আউশগ্রাম (পূর্ব বর্ধমান), 4 জুলাই : পায়ের দু'আঙুলের ফাঁকে ধরা চক । বোর্ডের গায়ে হেলান দিয়ে লিখে চলেছেন লাইনের পর লাইন । কষে চলেছেন একের পর এক অঙ্ক । মাস্টার মশাইয়ের কথা পড়ুয়ারা শুনছে মন দিয়ে ।
জন্ম থেকেই নেই তাঁর দুটি হাত । জগন্নাথের সঙ্গে মিল রেখেই নাম রাখা হয়েছিল । পড়াশোনা এবং কাজের প্রতি অদম্য জেদ, তাই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বাধা হয়নি জগন্নাথ বাউরির । হাত না থাকায় লেখাপড়া চালানোর জন্য পা-ই ছিল প্রধান ভরসা । পা দিয়েই চালিয়েছেন পড়াশোনা । লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি শুরু করেন জগন্নাথ ।
শুধু নামে নয়, জগন্নাথদেবেরও ভক্ত এই মাস্টারমশাই । ক্লাসে পায়ে লিখেই পড়ান । জ্যামিতি শেখানোর সময় নিখুঁত বৃত্ত আঁকা থেকে শুরু করে যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ সবই শেখাচ্ছেন পায়ে লিখে । স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মোবাসসার হোসেন বলেন, "খুবই সময়-সচেতন জগন্নাথ । পা দিয়ে লিখলেও কোনও ক্লান্তি নেই তাঁর । অবলীলায় নিজের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন । "
আজ রথযাত্রা । রথে অধিষ্ঠিত জগন্নাথদেব যেমন ভক্তদের কাছে মহাপ্রভু, তেমনি আউশগ্রামের জয় কৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষকও পড়ুয়াদের কাছে যেন "মহাপ্রভু" । শিক্ষক জগন্নাথের একটাই ইচ্ছা, রথের রশিতে টান দেবেন । যদিও তা কার্যত অসম্ভব । বাস্তব বুঝে মন শক্ত করেছেন । আর ছাত্র-ছাত্রীদের বলছেন, মন দিয়ে পড়াশোনা করার । লড়াই চালালে সাফল্য আসবেই । আর তার জলজ্যান্ত উদাহরণ তো তিনি নিজেই ।