বর্ধমান, 21 সেপ্টেম্বর: প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো বর্ধমান রাজবাড়ির দুর্গাপুজো (Durga Puja 2022) ৷ কিন্তু, এই পুজোতে কোনও মূর্তি বা প্রতিমার আরাধনা হয় না ৷ হয় পটচিত্রের দুর্গার আরাধনা ৷ যার নাম ‘পটেশ্বরী দুর্গা’ (Burdwan Rajbari Pateshwari Durga) ৷ আর এর পিছনে রয়েছে এক ইতিহাস ৷ শোনা যায়, সেই সময় বর্ধমানের রাজা মহাতাব চাঁদ (Mahataba Chand) এই পুজো শুরু করেছিলেন ৷ রাজবাড়িতে আগে দুর্গাপুজোর চল ছিল না ৷ রাজবাড়ির কুলদেবতা দেবী চণ্ডীকা ৷ শোনা যায়, রাজা মহাতাব চাঁদের ইচ্ছে হয়েছিল দুর্গাপুজো করার ৷ তিনি সেকথা কুল পুরোহিতকে জানিয়েছিলেন ৷ যেহেতু, রাজবাড়িতে নারায়ণ শিলা প্রতিষ্ঠিত আছে, তাই রাজ পুরোহিত নিদান দিয়েছিলেন দুর্গাপুজো করা যেতে পারে ৷ কিন্তু, মূর্তি পুজো করা যাবে না ৷ তাই পটচিত্রে আঁকা দুর্গার পুজো শুরু করেন রাজা মহাতাব চাঁদ ৷ সেই সময় থেকেই বর্ধমান রাজবাড়িতে শুরু হয় ‘পটেশ্বরী দুর্গা’র আরাধনা ৷
প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের প্রাচীন এই পটেশ্বরী দুর্গা পুজো শুরু হয় প্রতিপদ থেকে, চলে নবমী তিথি পর্যন্ত ৷ প্রথমে বর্ধমান রাজবাড়ি অর্থাৎ বর্তমানে যেখানে গার্লস কলেজ আছে, সেখানে ছিল বর্ধমান রাজবাড়ির দুর্গামন্দির ৷ সেই মন্দিরেই পুজো শুরু হয়েছিল ৷ পরে মন্দির নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পটেশ্বরী দুর্গাকে নিয়ে আসা হয় লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে ৷ প্রথম দিকে দেবীকে কৃষ্ণসায়রে বিসর্জন দেওয়া হত ৷ পরে বিসর্জন বন্ধ হয়ে যায় ৷ তার পরিবর্তে 12 বছর অন্তর অঙ্গরাগ (পটচিত্রকে নতুন করে আঁকা) করা হয় ৷ প্রতিপদ থেকে 9 দিন ধরে পুজোর সময় চলে গুজরাতের লোকনৃত্য ডান্ডিয়া ৷ আগে দুর্গাপুজোয় 52 রকমের ভোগ নিবেদন করা হত ৷ দেওয়া হত সুপারি বলি ৷ তবে, এখন আর সেই বলি প্রথা নেই ৷
আরও পড়ুন: পার্থর অনুপস্থিতিতেও খামতি নেই নাকতলা উদয়ন সংঘ ও দেবদারু ফটকের পুজোর আয়োজনে
কীভাবে যাওয়া যাবে বর্ধমানের লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে ?
বর্ধমান স্টেশন থেকে দক্ষিণ দিক বরাবর জিটি রোড ধরে প্রায় 2 কিলোমিটার গেলেই মিলবে কার্জন গেট ৷ সেখান থেকে পশ্চিম দিকে প্রায় তিন কিলোমিটার সোজা গেলেই মিলবে সোনাপট্টি ৷ সেই সোনাপট্টি পাশেই রাজকাছারী বাড়ি ৷ ওই বাড়ির পাশেই আছে শ্রী শ্রী লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দির ৷ লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে প্রবেশ করলে দেখা যাবে ধ্বংসপ্রায় রাশ মঞ্চ ৷ তার পর রয়েছে বিশাল নাট মঞ্চ ৷ সেখান থেকে ভিতরে প্রবেশ করলে দেখা যাবে ‘পটেশ্বরী দুর্গা’ ৷