বর্ধমান, 12 এপ্রিল: চাকরি করতে বেঙ্গালুরু যেতে চাওয়ায় সমকামী বন্ধুকে খুন করার অভিযোগ উঠল এক তরুণের বিরুদ্ধে ৷ পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড়ে ঘটেছে এই ঘটনা ৷ পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে ৷
আইটি পাশ করার পরে বেঙ্গালুরুতে চাকরির চেষ্টা করছিল 19 বছরের তন্ময় মালিক । কিন্তু করোনার প্রতিরোধের জন্য একটা টিকা তার নেওয়া হয়নি । ফলে সেই টিকা নিতে সোমবার সে চন্দনগর থেকে শক্তিগড়ের বাড়িতে আসে । তবে দিনের শেষে সন্ধে নাগাদ চন্দননগর ফেরার পথে শক্তিগড়ের হীরাগাছি এলাকায় সে খুন হয় বলে অভিযোগ ৷ তার রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা । ঘটনার পর থেকে খোঁজ মেলেনি তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু পিন্টু মুর্মুর । এমনিতেই তার বন্ধুর সংখ্যা ছিল কম । তাহলে এমন কী ঘটনা ঘটল যার জন্য তাকে খুন হতে হল ? পুলিশ পরে অভিযুক্ত পিন্টু মুর্মুকে গ্রেফতার করেছে ।
শক্তিগড়ে তন্ময় মালিকের বাড়ি হলেও সে তার মায়ের কাছে চন্দননগরে থাকত । আইটি পাশ করার পরে সে বেঙ্গালুরুতে একটা চাকরি পেয়েছিল । 19 এপ্রিল তার বেঙ্গালুরুতে যাওয়ার কথা ছিল । সে কথা জানত তন্ময়ের বন্ধু পিন্টু মুর্মু । তন্ময়ের সঙ্গে পিন্টুর খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে জানে এলাকার সকলেই । তন্ময় চন্দননগর থেকে শক্তিগড়ে ফেরার পরে বেশিরভাগ সময়ই পিন্টুর সঙ্গে দিন কাটাত । যেটা তন্ময়ের পরিবার ভালোভাবে দেখত না । কিন্তু সময় সুযোগ পেলেই তন্ময় চন্দননগর থেকে শক্তিগড়ে চলে আসত বলে জানা গিয়েছে ।
এ দিকে, আইটি পাশ করার পরে চাকরির চেষ্টা করছিল তন্ময় । বেঙ্গালুরুতে সে একটা চাকরি পায় । সেইমতো 19 এপ্রিল তার বেঙ্গালুরু যাওয়ার কথা ছিল । এ দিকে পিন্টু বিষয়টি জানতে পারার পরে যাতে তন্ময় না যায় সেইজন্য সে বাধা দিতে থাকে । বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয় । এরই মধ্যে বেঙ্গালুরু যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দেয় তন্ময় । কিন্তু করোনা টিকা নিতে সে সোমবার শক্তিগড়ের বাড়িতে আসে ।
বিকেল নাগাদ সে ট্রেন ধরার জন্য তার বাবার বাইকে চেপে বের হয় । পথে হীরাগাছির কাছে রেলগেটে সে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করবে বলে বাইক থেকে নেমে পড়ে । এ দিকে হীরাগাছির একটা ফাঁকা মাঠ এলাকায় পিন্টুর সঙ্গে দেখা করার পরে ফের দুজনের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয় বলে জানা গিয়েছে । হঠাৎ হাঁসুয়া দিয়ে পিন্টু তন্ময়কে কোপাতে শুরু করে বলে অভিযোগ । এরপর তার গলায় জামার ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে বলে অভিযোগ ।
এ দিকে ওই সময় তন্ময় নিজেকে বাঁচানোর জন্য বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুরু করে ৷ সেই আওয়াজ শুনে এক ব্যক্তি সেদিকে ছুটে যায় । তিনি গিয়ে দেখেন তন্ময়ের রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে । এরপর তদন্তে নেমে শক্তিগড় থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটা সাইকেল উদ্ধার করে । ওই সাইকেলের সূত্র ধরে পিন্টুকে কালনা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ । পুলিশ জানতে পারে দুজনের মধ্যে সমকামিতার একটা সম্পর্ক ছিল । যে কারণে পিন্টু চায়নি তন্ময় বেঙ্গালুরুতে চাকরিতে যোগ দিক । তন্ময় চলে যেতে চাওয়ায় তাকে পিন্টু খুন করে বলে অভিযোগ ।
জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, শক্তিগড়ে এক যুবককে খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে । তদন্ত করতে গিয়ে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত যুবকের সঙ্গে তন্ময়ের একটা ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল । যে কারণে ওই যুবক তাকে খুন করে বলে মনে করা হচ্ছে । অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে আসল কারণ জানা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি ।
আরও পড়ুন: শক্তিগড়ে উদ্ধার যুবকের রক্তাক্ত দেহ