নন্দীগ্রাম, 28 ডিসেম্বর : NRC ও CAA-র প্রতিবাদে এবার ধরনায় বসলেন তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারী । টাঙ্গুয়ার মঞ্চ থেকে কেন্দ্র সরকারকে শুভেন্দুর স্পষ্ট বার্তা NRC ও CAA যেন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় । এসব বাদ দিয়ে সরকার যেন বেকারত্ব, দারিদ্র দূরীকরণের মতো বিষয়গুলির উপর আলোকপাত করে । শুভেন্দুর বক্তব্য, দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে ভাঙতে চাইছে BJP। ভারতকে দ্বিধা বিভক্ত করতে চাইছে । তার বিরুদ্ধে এই লড়াই । পাশাপাশি তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন BJP কে । বললেন, লোকসভা পরও একটি বিধানসভা রয়েছে । কারণ গণতন্ত্রে মানুষই শেষ কথা বলে ।
CAA ও NRC-পর কোথাও যেন ভাটা পড়েছে গেরুয়া শিবিরের ভোট ব্যাঙ্কে । আজ ধরনা মঞ্চ থেকে তা যেম স্পষ্ট করে দিলেন শুভেন্দু । তুলে আনলেন মহারাষ্ট্র-ঝাড়খণ্ড প্রসঙ্গ । BJP কে আক্রমণ করে শুভেন্দুর বক্তব্য, হরিয়ানায় লোকসভা নির্বাচনে 90 টির মধ্যে 81 টি আসন পেয়েছিল । বর্তমানে তাঁদের আসন সংখ্যা কমে গেছে । অন্য দল নিয়ে সরকার গড়তে হয়েছে । মহারাষ্ট্রে BJP-র সঙ্গ ছেড়ে অন্য দলের সঙ্গে সরকার গড়েছে শিবসেনা । ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে তিনটি উপনির্বাচন হয়েছে যার মধ্যে খড়গপুর, কালিয়াগঞ্জ 22 বছর আমাদের দখলে ছিল না । খড়্গপুরে 45,000 ভোট ডেফিসিট ছিল।
দিলীপ ঘোষকে কটাক্ষ করে শুভেন্দুর বক্তব্য, "একজন বিরাট নেতা বড় বড় কথা বলেছিলেন । গতকাল কাঁথিতে দাঁড়িয়ে মিছিল করে তিনি বলেছেন, এখানে ডাক্তার দেবাশিস বাবু 6 লাখ ভোট পেয়েছেন । কিন্তু একবারও বলেননি 1 লাখ 11 হাজার ভোটে হেরেছেন । খড়্গপুরে তিনি নিজে হেরেছেন । শুভেন্দু অধিকারীকে বলেছিলেন নিজের জেলা সামলান তারপর খড়গপুর দেখবেন । আমি খড়্গপুরে ওর ঘরে ঢুকে ওকে সমুচিত জবাব দিয়ে এসেছি । ওখানে আমরা জিতেছি কালিয়াগঞ্জে আমরা জিতেছি ।"
শুভেন্দু জানান, CAA, NRC-র পর সবচেয়ে বড় ভোট হয়েছে ঝাড়খণ্ডে । যেখানে BJP-র সরকার ছিল সেখানে 27% আদিবাসী 14% সংখ্যালঘু একজোট হয়ে সরকারকে হারিয়ে দিয়েছে । 2006 সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য 235 টি আসন জেতার পর বলতেন, "আমরা 235 । ওরা 30, কেন আঙুল দেখাচ্ছে । আমরা 30-র কথা শুনব না ।" নন্দীগ্রাম আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা রুখে দিয়েছিলাম । BJP ও ক্ষমতায় অনেক আসন নিয়ে এসেছে । কিন্তু তাদেরকেও বুঝতে হবে লোকসভা পরও একটি বিধানসভা রয়েছে । কারণ গণতন্ত্রে মানুষই শেষ কথা বলে ।
আজকের জনসভায় তৃণমূল নেতা বলেন, "এখনও ভারতের 50 শতাংশ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন । 16 লাখ মানুষের দৈনিক রোজগার মাত্র 20 টাকা । অনেকে রয়েছেন যারা রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন । কৃষকরা সঠিকভাবে ফসলের দাম পায় না । ইউরিয়া সারের সাবসিটি পাওয়া যায় না । পেট্রোল, ডিজেলের দাম বেড়ে গেছে । বিদ্যুতের দাম বেড়ে গেছে । মানুষের নাভিশ্বাস ওঠা অবস্থা । এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি মনে করি, সরকার কোনও দলের নয় । ভারতের সরকার ভারতের নাগরিকদের । পশ্চিমবঙ্গের সরকার পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকের । ভোটের সময় দল হবে, ভোটের সময় আমরা একে অন্যের বিরুদ্ধে কথা বলব । কিন্তু যখন জিতে যাব শপথ নেব, তখন সবার দায়িত্ব আমাদের । তাই এই NRC ও CAA-র বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাব আমরা ।
আন্দোলনের নামে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ, খণ্ডযুদ্ধের নিন্দাও করেন শুভেন্দু । বলেন, "যারা আন্দোলন করতে গিয়ে ট্রেন ও বাস পুড়িয়েছেন তাদেরকে কখনও সমর্থন করা যায় না । যেভাবে NRC, CAA-র প্রতিবাদ আমি করেছি, ঠিক সেভাবেই যারা আইন হাতে তুলে নিয়েছেন তাঁদের কাজেরও আমি প্রতিবাদ জানাই ।"