বর্ধমান, 15 জানুয়ারি : সাবেকি পুতুল নাচের দিন আর নেই । পুতুল আজ তাদের কৌলিন্য হারিয়েছে । ফলে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থাকে তুলে ধরে পুতুলনাচকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শিল্পীরা । শুধুমাত্র নেশা আর ভালোবাসাকে অবলম্বন করেই শিল্পীরা নিত্যনতুন ভাবনা বের করছেন ।
শিল্পীদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা এখনও সারাদিন মাঠে ঘাটে কাজ করেন, চাষবাস করেন ,দোকানপাট সামলান ,দিনের শেষে বাড়ি ফিরে পুতুল নাচ নিয়ে ভাবনা চিন্তা করেন । এইভাবেই দিব্যি কেটে যায় তাদের দিন । অথচ আগে ছিল ছায়া পুতুল নাচ, লাঠি বা ডাঙার পুতুল নাচ, বেণী পুতুলনাচ বা দস্তানা পুতুলনাচ, তারে বা সুতোয় টানা পুতুলনাচ । ধর্মীয় ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে লোকশিল্পীরা পৌরাণিক পুতুলনাচের পালা পরিবেশন করতেন । কিন্তু প্রচারের অভাবে, পুতুল তৈরির সরঞ্জামের খরচ দিনে দিনে বেড়ে যাওয়ায় সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন শিল্পীরা । অথচ শুধু নেশার বসে ভালোবাসার টানে পুতুলনাচকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন শিল্পীরা ।
কলকাতার রংবেরং পাপেট থিয়েটারের পরিচালক অতীশ মুখোপাধ্যায় বলেন , "যে হারে পরিশ্রম সেই হারে কিছুই মেলে না । পাগল না হলে কেউ পুতুলনাচ নিয়ে মাথা ঘামাবে না । ফলে নিত্যনতুন ভাবনা মাথায় আনতে হয় । তাতে মানুষের সাড়াও পাচ্ছি । পুতুল নাটক যাতে বিলুপ্তির পথে চলে না যায় তাই কয়েকজন শিল্পী লড়াই করে যাচ্ছেন । বর্তমানে মোবাইল ফোন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে ৷ ভয়ানক পরিস্থিতি । আজ কোনও শিশুকে 10 মিনিট অঙ্ক করতে গেলে একমাত্র মোবাইলই ভরসা অভিভাবকদের । তাই আমরা বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছি অভিভাবকেরা যদি তাদের শিশুদের মধ্যে পুতুলকে কেন্দ্র করে সামান্যতম আগ্রহ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন তাহলে আগামী দিনে পুতুল নাটক অনেকটা এগিয়ে যাবে ।"
এক খুদে দর্শক প্রিয়ম চন্দ্র বলে, "সুকুমার রায়ের চিনিমিনি ও মূর্খ মাছি পুতুল নাটক দেখে খুব ভালো লেগেছে । এর আগে কোনওদিন পুতুল নাটক দেখিনি । "
বর্ধমান দি পাপেটিয়ার্সের পরিচালক পার্থপ্রতিম পাল বলেন , "বর্ধমান পুরসভার সহযোগিতায় বর্ধমান দি পাপেটিয়ার্স বর্ধমান শহরে পুতুলনাট্য উৎসবের যে আয়োজন করেছিল তার ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে । তবে পুতুল নাটকের চর্চা কমে যাচ্ছে । কারণ, এটা খুব ব্যয়বহুল ৷ এছাড়াও প্রচুর পরিশ্রম করতে হয় । একটা গল্প তৈরি করতে প্রায় বছরখানেক সময় লেগে যায় তাই শিল্পীরা চর্চা কমিয়ে দিয়েছেন । তবে অভিভাবকেরা যদি শিশুদের মধ্যে পুতুলনাচের প্রতি আগ্রহ গড়ে তোলেন তাহলে তাদের মানসিক বিকাশ ঘটবে ।"