নন্দীগ্রাম, 29 অগস্ট: ফের তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্দেশ্যে হুংকার দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ বললেন, ‘‘আমার সঙ্গে লড়তে গেলে দম লাগবে । ওর মালিককে তো আমি হারিয়েছি ।’’ বলাই বাহুল্য যে তিনি এখানে তৃণমূল কংগ্রেসের মালিক বলতে দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কেই বুঝিয়েছেন ৷ মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম-1 ব্লকের স্থায়ী সমিতি গঠনে বিজেপির জয়ের পর এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শুভেন্দু ৷
কেন হুঁশিয়ারি দিলেন শুভেন্দু অধিকারী: নন্দীগ্রাম-1 ব্লকের স্থায়ী সমিতি গঠন নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই টানটান উত্তেজনা ছিল স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে৷ তৃণমূল ও বিজেপি দুই পক্ষই জয়ের চেষ্টা করে যাচ্ছিল ৷ মঙ্গলবার ছিল ভোটাভুটি ৷ সেই ভোটাভুটিতে জয় পায় বিজেপি ৷ সেখানে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং শুভেন্দু অধিকারী ৷ নন্দীগ্রামের বিধায়ক হিসেবেই তিনি ভোট দিতে যান ৷ দলের জয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত ছিলেন তিনি ৷ সেই সময়ই তৃণমূলের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেন বিরোধী দলনেতা ৷
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীকে ইসরোর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে তারপর সংবর্ধনা, দাবি শুভেন্দুর
নন্দীগ্রাম-1 ব্লকে স্থায়ী সমিতির ভোট: নন্দীগ্রাম-1 পঞ্চায়েত সমিতির মোট আসন সংখ্যা 30 । স্থায়ী সমিতির দখল নিতে গেলে এই 30টি ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৷ তাছাড়া স্থায়ী সমিতি গঠনে ভোটাধিকার রয়েছে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির প্রধানদের, জেলা পরিষদে ওই এলাকার সদস্যদের এবং বিধায়ক ও সাংসদদের ৷
নন্দীগ্রাম-1 পঞ্চায়েত সমিতির 30টি আসনের মধ্য়ে বিজেপি ও তৃণমূল 15টি করে আসনে জিতেছে ৷ এছাড়াও ওই ব্লকে বিজেপির ছ’জন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রয়েছেন ৷ আর বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী৷ ফলে বিজেপির পক্ষে ভোট ছিল 22টা ৷ অন্যদিকে তৃণমূলের চারজন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রয়েছেন ওই এলাকায় ৷ আর দু’জন সদস্য জেলা পরিষদের ৷ যদিও সুভাষিনী কর নামে এক জেলা পরিষদ সদস্য জেলা পরিষদে সহ-সভাধিপতি হয়েছেন ৷ ফলে তাঁর ভোটাধিকার নেই ৷ সেই কারণে তৃণমূলের ভোট 15 এবং চার ও এক, সব মিলিয়ে 20 ৷ এর সঙ্গে যোগ হওয়া উচিত তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীর ভোট ৷ কারণ, এখনও তিনি তৃণমূলেরই সাংসদ ৷ তাই তৃণমূলের মোট ভোট হওয়া উচিত ছিল 21 ৷
কিন্তু শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপিতে যোগদানের পর থেকেই তাঁর বাবা শিশির অধিকারী ও ভাই দিব্যেন্দু অধিকারীর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে ৷ ফলে তাঁর ভোট কোনদিকে যাবে, এই নিয়ে জল্পনা ছিল এলাকায় ৷ তৃণমূল দাবি করেছিল যে দিব্যেন্দু বিজেপিকেই ভোট দেবেন ৷ তাঁকে বিরোধী দলনেতাই ডেকে এনেছেন ৷ অন্যদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছিলেন, দিব্যেন্দু তৃণমূলের সাংসদ ৷ তাই তৃণমূলকেই ভোট দেবেন ৷
