নন্দকুমার ,7 ফেব্রুয়ারি : পঁচিশ ফুটের পেশীবহুল ভীম দাঁড়িয়ে আছে গদা হাতে । গলায় ঝুলছে প্রায় ১০ লাখ টাকার 100 থেকে 200 টাকার নোট । খুচরো টাকার কোনও হিসেব নেই । সন্তান কামনায় কেউ ভীমের পায়ে লুটোপুটি খাচ্ছেন কেউ বা অসুস্থ রোগীকে সুস্থ করার কামনায় ভীমের পায়ে মাথা ঠুকছেন । ভীমের এই বিপুল অঙ্কের উপহারে সাজছে এলাকার স্কুল বাড়ি থেকে রাস্তাঘাট । ধর্ম ও উন্নয়নের মিশেলে পূর্ব মেদিনীপুরে তাড়াগেড়িয়ার ভীম এখন অন্যান্য পুজো কমিটির কাছে কার্যত আইকন ৷
ঠিক কবে পুজো শুরু হয়েছিল তা জানা নেই এলাকার প্রবীণদের । তবে তাঁদের অনুমান, প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে গ্রামে হয়ে আসছে ভীমের পুজো । জেলাজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় ভীম পূজিত হলেও নন্দকুমারের তাড়াগেড়িয়ার পুজো জেলাবাসীর অন্যতম আকর্ষণ । জেলা তো বটেই, পার্শ্ববর্তী হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি থেকেও আসেন দ্বিতীয় পাণ্ডবের হাজার হাজার ভক্তকুল । প্রতিবছরই ভক্তরা ভীমের কাছে পূজা দিয়ে নিত্যনতুন মনস্কামনা নিয়ে মানত করে যান । কেউ চান সুস্থতা ,কেউবা সন্তান, চাকরি বাকরি তো আছেই । বছর ঘুরে মনস্কামনা পূরণ হলেই 10 থেকে 500 এমনকী 2000 টাকার নোটের মালা পরিয়ে মানত পূরণ করেন ভক্তরা, এমনই রীতি চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে । পুজোর উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, এবছর প্রায় 10 লাখ টাকার মালা ভক্তরা পরিয়েছেন ভীমকে । পুজো শেষে সেই টাকা যেমন মন্দিরের উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা হয় তেমন গ্রামের রাস্তাঘাট, পানীয় জল থেকে শুরু করে এলাকার সরকারি স্কুলের ভবন নির্মাণের জায়গা কেনার জন্যও খরচ করা হয় ।
ভীম একাদশী তিথি উপলক্ষ্যে বুধবার থেকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দকুমারের তাড়াগেড়িয়া গ্রামে বসেছে ভীম মেলা । তাড়াগেড়িয়া প্রাথমিক স্কুলের মাঠজুড়ে বসেছে রকমারি দোকানপাট ৷ 12 দিন ধরে চলবে এই প্রাচীন মেলা। প্রতিদিনই কলকাতার খ্যাতনামা শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবেন । গ্রামবাসীদের উদ্যোগেই এই পুজো এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে । তাদের বিশ্বাস গ্রামের রক্ষাকর্তা হলেন ভীম । আর তাই এত ঘটা করে পুজোর আয়োজন । ভক্তরা জানিয়েছেন, এখানকার দ্বিতীয় পাণ্ডব তাঁদের কোনও মনস্কামনা অপূর্ণ রাখেন না । সব বাসনাই পুরণ করেন ৷ তাই ছুটে আসা ।
পুজো কমিটির সম্পাদক গোপাল চন্দ্র গুড়িয়া জানান, প্রতিবছর ভক্তরা মনস্কামনা পূরণ হলে হাজার হাজার টাকার মালা চড়ান ভীম দেবের গলায় । এবছর প্রায় 10 লাখ টাকার মালা পরানো হয়েছে ভীম দেবকে । পুজোর দিন ভক্তরাই টাকার মালা গেঁথে পরিয়ে দেন । পুজো শেষে সেই টাকা যেমন খরচ করা হয় মন্দিরের উন্নয়নের জন্য, ঠিক তেমনই এলাকার উন্নয়নের কাজেও ব্যয় করা হয় । মানুষের বিশ্বাস-আস্থার কারণেই পুজো দিনে দিনে বড় হচ্ছে ৷ সমাগম হচ্ছে লাখ লাখ পুণ্যার্থীর ।