মেদিনীপুর, 4 নভেম্বর: বছরখানেক আগে শিকল থেকে মুক্তি ঘটেছিল বিশেষ ভাবে সক্ষম শাহাজানের (Govt Apathy Hits Youth)৷ কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ফের টাকার অভাবে শিকলে বাঁধা পড়ার উপক্রম হয়েছে 22 বছরের যুবকের । তাঁর অ্যাকাউন্টে দু-এক মাস টাকা ঢুকলেও প্রশাসনের গাফিলতিতে আর তা মেলেনি ৷ জেলা (West Midnapore News) প্রশাসনের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছে পরিবার । তাঁদের আশংকা, খাওয়াতে না পেরে হয়তো আবারও শিকলে বাঁধতে হতে পারে ছেলেকে ।
ঠিক বছরখানেক আগে ডিসেম্বর মাসে ইটিভি ভারতের প্রথম খবরে জেরে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল মেদিনীপুর শহরে (Deprived of financial aid)। 22 বছরের মূক ও বধির শাহাজানের শিকল থেকে মুক্তি ঘটেছিল ইটিভি ভারতের খবরের জেরে । তড়িঘড়ি তাঁর মাটির ঘরেই দৌড়ে এসেছিলেন সরকারি প্রতিনিধি থেকে পুলিশ প্রশাসন । মিডিয়ার আলোর ঝলকানিতে 24 ঘণ্টার মধ্যেই অ্যাকাউন্ট বানিয়ে সরকারি সাহায্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় শাহাজানের ঝুলিতে ।
কিন্তু এখনও বছর ঘোরেনি ৷ সরকারি উদাসীনতার কারণে শিকল থেকে মুক্তি ঘটলেও শাহাজানের কিন্তু আর্থিকভাবে মুক্তি ঘটল না । কারণ সেই সময় সরকারি কর্মীদের উদ্যোগে তড়িঘড়ি অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে 'প্রতিবন্ধী' সার্টিফিকেট করে দেওয়া হয় ৷ অ্যাকাউন্টে টাকাও আসে ৷ তবে তারপর আবার টাকা তুলতে গিয়ে বাঁধে বিপত্তি ৷ কারণ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট, পঞ্চায়েতের কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও ব্যাংক নতুন করে ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর্ম ফিলাপ করে জমা দিতে বলেছে । কিন্তু সেই ফর্ম ফিলাপ করেও কাগজপত্র পাচ্ছে না পরিবার ।
বহুবার সরকারি দফতরের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছেন শাহাজানের মা মর্জিনা বিবি ও বাবুয়া মোল্লা ৷ কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি । অভিযোগ, কোনও কারণ ছাড়াই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের ৷ কপালে জুটেছে শুধু আশ্বাস । এই অবস্থায় ছেলের টাকা তুলতে না পেরে ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত পরিবার ।
আরও পড়ুন: 22 বছর পেরিয়েও শিকলবন্দি জীবন মেদিনীপুরের শাহাজানের
উল্লেখ্য, এই বাবুয়া মোল্লা আর মর্জিনা বিবির তিন সন্তান । এক ছেলে শাহাজান এবং দুই মেয়ে সুলতানা খাতুন ও জান্নাতুর খাতুন । পেশায় রিক্সাচালক বাবুয়া মোল্লা কোনওক্রমে অতি কষ্টে দিন যাপন করেন রিকশা চালিয়ে । আর মর্জিনা বিবি তিন সন্তানের পেটে খাবার তুলে দিতে দুবেলা দৌড়ে বেড়ান লোকের বাড়িতে কাজ করতে । শাহাজান ছোটবেলায় খেলতে গিয়ে এক দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত লাগার পর থেকে মানসিকভাবে রোগগ্রস্ত হয়ে পড়েন । যেহেতু বাড়ির সবাই কাজের দৌলতে বেরিয়ে যান, তাই বিশেষ ভাবে সক্ষম শাহাজাহান যাতে কোথাও পালিয়ে না যান, সেই আতঙ্কে ছেলেকে তাঁরা ঘরের মধ্যে তাঁকে শিকল দিয়ে বেঁধে চাবি দিয়ে বন্দি করে রেখে যেতেন । এইভাবেই 22 বছর ধরে শাহাজানকে তাঁরা শিকলবন্দি করে রেখেছেন । আর সেই খবর খবর ছড়িয়ে পড়তেই তড়িঘড়ি মুক্তি ঘটেছিল যুবকের ।
এ দিন মর্জিনা বিবি বলেন, ইটিভি ভারতের খবরের জেরে ছেলের শিকল থেকে মুক্তি ঘটিয়েছিলাম আমরা এবং আমাদেরকে বোঝানো হয়েছিল শিকলে বেঁধে রাখা আইনি অপরাধ । এই খবরের জেরে তড়িঘড়ি আমাদের অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়েছিল । প্রথম দু মাস টাকাও পেয়েছিলাম । কিন্তু তারপর থেকে ব্যাংক টাকা দিতে অস্বীকার করে । আরও কাগজপত্র জমা দিতে বলে । আর সেই কাগজ আনতে গেলে জেলা প্রশাসন মাসের পর মাস ঘোরাচ্ছে । আমরা হতাশ ও আতঙ্কিত । কীভাবে দুবেলা খাবার তুলে দেব, সেই ভেবে রাতে ঘুম ধরছে না ।"
এ বিষয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য নিরঞ্জন হালদার বলেন, বিষয়টি তাঁরা আগে জানাননি । শিকল মুক্তি ঘটেছিল প্রথম খবরের জেরে । এরপর সমস্ত কাগজপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল ৷ কিন্তু তারপর তাঁরা যে টাকা তুলতে পারছেন না, তা জানতাম না । হয়তো সরকারের গাফিলতি রয়েছে ৷ আমরা বিষয়টা খোঁজ খবর করে খতিয়ে দেখব ।"