নন্দীগ্রাম, 2 এপ্রিল : নন্দীগ্রামের বয়ালের বুথে তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ একের পর এক প্রশ্ন করে চলেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারকে ৷ অরাজকতার কারণ জানতে চাইছেন ৷ ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন কমিশনের প্রতি ৷ আর সেই সময় শান্ত ভঙ্গিতে তাঁর সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলেন আইপিএস অফিসার নগেন্দ্র ত্রিপাঠী ৷ একসময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তুলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, 'ম্যাডাম, খাঁকি উর্দিতে দাগ নেব না ।' আর এই মন্তব্যের পরই হাইভোল্টেজ গ্রাউন্ড নন্দীগ্রামে কার্যত নজর কাড়লেন আইপিএস নগেন্দ্র ত্রিপাঠী ৷
গতকাল চার জেলায় মোট 30টি কেন্দ্রে দ্বিতীয় দফার ভোট সম্পন্ন হয় ৷ তার মধ্যে প্রত্যেকের নজরে ছিল নন্দীগ্রাম ৷ যেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি ওই কেন্দ্রে এবার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হবেন ৷ সেদিন থেকেই পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিসরে নন্দীগ্রামের প্রাসঙ্গিকতা অনেকটাই বেড়ে যায় ৷ তারপর যখন জানা যায়, এবার তাঁর প্রতিপক্ষ একসময়ের বিশ্বস্ত সেনাপতি শুভেন্দু অধিকারী ৷ তখন থেকে প্রত্যেকের নজর ছিল নন্দীগ্রামের ভোটের দিকে ৷ গতকাল সেই ভোটপর্বের সমাপ্তি হয়েছে ৷
ভোটের দিন সকাল থেকেই বুথে বুথে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গিয়েছিল শুভেন্দু অধিকারীকে ৷ অন্যদিকে, নিশ্চুপ ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ দুপুরের আগে তাঁকে দেখা যায়নি ৷ রেয়াপাড়ার বাড়িতেই ছিলেন তিনি ৷ দুপুরের পর রেয়াপাড়ার বাড়ি থেকে বের হতে দেখা যায় ৷ বয়াল 2-এর 7 নং বুথে যান তিনি ৷ সেখানে যেতেই উত্তেজনা ছড়ায় বুথ সংলগ্ন চত্বরে ৷ বুথের 200 মিটারের মধ্যে ভিড় জমতে শুরু করে ৷ তৃণমূল-বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে ৷ হাতাহাতি হয় ৷ বুথের ভিতরে তখনও আটকে মমতা ৷ বাইরে বিজেপির যে সমর্থকরা ভিড় করছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই হিন্দিতে কথা বলছিলেন ৷ মমতার অভিযোগ, এরা সবাই বহিরাগত ৷ বুথের ভিতরে বসেই ফোন করেন রাজ্যপালকে ৷ ক্ষোভ উগড়ে দেন নির্বাচন কমিশনের উপর ৷
আরও পড়ুন, রক্তে মাখামাখি গণতন্ত্রের উৎসব, বাকি আরও 6 দফা
আর অন্যদিকে, এই উত্তেজনামূলক পরিস্থিতিকে দক্ষ হাতে সামাল দিতে চেষ্টা করছিলেন আইপিএস অফিসার নগেন্দ্র ত্রিপাঠী ৷ তাঁকেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় ৷ বুথে ঢুকেই নগেন্দ্রকে মমতা প্রশ্ন করেন, 200 মিটারের মধ্য়ে কেউ থাকতে পারে না ৷ সেক্ষেত্রে, এই বুথে 200 মিটারের মধ্যে কেন ছিল সবাই ৷ তারা কেন স্লোগান দিচ্ছিল ৷ এই প্রশ্নের উত্তরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন আইপিএস অফিসার ৷ কিন্তু, তাঁর জবাবে সন্তুষ্ট হননি মমতা ৷ তাদের দিকেই অভিযোগ তোলেন ৷ তখন নগেন্দ্র ত্রিপাঠীর স্পষ্ট জবাব, 'ম্যাডাম খাঁকি উর্দিতে দাগ নেব না । আর এমন অশান্তি হবে না ।' পালটা মমতা বলেন, 'অনেকেই তো দাগ নিচ্ছে ৷ ' এই প্রশ্নের উত্তরেও নগেন্দ্রর স্পষ্ট জবাব, 'আমি দাগ নেব না।' আর কোনও অশান্তি হবে না বলেও আশ্বাস দেন তিনি ৷ এরপরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুথ থেকে বেরিয়ে যান ৷
গোটা দিনটা নন্দীগ্রামে মূল নজরে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী ৷ সেখানে দিনের শেষে কিছুটা হলেও যে নজর কেড়েছেন নগেন্দ্র ত্রিপাঠি ৷ একথা বলাই যায় ৷