ETV Bharat / state

প্রতিমার অর্ডার নেই, অনাহারে মরতে হবে ; বলছেন মৃৎশিল্পীরা - সমস্য়ায় বর্ধমানের মৃৎশিল্পীরা

সামনে দুর্গাপুজো৷ সেই মতো প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু করলেও এখনও অর্ডার পাননি বর্ধমানের মৃৎশিল্পীরা৷ লকডাউনে তীব্র সংকটে তাঁরা৷ বলছেন, এভাবে চললে অনাহারে মরতে হবে৷ সরকারি আর্থিক সাহায্য চাইছেন তাঁরা৷

Bardhaman clay artists are in trouble
সংকটে বর্ধমানের মৃৎশিল্পীরা৷
author img

By

Published : Jun 11, 2020, 8:04 PM IST

Updated : Jun 12, 2020, 7:39 PM IST

বর্ধমান, 11 জুন: অন্য বছর বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যেই শুরু হয়ে যায় মৃৎশিল্পীদের প্রস্তুতি। ভরা আষাঢ়ে রথের দিনে বায়না করে যান বারোয়ারি পুজোর কর্মকর্তারা। শিল্পীরাও পরিকল্পনা শুরু করেন, কীভাবে সাজিয়ে তুলবেন মা দুর্গা, চার ছেলেমেয়ে আর মহিষাসুরকে। অবশ্যই তাদের বাহনদেরও৷ কিন্তু, এবার এখনও তেমন অর্ডার নেই৷ জানাচ্ছেন প্রতিমা শিল্পীরা৷ অন্যদিকে মনসা, অন্নপূর্ণা, শীতলা, গণেশের মতো দেবদেবীদের মূর্তিও লকডাউনের বাজারে বিক্রি হয়নি। গোডাউন-বন্দী হয়ে পড়ে আছে। সব মিলিয়ে মাথায় হাত বর্ধমানের মৃৎশিল্পীদের৷ এমন চললে অনাহারে মরতে হবে, বলছেন কেউ কেউ৷ কেউ বা সরকারের আর্থিক সাহায্য প্রত্যাশী৷

ছোটোখাটো অর্ডারের ব্যস্ততা থাকে সারা বছরই। কোরোনা সংক্রমণের জেরে বদলে গেছে সেই ছবিটা। ফলে ঘরে ঘরে আমআদমি যেমন, কতকটা তেমনভাবেই শিল্পীর গোডাউন-বন্দী মনসা, গণেশ, শীতলা, অন্নপূর্ণারা। যার জেরে চরম আর্থিক সংকটে মৃৎশিল্পীরা। এবার যদি দুর্গাপুজোর বরাতও না মেলে তাহলে আগামী দিনে বড় ক্ষতির মুখোমুখি হবেন, জানাচ্ছেন তাঁরা।

Bardhaman clay artists are in trouble
কাঠামো তৈরি, কিন্তু অর্ডার নেই৷

পূর্ব বর্ধমান জেলাজুড়ে রয়েছে প্রায় আড়াইশো মৃৎশিল্পী পরিবার৷ প্রতিমা শিল্পের উপরেই নির্ভরশীল তারা৷ অথচ, মৃৎশিল্পীদের হাতে এখনও নেই দুর্গাপ্রতিমার বায়না। তৈরি করেও যদি বিক্রি না হয়, এই ভয়ে কেউ কেউ কাঠামো গড়ার কাজ শুরু করেননি। আশাবাদী অনেকে অবশ্য অন্যবারের মতোই ফাল্গুন-চৈত্রেই শেষ করেছেন মাটি লেপার কাজ। তবে, আপাতত ওই অবস্থাতেই পড়ে আছে প্রতিমা।

Bardhaman clay artists are in trouble
সংকটে বর্ধমানের মৃৎশিল্পীরা৷

মৃৎশিল্পীরা জানাচ্ছেন, গড়ে 20 থেকে 22টি দুর্গাপ্রতিমার অর্ডার পেয়ে থাকেন কেউ কেউ৷ অনেকে 30 থেকে 35 টি মূর্তির অর্ডারও পান। ফলে, আগে থেকে খড়-মাটির কাজ শুরু না করলে সময় মতো ডেলিভারি করা সম্ভব হয় না। দুর্গার মতোই আগে থেকে তৈরি করে রাখা হয় কালী মূর্তি। কিন্তু, লকডাউনে পৃথিবীটাই যেন বদলে গেছে! দু' একজন বায়নাদার কাজ দেখে গেছেন৷ কেউ-বা ফোনে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু, ফাইনাল অর্ডার মেলেনি৷ সমীর পাল, সুবীর পালদের মতো বর্ধমানের পরিচিত শিল্পীরা জানান, অনেকে আবার বড় প্রতিমা দেখে ঘাবড়ে যাচ্ছেন। চাইছেন 5 থেকে 7 হাজারের প্রতিমা। যদিও প্রতিবছর সবচেয়ে ছোটো যে দুর্গা প্রতিমা বিক্রি হয়, তার দাম পড়ে 10 হাজার টাকা। অন্যদিকে বড় প্রতিমার দাম 30 থেকে 40 হাজার টাকা মতো হয়। অতএব, কিছু ক্ষেত্রে অর্ডার পেলেও এবার পুজো কমিটিগুলির বাজেট কমেছে, তা আন্দাজ করতে পারছেন মৃৎশিল্পীরা৷ কিন্তু, ইতিমধ্যে বেশ কিছু বড়সড় প্রতিমা গড়ে বসে আছেন তাঁরা৷ সে সব কীভাবে বিক্রি হবে, আদৌ বিক্রি হবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন শিল্পীরা৷ এতখানি অসুবিধায় পড়লেও এখনও পর্যন্ত তাঁদের কেউ সাহায্য করেনি, অভিমান ঝরে পড়ল শিল্পীদের গলায়৷

মৃৎশিল্পী সমীর পাল বলেন, "আমরা মূলত দুর্গাপুজো আর কালীপুজোর জন্য বছরভর অপেক্ষা করি। অন্য বছর এই সময় অর্ডার আসতে শুরু করে। এই বছর এখনও কেউ অর্ডার দেয়নি। এর আগে চৈত্র-বৈশাখ মাসে বাসন্তী পুজো, অন্নপূর্ণা পুজোর জন্য প্রতিমা তৈরি করা হলেও বিক্রি হয়নি৷ সব গোডাউনে পড়ে আছে। এরপর দুর্গাপুজোর প্রতিমার বরাত না পেলে না খেতে পেয়ে মরতে হবে।"

আর এক শিল্পী তারক পাল বলেন, "প্রতিবছর গড়ে 30 থেকে 35 টি প্রতিমার অর্ডার পাই। দুর্গাপুজোর জন্য ফাল্গুন মাসেই কাঠামো তৈরির কাজ শুরু করে দিতে হয়। এবারও সেই মতো কাজ শুরু করি ৷ এরমধ্যে লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় কোনও অর্ডার মেলেনি। কিন্তু, কারিগরদের তো মজুরি দিতে হচ্ছে!"

বর্তমান অবস্থায় সরকারি সাহায্য চাইছেন এই মৃৎশিল্পী ৷ বলেন, "সরকার যদি সাহায্যের হাত না বাড়িয়ে দেয় তাহলে চরম আর্থিক সংকটে পড়ব।"

সংকটে বর্ধমানের মৃৎশিল্পীরা৷

বর্ধমান, 11 জুন: অন্য বছর বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যেই শুরু হয়ে যায় মৃৎশিল্পীদের প্রস্তুতি। ভরা আষাঢ়ে রথের দিনে বায়না করে যান বারোয়ারি পুজোর কর্মকর্তারা। শিল্পীরাও পরিকল্পনা শুরু করেন, কীভাবে সাজিয়ে তুলবেন মা দুর্গা, চার ছেলেমেয়ে আর মহিষাসুরকে। অবশ্যই তাদের বাহনদেরও৷ কিন্তু, এবার এখনও তেমন অর্ডার নেই৷ জানাচ্ছেন প্রতিমা শিল্পীরা৷ অন্যদিকে মনসা, অন্নপূর্ণা, শীতলা, গণেশের মতো দেবদেবীদের মূর্তিও লকডাউনের বাজারে বিক্রি হয়নি। গোডাউন-বন্দী হয়ে পড়ে আছে। সব মিলিয়ে মাথায় হাত বর্ধমানের মৃৎশিল্পীদের৷ এমন চললে অনাহারে মরতে হবে, বলছেন কেউ কেউ৷ কেউ বা সরকারের আর্থিক সাহায্য প্রত্যাশী৷

ছোটোখাটো অর্ডারের ব্যস্ততা থাকে সারা বছরই। কোরোনা সংক্রমণের জেরে বদলে গেছে সেই ছবিটা। ফলে ঘরে ঘরে আমআদমি যেমন, কতকটা তেমনভাবেই শিল্পীর গোডাউন-বন্দী মনসা, গণেশ, শীতলা, অন্নপূর্ণারা। যার জেরে চরম আর্থিক সংকটে মৃৎশিল্পীরা। এবার যদি দুর্গাপুজোর বরাতও না মেলে তাহলে আগামী দিনে বড় ক্ষতির মুখোমুখি হবেন, জানাচ্ছেন তাঁরা।

Bardhaman clay artists are in trouble
কাঠামো তৈরি, কিন্তু অর্ডার নেই৷

পূর্ব বর্ধমান জেলাজুড়ে রয়েছে প্রায় আড়াইশো মৃৎশিল্পী পরিবার৷ প্রতিমা শিল্পের উপরেই নির্ভরশীল তারা৷ অথচ, মৃৎশিল্পীদের হাতে এখনও নেই দুর্গাপ্রতিমার বায়না। তৈরি করেও যদি বিক্রি না হয়, এই ভয়ে কেউ কেউ কাঠামো গড়ার কাজ শুরু করেননি। আশাবাদী অনেকে অবশ্য অন্যবারের মতোই ফাল্গুন-চৈত্রেই শেষ করেছেন মাটি লেপার কাজ। তবে, আপাতত ওই অবস্থাতেই পড়ে আছে প্রতিমা।

Bardhaman clay artists are in trouble
সংকটে বর্ধমানের মৃৎশিল্পীরা৷

মৃৎশিল্পীরা জানাচ্ছেন, গড়ে 20 থেকে 22টি দুর্গাপ্রতিমার অর্ডার পেয়ে থাকেন কেউ কেউ৷ অনেকে 30 থেকে 35 টি মূর্তির অর্ডারও পান। ফলে, আগে থেকে খড়-মাটির কাজ শুরু না করলে সময় মতো ডেলিভারি করা সম্ভব হয় না। দুর্গার মতোই আগে থেকে তৈরি করে রাখা হয় কালী মূর্তি। কিন্তু, লকডাউনে পৃথিবীটাই যেন বদলে গেছে! দু' একজন বায়নাদার কাজ দেখে গেছেন৷ কেউ-বা ফোনে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু, ফাইনাল অর্ডার মেলেনি৷ সমীর পাল, সুবীর পালদের মতো বর্ধমানের পরিচিত শিল্পীরা জানান, অনেকে আবার বড় প্রতিমা দেখে ঘাবড়ে যাচ্ছেন। চাইছেন 5 থেকে 7 হাজারের প্রতিমা। যদিও প্রতিবছর সবচেয়ে ছোটো যে দুর্গা প্রতিমা বিক্রি হয়, তার দাম পড়ে 10 হাজার টাকা। অন্যদিকে বড় প্রতিমার দাম 30 থেকে 40 হাজার টাকা মতো হয়। অতএব, কিছু ক্ষেত্রে অর্ডার পেলেও এবার পুজো কমিটিগুলির বাজেট কমেছে, তা আন্দাজ করতে পারছেন মৃৎশিল্পীরা৷ কিন্তু, ইতিমধ্যে বেশ কিছু বড়সড় প্রতিমা গড়ে বসে আছেন তাঁরা৷ সে সব কীভাবে বিক্রি হবে, আদৌ বিক্রি হবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন শিল্পীরা৷ এতখানি অসুবিধায় পড়লেও এখনও পর্যন্ত তাঁদের কেউ সাহায্য করেনি, অভিমান ঝরে পড়ল শিল্পীদের গলায়৷

মৃৎশিল্পী সমীর পাল বলেন, "আমরা মূলত দুর্গাপুজো আর কালীপুজোর জন্য বছরভর অপেক্ষা করি। অন্য বছর এই সময় অর্ডার আসতে শুরু করে। এই বছর এখনও কেউ অর্ডার দেয়নি। এর আগে চৈত্র-বৈশাখ মাসে বাসন্তী পুজো, অন্নপূর্ণা পুজোর জন্য প্রতিমা তৈরি করা হলেও বিক্রি হয়নি৷ সব গোডাউনে পড়ে আছে। এরপর দুর্গাপুজোর প্রতিমার বরাত না পেলে না খেতে পেয়ে মরতে হবে।"

আর এক শিল্পী তারক পাল বলেন, "প্রতিবছর গড়ে 30 থেকে 35 টি প্রতিমার অর্ডার পাই। দুর্গাপুজোর জন্য ফাল্গুন মাসেই কাঠামো তৈরির কাজ শুরু করে দিতে হয়। এবারও সেই মতো কাজ শুরু করি ৷ এরমধ্যে লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় কোনও অর্ডার মেলেনি। কিন্তু, কারিগরদের তো মজুরি দিতে হচ্ছে!"

বর্তমান অবস্থায় সরকারি সাহায্য চাইছেন এই মৃৎশিল্পী ৷ বলেন, "সরকার যদি সাহায্যের হাত না বাড়িয়ে দেয় তাহলে চরম আর্থিক সংকটে পড়ব।"

সংকটে বর্ধমানের মৃৎশিল্পীরা৷
Last Updated : Jun 12, 2020, 7:39 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.