কেশপুর, 2 ডিসেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর ভুয়ো ধর্ষণ কাণ্ডে (Keshpur Fake Rape Charge) নাম জড়াল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রভাবশালী এক নেতার (Local TMC Leader) ৷ আক্রান্ত যুবকের দাবি, শাসকদলের প্রাক্তন বুথ সভাপতি সঞ্জয় পানের নির্দেশেই পাঁচ বছর আগে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছিল ! যদিও ইটিভি ভারতকে সঞ্জয় জানিয়েছেন, তিনি কোনওভাবেই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন ৷ এমনকী, তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্ত করা হচ্ছে বলেও আশংকা করেছেন সঞ্জয় ৷
কেশপুর ভুয়ো ধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্ত যুবকের দাবি ঠিক কী ? তাঁর অভিযোগ, পাঁচবছর আগে প্রতিবেশী নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার পর তার মুখ দিয়ে 'ধর্ষক' হিসাবে যুবকের নাম বলিয়ে নেওয়া হয় ! দাবি করা হয়, বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নাবালিকার সঙ্গে সহবাস করেছেন যুবক ৷ এই অভিযোগ অস্বীকার করেন যুবক ৷ তারপরই গ্রামে সালিশি সভা বসে ৷ যুবকের দাবি, এই সালিশি সভা বসানো হয়েছিল সঞ্জয় পানের নির্দেশে ৷ সেই সালিশিতে নিদান দেওয়া হয়, ওই যুবককে প্রতিবেশী অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকাকে বিয়ে করতেই হবে ৷ চাপের মুখে সেই নির্দেশ মানতে বাধ্য হন যুবক ৷ প্রসঙ্গত, সঞ্জয় পান ওই যুবকের স্ত্রীর দূর সম্পর্কের আত্মীয় বলেও দাবি সংশ্লিষ্ট সূত্রের ৷
আরও পড়ুন: পাঁচ বছরে জানা গেল তিনি ধর্ষক নন ! তথ্যফাঁস ডিএনএ পরীক্ষায়
সমস্যা চরমে ওঠে এর পর থেকে ৷ নাবালিকাকে বিয়ের পরই গ্রাম ছাড়েন যুবক ৷ মামলা করেন মেদিনীপুর আদালতে ৷ অভিযোগ, এরপরই আসরে নামেন সঞ্জয় পানের অনুগামীরা ৷ মামলা তুলে নেওয়ার জন্য যুবককের পরিবারের বাকি সদস্যদের উপর চাপ দেওয়া হয় ৷ তাঁদের একঘরে করে দেওয়া হয় ৷ কেড়ে নেওয়া হয় জমি ৷ এমনকী, যুবকের পরিবারের কাছ থেকে কয়েক দফায় 2 লক্ষ টাকা 'জরিমানা'ও আদায় করেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা ও কর্মীরা ৷ পরবর্তীতে, যুবকের কাকার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় ৷ পরিবারের দাবি, এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্যও তৃণমূলের স্থানীয় নেতা ও কর্মীরাই দায়ী !
অভিযোগের এই পাহাড় কতা সত্যি ? তা জানতে ইটিভি ভারতের স্থানীয় প্রতিনিধি যোগাযোগ করেছিলেন অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা সঞ্জয় পানের সঙ্গে ৷ তিনি বলেন, পাঁচবছর আগে যেদিন সালিশি সভা বসেছিল, সেদিন তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না ৷ নিদান যা দেওয়ার, তা গ্রামের মানুষই দিয়েছিল ৷ এখানে তাঁর কী করার থাকতে পারে ! এমনকী, এই যুবক কেন তাঁকে কাঠগড়ায় তুলছেন, তাও তাঁর বোধগম্য হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন সঞ্জয় ৷ তাঁর পালটা বক্তব্য, এই ঘটনার নেপথ্য থাকতে পারে গেরুয়া শিবির ! সেটা কীভাবে ?
সঞ্জয়ের যুক্তি, এর আগে এই ঘটনা প্রসঙ্গেই নাকি স্থানীয় বিজেপি কার্যালয়ে বসে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন আক্রান্ত যুবক ! অন্যদিকে যুবকের দাবি, পাঁচবছর আগে সেই যে বাড়ি ছেড়েছিলেন তিনি, তারপর থেকে গ্রামে ঢোকাই দায় হয় তাঁর ৷ ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই বিজেপির স্থানীয় কার্যালয়ে আশ্রয় নিতে হয় তাঁকে ! যদিও যুবকের সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই বলেই দাবি করেছেন স্থানীয় বিজেপি নেতা তন্ময় ঘোষ ৷ এই বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি ৷
এদিকে, এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধেও তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ উঠছে ৷ এই বিষয়ে কথা বলার জন্য ইটিভি ভারতের তরফ থেকে জেলা পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি ৷