোরোনা আতঙ্কে এখন সেখানে মাছি তাড়াচ্ছেন দোকানিরা।

লকডাউনের জেরে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল পর্যটন কেন্দ্রগুলি। জাতীয় বা রাজ্য সড়কে কমেছিল লরি ও অন্যান্য গাড়ির যাতায়াত। পরে আনলক-ওয়ানে ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিল হলেও আগের মতো রাস্তায় দেখা মিলছে না যানবাহনের। এমনকী কোরোনা আতঙ্কে দিঘা-মন্দারমণিমুখী হচ্ছেন না পর্যটকরা। আর যাঁরা কাজের তাগিদে রাস্তায় বেরোচ্ছেন তাঁরাও কোরোনা সংক্রমণের ভয়ে ইচ্ছে থাকলেও বাইরের খাবার থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন। হোটেলের স্পাইসি খাবারের লোভ সংবরণ করে প্রাণে বাঁচতে আস্থা রাখছেন বাড়ি থেকে আনা খাবারের উপরেই। ফলে দিনদিন রকমারি খাবারের পসরা সাজিয়েও দিনের শেষে তা ফেলে দিতে হচ্ছে হোটেল ব্যবসায়ীদের। সেই ক্ষতিপূরণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই কর্মী সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন অনেক হোটেল মালিক। তাঁদের দাবি, সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মানলেও কোরোনা আতঙ্কের জেরে হোটেলমুখো হচ্ছেন না গ্রাহকরা। আর তাই গ্রাহকদের হোটেলের প্রতি আস্থা ফেরাতে সরকারি উদ্যোগে হোটেলগুলিকে স্যানিটাইজ় করার দাবি জানিয়েছেন হোটেল ব্যবসায়ীরা। গ্রাহকরা হোটেলমুখী হলেই ব্যবসা ফের জমে উঠবে বলে আশা তাঁদের । আর তা না হলে ক্ষতির অঙ্ক যেভাবে বাড়ছে তাতে কতদিন এভাবে হোটেল চালানো সম্ভব হবে তা নিয়ে দিশেহারা রাস্তার ধারে গড়ে ওঠা ছোটো বড় হোটেল ও ধাবার মালিকেরা।

লকডাউনে তিন মাস ধাবা বন্ধ রাখার পর পেটের তাগিদেই ফের হোটেল খুলেছেন মেচোগ্রামের বাসিন্দা উত্তম কুমার সিংহ। রোডে স্বল্পসংখ্যক গাড়ি চলা ও আতঙ্কের জেরে খদ্দের না আসায় ব্যাপক সংকটের সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, "আগে সারাদিন ব্যবসা করে চার থেকে পাঁচশো টাকা লাভ হত। কিন্তু এখন যা খাবার বানাই খদ্দেরের অভাবে তার অধিকাংশই ফেলে দিতে হচ্ছে। লাভের চেয়ে ক্ষতিই হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। সরকার যদি কোনও সহযোগিতা না করে তাহলে আর এভাবে ব্যবসা চালাতে পারব না। ভবিষ্যতে কী হবে বুঝে উঠতে পারছি না।"

lockdown effect
হোটেলে খাবার খাচ্ছেন গ্রাহকরা

ওই ধাবার এক গ্রাহক, পেশায় ট্রাক চালক সুশান্ত কর্মকার বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা নিশ্চিন্তে খাওয়া-দাওয়া করতে পারছি না। ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আমরাও যেমন সমস্যায় পড়ব, ঠিক তেমনি হোটেল ব্যবসায়ীরাও সমস্যায় পড়বেন। "

কোলাঘাট ব্লকের 6 নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে থাকা প্রতিষ্ঠিত একটি হোটেল মালিক শ্রীকান্ত দাস জানান, "আমরা সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মী সংখ্যা কমিয়ে হোটেল খুলেছি। প্রতিদিনই গ্রাহকদের জন্য খাবার তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারছি না। সংক্রমণের ভয়ে এক-তৃতীয়াংশ খদ্দেরও আসছেন না। প্রতিদিন গড়ে প্রায় 20,000 টাকার খাবার ফেলে দিতে হচ্ছে। কতদিন সমস্ত কর্মীকে নিয়ে এভাবে হোটেল চালাতে পারব বুঝে উঠতে পারছি না। সরকারি উদ্যোগে যদি হোটেলগুলিকে প্রতিনিয়ত স্যানিটাইজ় করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে হয়ত গ্রাহকরা হোটেলের দিকে পা বাড়াবেন। আর তা না হলে দিনের পর দিন আমাদের ব্যবসায় ক্ষতি হতেই থাকবে।"

"জেলার হোটেলগুলিকে ফের পুনরুজ্জীবিত করতে সরকারি উদ্যোগে জীবাণুমুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে", বলে জানিয়েছেন কোলাঘাট পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি রাজকুমার কুন্ডু। তিনি জানিয়েছেন, "ইতিমধ্যেই ব্যবসায়ীদের তরফে আবেদন পাওয়ার পর BDO ও পঞ্চায়েত সমিতির স্তরে একপ্রস্থ আলোচনা হয়েছে। আমরা জানি বর্তমান পরিস্থিতির কারণে হোটেল ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সেই ক্ষতির মুখ থেকে ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে আমরা জেলা দমকল বিভাগের সঙ্গে কথা বলে হোটেলগুলি স্যানিটাইজ় করার চেষ্টা করব। সরকারি উদ্যোগে এই কাজ করা হলে মানুষের আস্থা হোটেলগুলির প্রতি আরও বাড়বে এবং হোটেল ব্যবসা ছন্দে ফিরবে।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.