বর্ধমান, 2 সেপ্টেম্বর : ঘরবন্দি জীবনে ডাল-ভাতের একঘেয়েমি কাটাতে তেঁতুলগোলা জল ও আলুমাখা দিয়ে বানানো ফুচকা আবালবৃদ্ধবনিতা সকলকেই টানে । তবে আমরা সাধারণত জল ফুচকা, দই ফুচকার সঙ্গেই বেশি পরিচিত ৷ কিন্তু সেই ফুচকা যদি হয় বাহুবলী, বিরিয়ানি, পিৎজা কিংবা ফায়ার ফুচকা ৷ বিশ্বাস না হলেও এটাই সত্যি ৷ এই রকম 37টি বিভিন্ন স্বাদের ফুচকা বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বর্ধমানের কাঞ্চননগরের বাসিন্দা পলাশ পাল ।
কাঞ্চননগরের কঙ্কালেশ্বরী কালীবাড়ি সংলগ্ন মাঠে পলাশ পালের ফুচকার স্টল । বিকেল গড়ালেই দেখা যাবে একটা ভ্যানে করে ফুচকা ভর্তি কাঁচের বাক্স, একটা রঙিন ছাতা, বিভিন্ন স্বাদের ফুচকার নামের বিশাল তালিকা আর অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে কালীবাড়ির মাঠে চলেছেন পলাশ পাল । ভ্যান থেকে জিনিসপত্র নামিয়ে সাজাতে না সাজাতেই খরিদ্দার এসে হাজির । কেউ বা আবার বলেন, যায় সাজিয়ে নাও ঘুরে আসছি ।
শুরু করেছিলেন ফুচকার ব্যবসা দিয়েই ৷ তবে মাঝপথে ট্রেনে হকারি করার সময় একটা দুর্ঘটনায় পায়ের জোর হারান ৷ তারপর ফের শুরু করেছেন ফুচকা বিক্রি ৷ তবে এবার পুরো নতুন আঙ্গিকে 37 রকমের ফুচকার ডালি নিয়ে চমকে দিয়েছেন সবাইকে ৷
আরও পড়ুন : লিচু, আম থেকে ফুচকা; হরেক স্বাদের গরম চা...
কী আছে 37 রকমের সেই ফুচকার তালিকায় ?
জল, দই ও স্পেশাল ফুচকা তো আছেই ৷ তার সঙ্গে রয়েছে মোমো ফুচকা, চিকেন ফুচকা, মটন ফুচকা, ফিস ফুচকা, পনির ফুচকা, চিজ ফুচকা, চকোলেট ফুচকা, বাহুবলী ফুচকা, ভর্তা ফুচকা, আইসক্রিম ফুচকা, ড্রাই ফ্রুট ফুচকা, ফায়ার ফুচকা, খাট্টা মিঠা ফুচকা, জেলি ফুচকা, রাবড়ি ফুচকা, পেপসি ফুচকা, পাপড়ি চাট, বিরিয়ানি ফুচকা, পিৎজা ফুচকা, রাজশাহী ফুচকা, ম্যাংগো ফুচকা, লিচু ফুচকা, স্ট্রবেরি ফুচকা, বাটার স্কচ ফুচকা-সহ আরও একাধিক ভিন্ন স্বাদের ফুচকা ইচ্ছে হলেই খেতে পারেন আপনিও ।
তবে সুবিধা হবে যদি আপনি যাওয়ার আগে ফোন করে নেন পলাশবাবুকে ৷ প্রতিদিন 37 রকমের ফুচকা না পেলেও 20 রকমের তো পাবেনই ৷ আর ফোন করে গেলে সেদিন কী কী ধরনের ফুচকা পাবেন তা আগেই জেনে নিতে পারবেন এমনটাই জানালেন ফুচকা বিক্রেতা ৷
তাঁর তৈরি বিভিন্ন ধরনের ফুচকার বিষয়ে জানালেন পলাশবাবু ৷ পিৎজা ফুচকাতে পাউরুটি ছাড়া যাবতীয় উপকরণ দেওয়া হয় । 6 পিসের এক প্লেটের দাম 50 টাকা । বিরিয়ানি ফুচকাতে প্রতি প্লেটে 200 গ্রাম চিকেন থাকে ৷ 6টি ফুচকার এক প্লেটের দাম 80 টাকা । ডাবের জল আর সেই অনুযায়ী মশলা দিয়ে থাকছে ডাব ফুচকা । যার 6 পিসের এক প্লেটের দাম 80 টাকা । জল ফুচকার 5 পিসের দাম 10 টাকা । অন্যান্য সব ফুচকার দাম 20 থেকে 200 টাকার মধ্যে । রয়েছে মটন ফুচকাও ৷ যার 6 পিসের এক প্লেটের দাম 200 টাকা ।
আরও পড়ুন : সংক্রমণের ভয়ে নেই খদ্দের, মাথায় হাত ফুচকা বিক্রেতাদের
অন্যদিকে বাহুবলী ফুচকা দু পিস-সহ এক প্লেটের দাম 60 টাকা । রাজশাহী ফুচকা আলাদা মাপের তৈরি করা হয় । ওই ফুচকাতে চিকেন ও ডিম-সহ অন্যান্য সামগ্রী থাকে । এক প্লেটে দুটি ফুচকা থাকছে, দাম 60 টাকা । পেপসি ফুচকার পুর দই-সহ অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হয় । ফুচকা প্লেটে দেওয়ার পর গ্লাসে কোল্ড ড্রিঙ্কস দেওয়া হয় । ফুচকা খাওয়ার সময় নিজের মতো কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে খেতে হবে ।
ফুচকা বিক্রেতা পলাশ পাল এই বিষয়ে বলেন, "আমি আগে রেলে হকারি করতাম । একটা দুর্ঘটনায় আমার পা ভেঙে যায় । পায়ে প্লেট বসাতে হয় । তারপর ফুচকা বিক্রি করতে শুরু করি । প্রথম প্রথম জল ও দই ফুচকা বিক্রি করতাম । পরে চিকেন ফুচকা বিক্রি করতে শুরু করি । দেখলাম মানুষ খুব পছন্দ করছে । তখন থেকেই নতুন আইটেমের কথা ভাবতে শুরু করি । যেহেতু প্রতিদিন সব আইটেম আনা সম্ভব নয় তাই অনেকেই ফোন করে জেনে নেন আজ কী কী ফুচকা থাকছে ৷ এছাড়া আমি যেহেতু অসুস্থ তাই প্রতিদিন আসতে পারি না ৷ সকলের খুব ভাল সাড়া পাচ্ছি ৷ এটাকে আরও বড় করে গড়ে তোলার স্বপ্ন আছে ৷"
আরও পড়ুন : লকডাউনে বন্ধ ব্যবসা, আশঙ্কায় কৃষ্ণনগরের ফুচকা ব্যবসায়ীরা