ETV Bharat / state

বাঁচালেন আহত প্রবীণকে, বসা হল না চাকরির পরীক্ষায়

author img

By

Published : Jan 21, 2020, 1:37 PM IST

Updated : Jan 22, 2020, 9:18 AM IST

কাঁথির শ্রীরামপুরের অলিদ আলি । পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে এক দুর্ঘটনাগ্রস্তকে বাঁচাতে গিয়ে বসতে পারলেন না কলেজ সার্ভিস কমিশনে ।

ছবি
ছবি

মেচেদা, 21 জানুয়ারি : প্রস্তুতি অনেকদিনের । দৃঢ়প্রতিজ্ঞ চোখে স্বপ্নপূরণের ইচ্ছা । পাশ করতে হবে কলেজ সার্ভিস কমিশন( WBCSC) । অতিথি শিক্ষকের পরিচয় সরিয়ে চাকরিটা পাকাপোক্ত করতে হবে । সেইমতো সকাল সকাল পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে রওনা দিয়েছিলেন কাঁথির শ্রীরামপুরের অলিদ আলি । কিন্তু যাওয়ার পথে এক আহত প্রবীণকে বাঁচাতে গিয়ে আর বসা হল না পরীক্ষায় । এতদিনের প্রস্তুতিতে পরীক্ষা না দেওয়ার ব্যর্থতা হয়তো থেকে গেল । তবে মানবিকতার সাফল্য সেই ব্যর্থতাকে ম্লান করে দিয়েছে ।

উলুবেড়িয়ার আলামিন মিশন স্কুলের প্রাণিবিদ্যার অতিথি শিক্ষক শেখ অলিদ আলি । পরীক্ষা ছিল রবিবার । আগে থেকেই নিয়েছিলেন মানসিক প্রস্তুতি । পরিকল্সপনা মতো সকালে উঠে সময়মতো বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন অলিদ । সিট পড়েছিল পাঁশকুড়ার বনমালী কলেজে । পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কাঁথি থেকে রওনা দিয়েছিলেন কলকাতাগামী বাসে । সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ মেচেদা-হলদিয়া 41 নম্বর জাতীয় সড়কের আন্ডারপাসের কাছে বাস থেকে নামেন তিনি । পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে এগোচ্ছেন । এমন সময় দেখেন, রাস্তার ধারে এক প্রবীণ পড়ে রয়েছেন । হাঁটু, মুখে অল্পবিস্তর চোট । ছেঁড়া লুঙ্গিতে কয়েক ফোঁটা রক্ত । বাইকে যাওয়ার সময় কারা যেন ধাক্কা মেরে গেছে । আর ফিরেও তাকায়নি । আহত শেখ নুরজামান তখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন । ওঠার সামর্থ্য নেই । যদি কেউ একটু তাকায় । সাহায্যের হাত বাড়ায় । ব্যস্ত পথচারীরা পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে । ঘটনাটি নজরে আসে অলিদের । এক মুহূর্তে কোথাও যেন এতদিনের প্রস্তুতি, পরীক্ষা সবকিছু ভুলে যান তিনি । বিবেকের কাছে প্রশ্নোত্তরে ক্লান্ত অলিদ প্রথমটা ইতস্তত বোধ করলেও শেষমেশ প্রবীণকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন । কিন্তু তখনও মনে অন্তর্দ্বন্দ্ব । হাতে সময় আছে । যদি প্রবীণের কোনওরকম একটা বন্দোবস্ত করে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছানো যায় । তাই 100 ডায়াল করেন । কিন্তু পুলিশের তরফেও কোনও সাড়া মেলেনি । আর সাত-পাঁচ না ভেবে এবার সিদ্ধান্ত নেন অলিদ । প্রবীণকে কোলে তুলে প্রায় হাফ কিলোমিটার পথ হেঁটে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভরতি করেন । এতক্ষণ যাঁরা নির্বিকার হয়ে দেখছিলেন, তাঁরা যথারীতি সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করেন । ইতিমধ্যে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরালও হয়েছে সেই ছবি ।

কিন্তু পরীক্ষা ? আহতকে হাসপাতালে ভরতি করার পর মাথায় আসে পরীক্ষার কথা । তড়িঘড়ি মেচেদা স্টেশনে ট্রেন ধরে কলেজে এসে পৌঁছান অলিদ । ঘড়ির কাঁটায় তখন 10টা । ততক্ষণে প্রায় আধঘণ্টা হয়ে গেছে পরীক্ষা । তাই কলেজ কর্তৃপক্ষ আর পরীক্ষায় বসতে দেয়নি অলিদকে । কলেজের নিরাপত্তারক্ষীদের বারবার পরিস্থিতির কথা বুঝিয়েও কোনও লাভ হয়নি । শেষমেশ 10টা 45 মিনিট নাগাদ পরীক্ষা না দিয়েই বাড়ি ফিরতে হয় তাঁকে । অলিদের কথায়, "পরীক্ষা দিতে না পারায় মন খারাপ হয়েছিল । তাই ফোন করে নুরজামানকে দেখতে তাঁর বাড়ি যাই । এখন তিনি সুস্থ । খুব ভালো লাগছে । জীবনে অনেক পরীক্ষা দিয়েছি ৷ আবার সুযোগ পাব । আশা করি, তাতে সাফল্য নিশ্চিত আসবে ।"

