চণ্ডীপুর, 23 মার্চ : চণ্ডীপুরে নিখোঁজ যুবকের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার হল চণ্ডীপুর থানায় কর্মরত সিভিক ভলান্টিয়ার। ধৃতের নাম গোপাল প্রধান। পুলিশ জানিয়েছে, জেরায় গোপাল স্বীকার করেছে যে, তার প্রেম প্রস্তাবে কিশোরী রাজি না হওয়াতেই সূর্যদীপকে খুন করেছে। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আক্রোশ মেটাতে কিশোরীর প্রেমিক সূর্যদীপকে খুন করে প্রমাণ লোপাটের জন্য জলে ফেলে দিয়েছিল।
ধৃতের বিরুদ্ধে IPC 302, 201 ও 34 ধারায় মামলা রুজু করেছে চণ্ডীপুর থানার পুলিশ। তাকে গতকাল তমলুক আদালতে তোলা হলে বিচারক 14 দিনের পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দেন। সূর্যদীপকে খুনের ঘটনায় কিশোরী ও তার বাবা-মাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সূর্যদীপ সাঁতরার সঙ্গে বছর দেড়েক আগে পাশের গ্রাম সরীপুর এলাকার ওই কিশোরীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অভিযোগ, মাস চারেক আগে চণ্ডীপুর থানায় কর্মরত গোপাল প্রধান কিশোরীকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তারপর থেকে সূর্যদীপের সঙ্গে কিশোরীর সম্পর্কের অবনতি হয়। যদিও কিছুদিনের মধ্যে সম্পর্ক পুনরায় স্বাভাবিক হয়। অভিযোগ, কিশোরী ও সূর্যদীপের সম্পর্কে চিড় ধরাতে না পেরে দু'জনকেই ফোনে হুমকি দেওয়া শুরু করে গোপাল। এমন কী গোপাল দশ দিন আগে চণ্ডীপুর বাজারে সূর্যদীপকে সম্পর্ক থেকে না বেরিয়ে এলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় বলে অভিযোগ।
মৃতের পরিবারের তরফ জানা গেছে, 18 তারিখ সন্ধ্যার সময় সূর্যদীপের ফোনে একটি ফোন আসে। এরপরই সাইকেল নিয়ে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। ওই দিন প্রেমিকার সঙ্গে দেখাও করে। জানা গেছে, এরপর রাত সাড়ে নটা নাগাদ চণ্ডীপুর BDO অফিসের পিছনের রাস্তায় গোপালের সাথে দেখা করে সূর্যদীপ। সেখানেই গোপাল সূর্যদীপকে কিশোরীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে বলে। যা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয় সূর্যদীপ। তারপরই শুরু হয় বচসা। তখনই মেজাজ হারিয়ে গোপাল সূর্য দ্বীপের ঘাড়ে সজোরে একটি ঘুসি মারে। আর তাতেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সূর্যদীপ। রাস্তায় দেহ পড়ে থাকলে ধরা পড়ে যেতে পারে এই ভয়েই প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে গোপাল সূর্যদীপের দেহ পাশের নয়নজুলিতে ফেলে তার উপরে সাইকেল চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার সূর্যদ্বীপের পচাগলা মৃতদেহ ও সাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ। গতকাল তমলুক জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর দেহ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে। সূর্যদীপের বাবা দীপক সাঁতরা বলেন, "আমার ছেলেকে খুনের পিছনে সিভিক ভলান্টিয়ার গোপাল একা জড়িত নয়। আরও অনেকে রয়েছে। আমাদের ধারণা কিশোরী ও তার বাবা-মাও জড়িত রয়েছে ছেলেকে খুনের পিছনে। কারণ ওই দিনই কিশোরীর বাড়িতে গিয়েছিল আমার ছেলে। তারপরই এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ তাদেরও গ্রেপ্তার করুক। আমার ছেলেকে যারা এই নির্মমভাবে খুন করেছে তাদের কঠিন শাস্তি চাই।"
নন্দকুমার সার্কেলের ইন্সপেক্টর রঞ্জিত ঘোষ বলেন, অভিযুক্ত যুবক গোপাল প্রধান সূর্যদীপকে খুনের কথা স্বীকার করেছে। কিশোরীর সাথে প্রেমঘটিত বচসার জেরে এই খুন। তদন্তের স্বার্থে কিশোরী ও তার বাবা-মাকে আটক রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।