আরও পড়ুন: 'মুখ্যমন্ত্রী চোরদের বাঁচাতে ব্যস্ত', দত্তপুকুরের ঘটনায় মমতাকেই কাঠগড়ায় তুললেন শুভেন্দু
নন্দীগ্রাম-1 ব্লকে স্থায়ী সমিতির ভোটের ফল: ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা যায় যে বিজেপি 24টি ভোট পেয়েছে ৷ আর তৃণমূল পেয়েছে 18টি ভোট ৷ রাজনৈতিক মহল বলছে, বিজেপির পক্ষে 22টি ভোট ছিল ৷ যদি ধরে নেওয়া হয় যে দিব্যেন্দু বিজেপিকেই ভোট দিয়েছেন ৷ তাহলে আরও একটি ভোট নিশ্চয় তৃণমূলের কেউ দিয়েছেন ৷ অন্যদিকে তৃণমূলের দু’টি ভোট অন্যদিকে চলে যাওয়ার পরও তাদের 19টি ভোট পাওয়ার কথা ছিল ৷ অথচ তারা পেয়েছে 18টি ভোট ৷ কেন একটা ভোট কম হল ? আপাতত এই প্রশ্নই ঘুরছে নন্দীগ্রামে ৷
এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পাশাপাশি কটাক্ষও করেছেন বিরোধী দলনেতা ৷ শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘আমরা 23 জন ছিলাম 24টা ভোট পেয়েছি । তৃণমূল তার ঘর ঠিক রাখতে না পারলে আমার কী !’’ একজন সদস্য অসুস্থ হওয়ার ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে তিনি ভোট দিয়ে দিয়েছেন তার পরেও ফল 24 হয়েছে । 24 আর 18 হয়েছে ।’’
এর পর তাঁর আরও কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলের কেউ ভোট দিতে জানে না । কেউ ভুল ভোট দেয় । এরা তো অশিক্ষিত তৃণমূল ৷ এরা কী করবে ! এরা আরও পড়াশোনা করুক । আমার সঙ্গে লড়তে গেলে দম লাগবে । ওর মালিককে তো আমি হারিয়েছি ।’’
আরও পড়ুন: পদোন্নতি! গ্রামীণ থেকে সেমি-আরবান হচ্ছে নন্দীগ্রাম থানা
নন্দীগ্রামে রাজনৈতিক উত্তেজনা: স্থায়ী সমিতিতে বিজেপির জয়ের পর ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় ৷ তৃণমূলের অভিযোগ, ভোটাভুটি চলাকালীন তাদের একজন সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়েন সেই সময় বিডিও-কে ভোট বন্ধ রাখতে বলা হয় ৷ কিন্তু বিডিও সেই অনুরোধ রাখেননি ৷ তাই তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ী পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরা পঞ্চায়েত সমিতির অফিসের সামনে ধরনায় বসে পড়েন ৷ বিডিওর অপসারণ দাবি করেন ৷
তৃণমূল কংগ্রেসের এই দাবি অনৈতিক, এই অভিযোগ বিজেপির কর্মী সদস্যেরাও বিক্ষোভকারীদের দিকে তেড়ে আসে বলে অভিযোগ ৷ এতে সেখানে উত্তেজনা তৈরি হয় ৷ পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে ।
এদিকে এদিন শুভেন্দু অধিকারী পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে ডাকা রাজ্য সরকারের সর্বদলীয় বৈঠকের সমালোচনা করেন ৷ সেখানে কোনও বিরোধী দল না যাওয়ার প্রশংসা করেন ৷ পাশাপাশি বাজি কারখানার বিস্ফোরণ নিয়ে তিনি তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর দাবি, পুলিশমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরোপুরি ব্যর্থ ৷ এছাড়া অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তা নিয়ে বিরোধী দলনেতার প্রতিক্রিয়া, ‘‘চোরেদের স্থান জেলে হওয়া উচিত ।’’
আরও পড়ুন: নন্দীগ্রামে টস জিতে বিজেপির বোর্ড গঠন, উচ্ছ্বসিত শুভেন্দু