মেচেদা, 21 জানুয়ারি : প্রস্তুতি অনেকদিনের । দৃঢ়প্রতিজ্ঞ চোখে স্বপ্নপূরণের ইচ্ছা । পাশ করতে হবে কলেজ সার্ভিস কমিশন( WBCSC) । অতিথি শিক্ষকের পরিচয় সরিয়ে চাকরিটা পাকাপোক্ত করতে হবে । সেইমতো সকাল সকাল পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে রওনা দিয়েছিলেন কাঁথির শ্রীরামপুরের অলিদ আলি । কিন্তু যাওয়ার পথে এক আহত প্রবীণকে বাঁচাতে গিয়ে আর বসা হল না পরীক্ষায় । এতদিনের প্রস্তুতিতে পরীক্ষা না দেওয়ার ব্যর্থতা হয়তো থেকে গেল । তবে মানবিকতার সাফল্য সেই ব্যর্থতাকে ম্লান করে দিয়েছে ।

উলুবেড়িয়ার আলামিন মিশন স্কুলের প্রাণিবিদ্যার অতিথি শিক্ষক শেখ অলিদ আলি । পরীক্ষা ছিল রবিবার । আগে থেকেই নিয়েছিলেন মানসিক প্রস্তুতি । পরিকল্সপনা মতো সকালে উঠে সময়মতো বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন অলিদ । সিট পড়েছিল পাঁশকুড়ার বনমালী কলেজে । পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কাঁথি থেকে রওনা দিয়েছিলেন কলকাতাগামী বাসে । সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ মেচেদা-হলদিয়া 41 নম্বর জাতীয় সড়কের আন্ডারপাসের কাছে বাস থেকে নামেন তিনি । পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে এগোচ্ছেন । এমন সময় দেখেন, রাস্তার ধারে এক প্রবীণ পড়ে রয়েছেন । হাঁটু, মুখে অল্পবিস্তর চোট । ছেঁড়া লুঙ্গিতে কয়েক ফোঁটা রক্ত । বাইকে যাওয়ার সময় কারা যেন ধাক্কা মেরে গেছে । আর ফিরেও তাকায়নি । আহত শেখ নুরজামান তখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন । ওঠার সামর্থ্য নেই । যদি কেউ একটু তাকায় । সাহায্যের হাত বাড়ায় । ব্যস্ত পথচারীরা পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে । ঘটনাটি নজরে আসে অলিদের । এক মুহূর্তে কোথাও যেন এতদিনের প্রস্তুতি, পরীক্ষা সবকিছু ভুলে যান তিনি । বিবেকের কাছে প্রশ্নোত্তরে ক্লান্ত অলিদ প্রথমটা ইতস্তত বোধ করলেও শেষমেশ প্রবীণকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন । কিন্তু তখনও মনে অন্তর্দ্বন্দ্ব । হাতে সময় আছে । যদি প্রবীণের কোনওরকম একটা বন্দোবস্ত করে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছানো যায় । তাই 100 ডায়াল করেন । কিন্তু পুলিশের তরফেও কোনও সাড়া মেলেনি । আর সাত-পাঁচ না ভেবে এবার সিদ্ধান্ত নেন অলিদ । প্রবীণকে কোলে তুলে প্রায় হাফ কিলোমিটার পথ হেঁটে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভরতি করেন । এতক্ষণ যাঁরা নির্বিকার হয়ে দেখছিলেন, তাঁরা যথারীতি সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করেন । ইতিমধ্যে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরালও হয়েছে সেই ছবি ।

কিন্তু পরীক্ষা ? আহতকে হাসপাতালে ভরতি করার পর মাথায় আসে পরীক্ষার কথা । তড়িঘড়ি মেচেদা স্টেশনে ট্রেন ধরে কলেজে এসে পৌঁছান অলিদ । ঘড়ির কাঁটায় তখন 10টা । ততক্ষণে প্রায় আধঘণ্টা হয়ে গেছে পরীক্ষা । তাই কলেজ কর্তৃপক্ষ আর পরীক্ষায় বসতে দেয়নি অলিদকে । কলেজের নিরাপত্তারক্ষীদের বারবার পরিস্থিতির কথা বুঝিয়েও কোনও লাভ হয়নি । শেষমেশ 10টা 45 মিনিট নাগাদ পরীক্ষা না দিয়েই বাড়ি ফিরতে হয় তাঁকে । অলিদের কথায়, "পরীক্ষা দিতে না পারায় মন খারাপ হয়েছিল । তাই ফোন করে নুরজামানকে দেখতে তাঁর বাড়ি যাই । এখন তিনি সুস্থ । খুব ভালো লাগছে । জীবনে অনেক পরীক্ষা দিয়েছি ৷ আবার সুযোগ পাব । আশা করি, তাতে সাফল্য নিশ্চিত আসবে ।"

