বর্ধমান, 13 জুলাই: একজন খুনের ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ৷ অপরজন ধর্ষণের মামলায় আট বছরের সাজাপ্রাপ্ত ৷ বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে দুজনের মধ্যে আলাপ-পরিচয় । এরপর ধীরে ধীরে মন দেওয়া নেওয়া । কিন্তু পরিণতি কী হবে তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন দুজনেই । শেষ পর্যন্ত ব্যারাকপুরের পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি তাঁদের পাশে দাঁড়ানোয় চার হাত এক হল হাসিম ও সাহানারার । আপাতত পাঁচ দিনের প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বিয়ে করে তাঁরা বীরভূমে । আর তিন দিন পরেই তাঁদের আবারও ফিরতে হবে সংশোধনাগারে ৷
ধর্ষণে দণ্ডপ্রাপ্ত বর: চন্দননগরে ঠিকাদারী কাজ করতে এসেছিলেন অসমের দরং জেলার বাসিন্দা আবদুল হাসিম । সেখানে একটি ধর্ষণের মামলায় তাঁর নাম জড়ায় । পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে । আদালতে আবদুলকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় । দেওয়া হয় আট বছরের কারাদণ্ড ৷
খুনে হাজতবাসী কনে: অন্যদিকে, বীরভূমের নানুরের বালিগুনি এলাকার বাসিন্দা সাহানারা খাতুন । বছর ছয়েক আগে তাঁর জামাইবাবুকে খুনের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে ৷ সাহানারা, তাঁর মা ও দিদির সঙ্গে যাবজ্জীবনের কারাদণ্ড পান ৷
সংশোধনাগারেই আলাপ-প্রেম: দুজনেই সংশোধনাগারে থাকার কারণে তাঁদের পরিবারের লোকজন তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন । সেই সময় হাসিমের সঙ্গে সাহানারার আলাপ হয় । কিন্তু ওইটুকুই । সংশোধনাগারে তাঁদের মধ্যে আলাদা করে আর দেখা সাক্ষাতের সুযোগ নেই । দেখতে দেখতে তিন বছর পেরিয়ে যায় ৷ আর একটু একটু করে সম্পর্ক গভীর হতে থাকে দুই বন্দির ৷ তাঁদের পরিবারের লোকেরাও জানতে পারেন তাঁদের ভালোবাসার কথা ৷
আরও পড়ুন: প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে যোগার মাধ্যমে বুদ্ধের জীবনী, তুলে ধরবেন 23 জন বন্দি
প্যারোলে হল বিয়ে: পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির সদস্য সামসুদ্দিন শেখ তাঁর বন্ধুর সঙ্গে সংশোধনাগারে দেখা করতে আসতেন । তাঁর বন্ধুর মাধ্যমেই তিনি জানতে পারেন হাসিম ও সাহানারার প্রেম কাহিনি । কীভাবে তাঁদের বিয়ের ব্যবস্থা করা যায়, সেই বিষয়ে তিনি তাঁদের সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করেন । সংস্থার পক্ষ থেকে রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি ও জেল সুপার সুদীপ বসুর কাছে লিখিতভাবে আবেদন করা হয় । অনুমতি দেন কারামন্ত্রী । বিয়ের জন্য পাঁচ দিনের প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয় দু'জনকে । এরপর মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রামে আইনিভাবে বিয়ে হয় হাসিম ও সাহানারার ।
মুক্তির অপেক্ষায় নবদম্পতি: সাহানারা খাতুন বলেন, "আমি ছয় বছর জেলে আছি । একটা খুনের ঘটনা ঘটে । সেই খুনের ঘটনায় আমাকে ফাঁসানো হয় । যাবজ্জীবন হয়েছে আমার । জানি না আর কতদিন জেলে থাকতে হবে । আমাদের পাঁচ দিন ছুটি দিয়েছে । আমরা যখন জেল থেকে বেরিয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরব, তখন আমরাও আর পাঁচজন মানুষের মতো সংসার করতে চাই ।"
আবদুল হাসিম বলেন, "আমরা দুজনেই বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি । যখন আমাদের বাড়ির লোকজন দেখা করতে আসতেন, সেখানেই কথা বলার সময় আমাদের দুজনের মধ্যে আলাপ হয় । এরপর আমাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে । আমরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিই । বিয়ের পরে যখন আমাদের সাজার মেয়াদ শেষ হবে, তখন আমরাও সমাজে অন্যান্যদের মতো ঘর বাঁধতে চাই । আর যাতে কোনও সমস্যায় পড়তে না হয়, সেই প্রার্থনাই করছি ।"
বিয়েতে সহযোগী অধিকার রক্ষা সংগঠন: পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির কুসুমগ্রাম শাখার প্রধান সামসুদ্দিন শেখ বলেন, "আমার এক বন্ধু বর্ধমান জেলা সংশোধনাগারে বন্দি ৷ তাঁর সঙ্গে মাঝেমধ্যে দেখা করতে যেতাম । তাঁর কাছ থেকে জানতে পারি এঁদের দুজনের কথা । বিষয়টা নিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজ্যের কারামন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয় ৷ কারামন্ত্রী অনুমতি দিলে প্যারোলে দুজনকে পাঁচ দিনের ছুটি দেওয়া হয় । এরপর কুসুমগ্রামে তাঁদের বিয়ে দেওয়া হয় । তাঁদের বিয়ে দিতে পেরে আমি খুব খুশি ।"
বিয়ের পর আপাতত এই যুগল বীরভূমের নানুরে সাহানারার বাড়িতে থাকবেন । 16 জুলাই তাঁদের ফিরতে হবে সংশোধনাগারের চার দেওয়ালে । শুরু হবে মুক্তির অপেক্ষায় দিন গোনা ।