বর্ধমান, 14 জুন : ডোনার নিয়ে গিয়েও বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে প্রয়োজনমত রক্ত মিলছে না । ফলে সমস্যায় পড়ছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগী ও তাদের পরিবার । যদিও বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, জুন জুলাই ও অগাস্ট মাসে এই সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা যাবে । ইতিমধ্যেই, সামাজিক দূরত্ব মেনে ছোটো ছোটো রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে ।
কোরোনা ভাইরাস সংক্রমণের জেরে রাজ্যের অন্যান্য জায়গার মতো রক্তের টান পড়েছে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও । রক্ত সংকট রয়েছে কালনা, কাটোয়াতেও । ফলে ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রোগীর পরিবারের লোকেদের বলা হয়েছে নির্দিষ্ট গ্রুপের রক্ত নেওয়ার জন্য ওই গ্রুপের রক্ত দান করতে হবে । অভিযোগ, একই গ্রুপের রক্ত জোগাড় করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রোগীর পরিবারকে । শুধু তাই নয়, দু'বোতল রক্তের প্রয়োজন হলে হাসপাতাল থেকে ডোনার নিয়ে আসা সত্ত্বেও এক বোতল রক্ত দেওয়া হচ্ছে । বর্ধমান ছাড়াও বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, হুগলি এমনকী ঝাড়খণ্ড থেকেও একাধিক রোগী চিকিৎসার জন্য বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল । কার্ডিয়াক সার্জারি, ক্যানসারের অস্ত্রোপচার, সিজ়ারিয়ান ডেলিভারি, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য প্রচুর পরিমাণে রক্ত প্রয়োজন হয় । অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীদের যেহেতু ফেলে রাখা যায় না ৷ তাই রক্ত সংকট দেখা দিলে সমস্যায় পড়তে হয় চিকিৎসকদের ।
বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মেডিকেল কলেজের ব্লাড ব্যাংকে এখন বিভিন্ন গ্রুপের প্রায় 300 ইউনিট রক্ত রাখা আছে । প্রতিদিন গড়ে রোগীদের জন্য প্রায় 50 থেকে 60 ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয় ৷ তবে আগের তুলনায় রোগীর চাপ কিছুটা কম থাকায় খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না । তবে রোগীর চাপ অল্প হলেও দিনে প্রায় 100 ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয় । লকডাউনের জেরে দেখা দিয়েছে রক্ত সংকট ৷ তবে জুন থেকে অগাস্ট মাস পর্যন্ত কয়েকটি রক্তদান শিবিরের জন্য তারিখ ধার্য করা হয়েছে । ফলে সেই সমস্যা ধীরে ধীরে মিটে যাবে । এমনটাই আশা করছে চিকিৎসকরা ৷
রক্তের জন্য বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত এসেছিলেন অরূপ সরকার নামে এক ব্যক্তি । তিনি বলেন, " তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়ি গুসকরায় । তাঁকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজে ভরতি করা হয়েছে । চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অপারেশন করা হবে তাই রক্ত দিতে হবে । সেইমতো তিনি দু'জন ডোনার নিয়ে এসেছেন । কিন্তু এরপরেও ব্লাড ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে এক ইউনিটের বেশি রক্ত দেওয়া হবে না । " অমিত দে নামে এক ব্যক্তি বলেন, " হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে যে গ্রুপের রক্ত প্রয়োজন সেই গ্রুপের ডোনারই নিয়ে আসতে হবে । ফলে একই গ্রুপের ডোনার খুঁজতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে । আজ আমার A পজ়িটিভ রক্ত তাই আমিই দিয়ে দিয়েছি ৷ কিন্তু ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে হবে ৷ "
এবিষয়ে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেপুটি সুপার ডাঃ কুণাল দে বলেন, " এখন আর সেভাবে রক্ত নিয়ে ব্লাড ব্যাঙ্কে সমস্যা নেই । বিভিন্ন গ্রুপের প্রায় 300 ইউনিট রক্ত মজুত আছে । গড়ে প্রতিদিন প্রায় 50-60 ইউনিট রক্ত প্রয়োজন হচ্ছে । এই জুন থেকে অগাস্ট মাস পর্যন্ত কয়েকটি রক্তদান শিবির করা হবে । সরকারি নিয়ম মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে 30 জনের বেশি রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে না । ফলে যে সমস্যা তৈরি হয়েছিল সেটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে । " বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান সুশান্ত প্রামানিক বলেন, বর্ধমান মেডিকেল কলেজে এখন বিভিন্ন জায়গা থেকে রোগী আসছে ৷ বর্তমানে একটু কম রক্ত থাকলেও ৷ তা পর্যাপ্ত ৷ মানুষ যাতে পরিষেবা ঠিক মতো পরিষেবা পায় আমাদের যতটুকু করণীয় আমরা করছি ৷ " ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, " মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ব্লাড ব্যাঙ্ক সচল আছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী মাথার উপর আছে ৷ রক্ত নিয়ে বর্ধমান জেলার হাসপাতালগুলিতে কোনও সমস্যা নেই । "