পাঁশকুড়া, 12 অক্টোবর : পাঁশকুড়ায় তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছে ৷ 7 অক্টোবর পাঁশকুড়ার মাইসোরার দলীয় কার্যালয়ে খুন হন ব্লকের কার্যকরী সভাপতি তথা পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কুরবান শাহ ৷ ঘটনার পর থেকেই শুরু হয় তৃণমূল- BJP চাপানউতোর ৷ মৃত তৃণমূল নেতার পরিবারের পক্ষ থেকে BJP নেতা আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে অভিযোগ করা হয় ৷ 10 অক্টোবর গভীর রাতে কুরবান শাহের পরিবারের তরফে পাঁশকুড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় ৷ সেই অভিযোগে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে আনিসুর রহমানের নাম উল্লেখ করা হয় ৷
তবে ঘটনার দিন রাতেই আনিসুর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন ৷ এরপর গতকাল তিনি একটি ভিডিয়ো বার্তায় আবারও দাবি করেন, তিনি এই খুনের ঘটনার সঙ্গে কোনওভাবেই যুক্ত নন ৷ পাশাপাশি তিনি মৃত তৃণমূল নেতার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য CBI তদন্তের দাবি করেছেন ৷ যদিও এই ভিডিয়ো বার্তার সত্যতা ETV ভারত যাচাই করেনি ৷
এই সংক্রান্ত খবর : "দিদি কি জানেন ? শুনে কী বলছেন" ; জানতে চান কুরবানের বিবি
আনিসুর রহমান ওই ভিডিয়ো বার্তায় জানিয়েছেন, " পাঁশকুড়ায় যা ঘটেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও ন্যক্কারজনক ঘটনা ৷ খুনের রাজনীতি আমি এবং আমার দল বিশ্বাস করে না ৷ আমি কুরবান শাহের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমার হৃদয়ের থেকে সমবেদনা জানাই ৷ কারণ রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় ৷ পুলিশের কাছে আমি অনুরোধ করব আসল দোষীকে খুঁজে বের করা হোক । এতজন মোটরসাইকেলে এল, শুট আউট হল, এখনও পর্যন্ত তেমন ভাবে কেউ ধরা পড়ছে না । এটা গোয়েন্দা দপ্তরের ব্যর্থতা বলে আমি মনে করি । এটা তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের ফল । আমি এই ঘটনার CBI তদন্ত দাবি করছি ।"
তিনি আরও যোগ করেন, "বলা হচ্ছে, CCTV ফুটেজে আমাকে পাওয়া গেছে । যা পাওয়া গেছে তা ঠিকই ৷ 6.30-এ আমাকে মেচোগ্রামে এবং 6:45-এ কোলাঘাটে নিশ্চিতভাবেই আমি ছিলাম । নবমীর দিন বিজয়ের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য মুকুল রায়ের বাড়িতে যাচ্ছিলাম । আমি গাড়ির মধ্যেই ছিলাম এবং রাস্তাতেই ছিলাম । কোথাও কোনও টেবিলে কোনও অজানা ব্যক্তিকে নিয়ে মিটিং করে কাউকে হত্যা করার চক্রান্ত আমি করিনি ।এই রাজনীতি আমি বিশ্বাস করি না । "
ভিডিয়োতে তিনি আরও বলেন , "আসলে যখন থেকেই আমি BJP-তে এসেছি তখন থেকেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলা ও রাজ্যের একজন প্রভাবশালী নেতা বিভিন্নভাবে রাজনৈতিকভাবে লড়াই করতে না পেরে, যেখানেই কোনও মৃত্যু ও অঘটন ঘটেছে সেখানেই তিনি আমার দিকে আঙুল তোলার চেষ্টা করেছেন । তদন্তের আগে তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন । আমি শুনেছি ইতিমধ্যে একজন গ্রেপ্তার হয়েছে । আমি জানি না তিনি এই ঘটনার সাথে জড়িত কি না । তবে ওনার গ্রেপ্তারি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দিক নির্দেশ করছে । আমি পুলিশকে অনুরোধ করব ঘটনার গভীরে গিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের আসল খুনিকে বের করা হোক । আনিসুর রহমানের যদি বিন্দুমাত্র ভূমিকা থাকে তাহলে আমি নিশ্চিত ভাবে শাস্তি পাব । কিন্তু যারা খুন করল, তাদের আগে খুঁজে বের করা হোক ৷ পুলিশের এটা প্রথম কর্তব্য । পুলিশের আমার পেছনে ছুটে কোনও লাভ নেই । আমি নিশ্চিতভাবে আইনের সাহায্য নিচ্ছি । আমি রাজনৈতিক নেতা, আমাকে মানুষের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করে খুনি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই একটা পরিবারের পক্ষ থেকে বারে বারে এই চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে । কে খুনি, কে কাকে প্রাণে মেরেছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মানুষ জানে । তাই এ বিষয়ে আমি বেশি কিছু বলতে চাই না ৷ এটা পুরোপুরি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল বলে আমার মনে হচ্ছে ।"
প্রসঙ্গত, তৃণমূল ব্লক কার্যকরী সভাপতি খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই পাঁশকুড়া থানার পুলিশ এক স্থানীয় তৃণমূল নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে । বাকিদের খোঁজে জেলা ও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তল্লাশি চালানো হচ্ছে ৷ পরিস্থিতি এখন কোনদিকে গড়ায় সেইদিকেই নজর রাখছে রাজনৈতিক মহল ৷