দুর্গাপুর, 28 এপ্রিল: রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থায় চাকরি দেওয়ার নাম করে আর্থিক প্রতারণা করেছে ছেলে। আর বদলা নিতেই তাঁর মাকে অপহরণ করল প্রতারিতরা ৷ প্রতারিতদের দাবি, মাকে অপহরণ করলে ছেলের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করা সহজ হবে, সেই কারণেই অপহরণ করা হয় ওই মহিলাকে । পালিয়ে বেড়ানো ছেলের খোঁজ পেতেই কি শেষে মাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ছক কষেছিল প্রতারিতরা ? নাকি এর পিছনে রয়েছে অন্য কোনও রহস্য ? উত্তরের খোঁজে তদন্ত শুরু করছে পুলিশ ৷
বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রতারিতদের হাতে দুর্গাপুরের পলাশডিহা এলাকা থেকে ফিল্মি কায়দায় অপহরণ করা হয় এক মহিলাকে ৷ কয়েকঘণ্টার মধ্যেই অবশ্য মুর্শিদাবাদের সালার থানা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় ওই মহিলাকে। সেই সঙ্গে, দুটি বোলেরো গাড়ি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি আট জন মহিলা-সহ মোট 14 জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই দিন রাতেই ধৃতদের নিয়ে আসা হয় দুর্গাপুর থানায়। শুক্রবার ধৃতদের দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায় পুলিশ।
গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখে তদন্ত করেছে দুর্গাপুর থানার পুলিশ। সূত্রের খবর, পলাশডিহার বাসিন্দা বাপন মজুমদার নামের এক যুবক এবং আরও বেশ কয়েক জন মিলে মোট 45 জন ব্যক্তিকে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দফতর-সহ কৃষি এবং দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)-এ গ্রুপ-ডি পদে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ৷ অভিযোগ, চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রায় চার কোটি টাকার প্রতারণা করেছে ওই যুবক। একাধিকবার সেই টাকা প্রতারিতরা চেয়েছে বলেও দাবি। কিন্তু অভিযুক্ত যুবক বা তাঁর সঙ্গীরা টাকা ফেরত দেয়নি বলে অভিযোগ ৷ এরপর বেশ কিছুদিন ধরেই বাপনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না বলেও অভিযোগ প্রতারিতদের। এমনকী যুবকের পলাশডিহার বাড়িতে এসেও তাঁর দেখা মিলছিল না বলেও দাবি তাঁদের।
শেষমেশ টাকা না পেয়ে বৃহস্পতিবার বাপনের প্রৌঢ়া মাকে তুলে নিয়ে যায় প্রতারিতরা। এদিন দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে ধৃত এক মহিলা জানান, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে টাকার জন্য বাপনের পিছনে ছুঁটে বেড়াচ্ছেন। যদিও তাঁর নাগাল পাওয়া যাচ্ছিল না ৷ তাঁদের সঙ্গে দেখা করছিল না বলেও জানান তিনি। ধৃত ওই মহিলার কথায়, "আমরা ভেবেছিলাম ওর মাকে নিয়ে গেলে বাপন যদি আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে। মোট 45 জন চাকরির জন্য তাঁকে টাকা দিয়েছে। একজনেরও চাকরি হয়নি। ইতিমধ্যে দু'জন আত্মহত্যা করেছে।"
আরও পড়ুন: মৃত্যুঞ্জয় বর্মন মৃত্যু মামলায় সিবিআই তদন্তের আর্জি হাইকোর্টে
এখানেও কি তবে সেই নিয়োগ দুর্নীতির কোনও ছায়া ? বাপনের হাত ধরে টাকা কি পৌঁছেছিল কোনও বড় মাথার হাতে ? এদিনের পর এমনই প্রশ্ন উঠে আসছে। কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের বেশ কয়েকটি দফতরে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছিল বাপন, এমনটাই দাবি ধৃতদের ৷ তাহলে কি নিয়োগ দুর্নীতির শিকড় এসে পৌঁছেছিল শিল্প শহর দুর্গাপুরেও ? পুলিশ বাপনের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে।