বর্ধমান, 20 জানুয়ারি : কোলে তিনদিনের মেয়ে । মুখে হাসি । আবার, পরক্ষণেই চোখে জল । কাঁদতে কাঁদতে জানালেন, পুলিশের কাছে তাঁর কৃতজ্ঞতার কথা । বললেন, "আমি সারাজীবন পুলিশের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব ।"
রায়না থানার সিপ্টা এলাকার বাসিন্দা রিমা মালিক । অভাবের সংসার । সরকারি অনুদানের টাকা পেতে গিয়ে শিশুচোরের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছিলেন । গতকাল সদ্যোজাত কন্যাসন্তানকে নিয়ে চলে গেছিলেন অনাময় হাসপাতালে । পরে সেখান থেকেই চুরি হয়ে যায় রিমার তিন দিনের কন্যাসন্তান ।
আসলে কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ার পর বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রিমার সঙ্গে রিয়া ব্যানার্জি নামে এক মহিলার আলাপ হয় । সে রিমাকে জানায়, কন্যাসন্তানের জন্ম দিলে সরকারের তরফে 6 হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে । কিন্তু সেই টাকা নিতে যেতে হবে অনাময় হাসপাতালে । রিয়ার কথায় বিশ্বাস করে তিনদিনের মেয়েকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে অনাময় হাসপাতালে যান রিমা । সেখানে বিভিন্ন কাগজ দেখার নাম করে রিমার হাত থেকে শিশুটিকে নেয় রিয়া । জানায়, শিশুটিকে নিয়ে রিমার স্বামীর কাছে যাচ্ছে রিয়া । পরে অনেকক্ষণ রিয়াকে দেখতে না পেয়ে স্বামীকে ফোন করেন রিমা । রিমাকে তাঁর স্বামী জানান, মেয়ে তাঁর কাছে নেই । এরপরই তাঁরা পুরো বিষয়টি অনাময় হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ ও পুলিশকে জানান । তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ ।
এই সংক্রান্ত আরও খবর : টাকার প্রলোভন দেখিয়ে হাসপাতাল থেকে চুরি শিশু
গতরাতে কাঁকসা থানায় এ জ়োন ফাঁড়ি থেকে ফোন যায় । বলা হয়, দক্ষিণবঙ্গীয় রাষ্ট্রীয় পরিবহনের একটি বাসে দুর্গাপুর যাওয়ার পথে একটি সন্দেহজনক মহিলাকে দেখা গেছে । তার কাছে একটি শিশুকন্যাও রয়েছে । কাঁকসা থানার পুলিশ গিয়ে ওই মহিলার থেকে কিছু কাগজপত্র দেখতে চায় । মহিলা বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কাগজ দেখালে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয় । পরে পুলিশ জানতে পারে, ওই মহিলাও অন্তঃসত্ত্বা ছিল । কিন্তু তার সন্তান গর্ভেই মারা যায় । এতেই সন্দেহ হয় পুলিশের । তারা আজ সকালে বেনাচিতি সত্যজিৎ পল্লিতে ওই মহিলার বাড়িতে যায় । সেখান থেকে ওই মহিলা ও তার স্বামীকে আটক করে । একইসঙ্গে শিশুটিকেও উদ্ধার করে নিয়ে আসে । পুলিশ সূত্রে খবর, ওই মহিলার নাম মধুমিতা রায় ।
এই সংক্রান্ত আরও খবর : অনাময় হাসপাতালে শিশু চুরির অভিযোগে দুর্গাপুরে আটক দম্পতি
কাঁকসা থানার পুলিশ পরে বর্ধমান থানার পুলিশের হাতে শিশুটিকে তুলে দেয় । তারপর বর্ধমান থানার পুলিশ শিশুটির মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে । বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে শিশুটির কিছু পরীক্ষা করানো হয় । একইসঙ্গে হাসপাতালের সুপারকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর শিশুটিকে রিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয় ।
নিজের সন্তানকে হাতে পেয়ে আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়েন রিয়া । কাঁদতে কাঁদতে পুলিশকে ধন্যবাদ জানান । বলেন, "আমি সারাজীবন পুলিশের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব৷ "