Intro:মেচেদা,২১ জানুয়ারি: দীর্ঘ চার বছর ধরে কলেজ সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কাঁথির শ্রীরামপুরের বাসিন্দা অলিদ আলী। পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে গত রবিবার কলেজ সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পাঁশকুড়া বনমালী কলেজে আসছিলেন তিনি ।কিন্তু বাস থেকে নেমেই দেখেন চোখের সামনেই 41 নম্বর জাতীয় সড়কে বাইকের ধাক্কায় আক্রান্ত হয়েছেন এক পথচারী প্রৌড়। রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরানো প্রৌড়ের পাশ দিয়ে পথচারীরা হেঁটে চলে গেলেও তাঁকে উদ্ধারকাজে কেউই আগে এগিয়ে আসেনি। পরীক্ষার একরকম ভুলে গিয়েই জখম ব্যক্তিকে বাঁচানোর তাগিদে প্রথমে 100 নম্বরে ফোন করেন । পুলিশকে ফোন করেও কোন সাড়া পাননি তিনি। আর তাই স্বপ্নের হাতছানি দূরে ঠেলে প্রৌঢ় কে বাঁচিয়ে মানবতার প্রমাণ দিলেন যুবক। যে ছবি ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ।Body:জানা গিয়েছে, গত রবিবার হাওড়ার উলুবেড়িয়ার আলামিন মিশন স্কুলের প্রাণিবিদ্যার অতিথি শিক্ষক শেখ ওলিদ আলী ওয়েস্ট বেঙ্গল কলেজ সার্ভিস কমিশনের সেট পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কাঁথি থেকে রওনা দিয়েছিলেন কলকাতা গামী বাসে করে। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ মেছেদা হলদিয়া 41 নম্বর জাতীয় সড়কের আন্ডার পাসের কাছে তিনি বাস থেকে নামেন। তখনই দেখেন কলকাতাগামী জাতীয় সড়কে এক বৃদ্ধ রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছেন। বাস থেকে নামা ও সামনের বাসস্ট্যান্ডে থাকা বহু নিত্যযাত্রী তাকে দেখলেও কেউই উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়নি। সবাইকে উদ্ধার কার্যে হাত লাগানোর আহ্বান জানিয়েও সাড়া দেয়নি কেউই। আর তাই পরীক্ষার কথা ভুলে গিয়ে প্রৌড়কে প্রাণে বাঁচানোর তাগিদ থেকে কোলে করে নিয়ে হাফ কিলোমিটার দূরের স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। অলিদের এই কর্মকাণ্ড অনেকেই মোবাইলে ছবি তুলে রাখেন। পরে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। যেখানে অনেকেই বলছেন যান্ত্রিকতার যুগে মানবতা এখনও বেঁচে রয়েছে কিছু মানুষের মধ্যে। জখম ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে যখন মেচেদা স্টেশনে ট্রেন ধরে কলেজে এসে পৌঁছান তখন বাজে ঘড়ির কাঁটায় 10টা। পরীক্ষা প্রায় আধঘন্টা হয়ে গিয়েছে। তাই কলেজ কর্তৃপক্ষ অলিদ কে বসতে দেননি পরীক্ষায়। কলেজের নিরাপত্তারক্ষীদের বারবার পরিস্থিতির কথা বুঝিয়েও কোন ছাড় পাওয়া যায়নি। ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই 10:45 নাগাদ পরীক্ষা না দিয়েই বাড়ি ফিরতে হয়। প্রস্তুতি নেওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষা দিতে না পারায় ওলীদের মনে দুঃখ থাকলেও নিজের কাজে আনন্দিত বলেই জানিয়েছে সে।Conclusion:তাঁর কথায়, দুর্ঘটনায় জখম প্রৌড় শেখ নুরজামান কে হাসপাতালে ভর্তি করে উনার পরিবারের ফোন নাম্বার নিয়ে ঘটনার কথা তাঁর বাড়িতে জানিয়েছিলাম। পরীক্ষা দিতে না পারায় মন খারাপ হতেই ফোন করে প্রৌড়ের বাড়িতে ওনাকে দেখতে যাই। বর্তমানে তিনি সুস্থ রয়েছেন। ওনাকে বাঁচাতে পেরে নিজের খুব ভালো লাগছে। মানুষ জ্ঞান অর্জন করে মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশের জন্য। জীবনে অনেক পরীক্ষায় দিয়েছি আবার সুযোগ পাবো। আশা করি তাতে সাফল্য নিশ্চিত আসবে। নিজের বিবেকের কাছে মনুষ্যত্বের পরিচয় রেখে আমি আজ প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করেছি এটাই আমার তৃপ্তি।
Last Updated : Jan 22, 2020, 9:18 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.