কালনা, 3 জুন : বিদ্যুতের মিটার দেখার নাম করে ঘরে ঢুকে একের পর এক খুন । টার্গেট মহিলারা । ধরন প্রায় একইরকম । শ্বাসরোধ করে খুন করার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত । খুনের সময়ও প্রায় এক । দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে । 12 জনকে খুনের চেষ্টা । মৃত্যু হয় 6 জনের । শেষের দিকে খুনের পর মৃতদেহকে ধর্ষণের চেষ্টাও করত । গতকাল সিভিক ভলান্টিয়ারের হাতে ধরা পড়ে অভিযুক্ত কামারুজ্জামান সরকার ।
জেরা করতে পুরো বিষয়টি স্বীকার করেছে সে । জেরায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য । পুলিশকে সে জানিয়েছে, দুপুরের পর থেকেই তার শরীরে কেমন একটা হত । অস্বস্তি করত । কাউকে খুন করতে ইচ্ছে করত । তাই সে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ত খুন করতে । শুধু পূর্ব বর্ধমান নয়, এই সিরিয়াল কিলারের শিকার হয়েছেন হুগলির পান্ডুয়া ও বলাগড়ের মহিলারাও ।
ডিসেম্বর 2018 । একের পর এক খুন হতে থাকে মহিলারা । সবক্ষেত্রেই ঘরের দরজা খোলা । ভিতরে পড়ে দেহ । পাশে চেন । যে চেন দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হত । একের পর এক এমন খুনের অভিযোগ জমা পড়তে থাকে এলাকার বিভিন্ন থানায় । খুনের চেষ্টা হয়েছে এমনও অভিযোগ জমা পড়তে থাকে । ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ বুঝতে পারে এর নেপথ্যে রয়েছে কোনও একজন ব্যক্তি । এক মহিলার বয়ান অনুযায়ী স্কেচ করা হয় এই সিরিয়াল কিলারের । শুরু হয় তদন্ত । পুলিশ নামে নাকা চেকিংয়ে । কিছুদিন আগে এক মহিলার বাড়িতে একইভাবে খুন করতে যায় সে । কিন্তু বাড়িতে লোক থাকায় ফিরে আসে । ফের গতকাল সে আরেকটি খুন করতে যায় মেরারির জেদিপুরে কিন্তু সেখানেও লোক থাকায় ফিরে আসে । ফিরতে গিয়েই CCTV ফুটেজে ধরা পড়ে তার ছবি । লাল বাইক । মাথায় হেলমেট । সঙ্গে একটা ব্যাগ । রাস্তায় ধরে ফেলে এক সিভিক ভলান্টিয়ার । ওই ব্যাগ থেকে মেলে চেন, লোহার রড ।
জেরায় ধৃত জানিয়েছে, প্রথমে দু-একজনকে শুধু খুন করে সে । পরের খুনগুলি করার পর মৃতদেহকে রড দিয়ে আঘাত করত । এমনকী, মৃতদেহকে ধর্ষণের চেষ্টা করত ।
কী ভাবে করত খুন ?
ইলেকট্রিক মিটার দেখতে গিয়ে সে খুন করত । দেখে নিত বাড়িতে শিকার ছাড়া আর কেউ আছে কি না । তারপর চালাত অপারেশন । কেন খুন করত ? জেরার পর পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, কোনও মহিলার প্রতি আক্রোশ থেকেই সে এই কাজ করত । ধর্ষণের চেষ্টার কথা স্বীকার করলেও প্রমাণ না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে ধন্দে পুলিশ । কালনা মহকুমা আদালতে তোলা হলে 12 দিনের পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দেন বিচারক । জেরার সময় বর্ধমান জেলা পুলিশের পাশাপাশি থাকছে হুগলি জেলা পুলিশের আধিকারিকরাও । অন্যদিকে, জেরার পাশাপশি এই সিরিয়াল কিলারকে খুনের স্থানে নিয়ে গিয়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ ।