কালনা, 11 নভেম্বর : গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনায় 12 জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল আদালত ৷
ছেলেধরা গুজবে দু'বছর আগে কালনায় গণপিটুনিতে দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল ৷ সেই মামলায় 12 জনের যাবজ্জীবন দিল কালনা মহকুমা আদালত । আজ এই রায় দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক তপন কুমার মণ্ডল ।
সাজাপ্রাপ্তরা হলেন গণেশ দাস, বাবু সরকার, তাপস রায় ওরফে পাখি, নাজির শেখ, প্রীতম কর্মকার ওরফে ডমকা, মিনতি হালদার, কুন্তল দেবনাথ, তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজু পাত্র, সাগর বাছার, সুমন মণ্ডল ওরফে কানু এবং সমরেশ হালদার । প্রত্যেকের বাড়ি কালনা এলাকায় ।
আদালত সূত্রে জানা যায় যে, 2017 সালের 20 জানুয়ারি কালনার বারুইপাড়া এলাকায় ফলের বাগানে কীটনাশক স্প্রে করতে আসেন নদিয়ার হাবিবপুরের পাঁচ জনের একটি দল । তাদের সঙ্গে ছোট-ছোট ব্যাগে কীটনাশকের বোতল ছিল । আচমকা তাদের দেখে কয়েকজন ছেলেধরা সন্দেহে চেঁচামেচি শুরু করে । তাঁরা বারবার নিজেদের পরিচয় জানালেও কাজ হয়নি । উলটে পাঁচ জনকে বেধড়ক মারধর করা হয় । খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় ।
এই ঘটনায় নারায়ণচন্দ্র দাস ও অনিল বিশ্বাস নামে দু’জনের মৃত্যু হয় । বাকি তিন জন বেশ কয়েকদিন পর চিকিৎসায় সুস্থ হন । এই ঘটনায় মৃত অনিল বিশ্বাসের ছেলে রাজু বিশ্বাসের অভিযোগের ভিত্তিতে কালনা থানার পুলিশ 26 জনের নামে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে ৷ 20 জনকে গ্রেপ্তার করা হয় । ধৃতদের মধ্যে ছিলেন এক মহিলা ও এক নাবালক ।
পুলিশ স্থানীয় CCTV ক্যামেরার ফুটেজ এবং সেই সময় সোশাল মিডিয়ায় এই ঘটনার ভাইরাল হওয়া ভিডিয়ো সংগ্রহ করে ফরেনসিক পরীক্ষা করে । তদন্তকারী অফিসার হাসান পারভেজ 90 দিনের মধ্যে 26 জনের নামে চার্জশিট জমা দেন । জখম তিনজন পরে সুস্থ হয়ে ধৃতদের কয়েকজনকে TI প্যারেডে শনাক্ত করেন । এই মামলায় 57 জন সাক্ষ্য দেন । শুক্রবার কালনা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক তপন কুমার মণ্ডল 12 জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন ও সাতজনকে বেকসুর খালাস করে দেন । কার্তিক মণ্ডল নামে একজনের বর্ধমান জুভেনাইল কোর্টে বিচার চলছে ।
এই মামলার সরকারি আইনজীবী বিকাশ রায় বলেন, নিজেদের পরিচয় দেওয়া সত্ত্বেও ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে দু’জনের মৃত্যু হয় । বিচারক শুক্রবার 12 জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন ও সোমবার তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করেন ।