তমলুক, 20 ডিসেম্বর : 2011-2012 সালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় টাকা দিয়েই মিলেছিল প্রাথমিকের বেশ কিছু চাকরি । আর সে কারণেই নতুন করে চাকরি দেওয়ার দলীয় কর্মীদের কাছ থেকে টাকা তুলেছিল দলেরই একাংশ । যা তারা তুলে দিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের হাতে । পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দেখা যায় নেতাকে টাকা দিয়েও তালিকায় নাম নেই চাকরিপ্রার্থীদের । যে কারণেই পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সোমনাথ বেরা নিজের ও স্ত্রীর নামে বেশ কয়েকটি চেক ফেরত দিয়েছিলেন দলীর নেতৃত্বদের । যারা সোমনাথ বেরার হয়ে চাকরিপ্রার্থীদের থেকে টাকা তুলেছিল । অভিযোগ, সেই চেকগুলি ব্যাঙ্কে জমা দিলে তা বাউন্স করে । পরে তমলুক ব্লকের একাধিক নেতা সোমনাথবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে টাকা ফেরতের জন্য দ্বারস্থ হয়েছিলেন তৃণমূল জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর কাছে । কিন্তু তাতেও মেলেনি ফল । তাই ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের বেশ কয়েকটি অঞ্চলের পদাধিকারীরা এবার সোমনাথবাবুর বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন করে টাকা ফেরতের বার্তা দিলেন । অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছেন শিশির অধিকারী ।
আজ তমলুকের মিলন নগরের একটি বেসরকারি আবাসনে তৃণমূলের নীলকুণ্ঠ অঞ্চলের 5 নম্বর বুথের সভাপতি শশধর সামন্ত, তমলুক ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি মাধব পাঁজা, অনন্তপুর 2 অঞ্চলের সভাপতি শ্রীকান্ত খাসকিল সহ মোট 20 জন তমলুক ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা সাংবাদিক বৈঠক করে । শশধর সামন্ত অভিযোগ করে বলেন, "2012 সালের প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগে সোমনাথবাবুর মাধ্যমে বেশকিছু চাকরি হয়েছিল যা আমরা জানতে পেরেছিলাম । পরে সোমনাথবাবু আমাদের জানান ভবিষ্যতেও এভাবেই দলীয় কর্মীদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন তিনি । চাকরি পেতে লাগবে টাকা । তাই সোমনাথবাবুকে বিশ্বাস করে আমরা 2012 সালের পর থেকে মোট 70 থেকে 75 জন দলীয় কর্মীর কাছ থেকে প্রায় 2 কোটি টাকা তুলে দিয়েছিলাম । কিন্তু টাকা তুলে দিলেও দেখা যায় যাদের চাকরির জন্য টাকা দিয়েছিলাম তাঁরা প্রত্যেকেই পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে । সোমনাথবাবু জানিয়েছিলেন প্রাথমিক শিক্ষক, জেলার পঞ্চায়েত দপ্তরের গ্রুপ ডি, গ্রুপ সি ও নির্মাণ সহায়কের সমস্ত চাকরিই তাঁর হাতে । বিশ্বাস করে টাকা দিয়ে আমরা প্রতারিত হওয়ায় টাকা ফেরত চেয়েছি । এর জন্য 2018 সালে ওঁর কাছে দ্বারস্থ হই । টাকা ফেরত দেওয়ার নাম করে সোমনাথবাবু তাঁর স্ত্রী উত্তর সোনামুই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কাজল বেরা ও নিজের নামে বেশ কয়েকটি চেক লিখে দেন মার্চ মাস নাগাদ । কিন্তু ব্যাঙ্কে সেই চেকগুলি জমা দেওয়ার পর দেখা যায় সেগুলি বাউন্স করেছে । যে কারণে আমরা প্রতারিত হয়ে জেলার দলের সভাপতি তথা কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারীর দ্বারস্থ হই । কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে টাকা ফেরতের সমস্ত চেষ্টা চালিয়ে গেলেও তা না পাওয়ায় আমরা বাধ্য হয়েই আজ সাংবাদিক সম্মেলন করছি । আমরা চাই সোমনাথবাবু অবিলম্বে আমাদের টাকা ফেরত দিক । তা না হলে আমরা সবশেষে ওঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব ।"
যদিও পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সোমনাথ বেরা । টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি । তাঁর অভিযোগ, দলের অভ্যন্তরীণ ঝামেলার কারণেই কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে এই ধরনের মিথ্যে অভিযোগ প্রতিনিয়ত করে চলেছে । ওঁদের সঙ্গে আমার ব্যবসায়িক সম্পর্কের কারণেই চেক দিয়েছিলাম তা বাউন্স করেছে । এর সঙ্গে চাকরির কোনও সম্পর্ক নেই । কারও কোনও অভিযোগ থাকলে সে আমার বিরুদ্ধে আইনি পথে লড়াই করতে পারে । এভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে আমার রাজনৈতিক জীবন কালিমালিপ্ত করা উচিত নয় ।
ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তৃণমূলকে আক্রমণ করতে ছাড়েনি BJP । পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নবারুণ নায়েক বলেন, "সোমনাথবাবুর বিরুদ্ধে কয়েকশো কোটি টাকা তোলার অভিযোগ অনেক আগেই প্রকাশ্যে এসেছিল । তা সত্ত্বেও সোমনাথবাবুকে তমলুকে 2019 লোকসভা নির্বাচনের ভোটিং এজেন্ট হিসেবে রাখা হয়েছিল । আসলে সোমনাথবাবু কাটমানি হিসেবে যে টাকা বাজার থেকে তুলেছিল তা সঠিক সময়ে জেলার ক্ষমতাশীল পরিবারকে পৌঁছে দেননি । তাই ওঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলেরই অপর এক গোষ্ঠীকে এগিয়ে দিয়ে চাপে রেখে টাকা আদায়ের নতুন পরিকল্পনা করেছে শাসকদলের একাংশ । আমরা চাই সত্যিটা সামনে আসুক ।
এ বিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, দলে কাউকে পদ দেওয়া মানেই চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তোলার লাইসেন্স দেওয়া নয় । ওনার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই অভিযোগ এসেছে । দলের তরফে তদন্ত কমিটি গঠন করে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে । অভিযোগ প্রমাণিত হলে দলীয়ভাবে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।