মেদিনীপুর, 24 ডিসেম্বর: তিনি একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক, কখনও সংবাদমাধ্যমের উপদেষ্টা আবার নিজেও কাজ করেছেন সাংবাদিক হিসেবে। পরবর্তীতে লোক আদালতে বিচারকের দায়িত্বও সামলেছেন মেদিনীপুরের সৌমেন্দু দে ৷ তাঁকেই এখন প্রশাসনের দুয়ারে ঘুরতে হচ্ছে সুবিচারের আশায় ৷ মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধে বাবার মৃত্যুর পর নার্সিংহোমের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে অনড় জঙ্গলমহলের সৌমেন্দু (Son looking for justice of his father death due to expired medicine)৷
সৌমেন্দু দে'র বাবা প্রবোধ চন্দ্র দে (75) গত 2019 কফ-কাশির সমস্যা নিয়ে মেদিনীপুর শহরের স্পন্দন নামে একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি হন। কিন্তু নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত গাফিলতি হাতেনাতে ধরে ফেলেন সৌমেন্দু। তাঁর অভিযোগ, বাবাকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ দেওয়া হয় ৷ সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে তাঁর কাছে ঘটনার ভিডিওগ্রাফিও রয়েছে ৷ সৌমেন্দু বাবু জানিয়েছেন, ঘটনার পর আতঙ্কিত হয়ে তিনি চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। চিকিৎসকের পরামর্শমতো তড়িঘড়ি বাবাকে বাড়ি নিয়ে যান তিনি এবং বাড়ি ফিরেই তিনি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন স্বাস্থ্য দফতরে। সেই মামলা দীর্ঘদিন চলার পর রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনে সৌমেন্দুবাবুর অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়। রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের তরফে স্পন্দন নার্সিংহোমকে 10 লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু জরিমানার টাকা সৌমেন্দুবাবু নিতে অস্বীকার করেন।
তাঁর দাবি ছিল অবিলম্বে শাস্তি দিতে হবে নার্সিংহোমকে এবং প্রয়োজনে লাইসেন্স বাতিল করতে হবে এই নার্সিংহোমের। পরবর্তীকালে জরিমানার 5 লক্ষ টাকা ঝাড়গ্রামের একলব্য স্কুলের উন্নয়নে দেওয়া হয় এবং অবশিষ্ট 5 লক্ষ টাকার মধ্যে কিছু টাকা স্পন্দন নার্সিংহোমকে বিল হিসেবে দেওয়া হয় ৷ আর বাকি টাকা তিনি বিভিন্ন অনাথ আশ্রমের উন্নয়ন-খাতে ব্যবহার করা হয়। বাড়িতে কিছুদিন চিকিৎসার পর ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে বাবাকে ফের স্পন্দন নার্সিংহোমেই ভর্তি করানো হয়। ওইদিনই মারা যান প্রবোধ চন্দ্র দে ৷ এরপর সৌমেন্দুবাবু পুনরায় স্বাস্থ্য দফতরে হাজির হন অভিযোগ নিয়ে।
সৌমেন্দুবাবুর আরও অভিযোগ, স্পন্দন নার্সিংহোম কিছুতেই ডেথ সার্টিফিকেটে আসল কারণ উল্লেখ করছিল না ৷ এমনকী কোনও সাপোর্টিং পেপারস বা ডকুমেন্টস দিতেও অস্বীকার করে। ক্রমাগত নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের অসঙ্গতিপূর্ণ কথা শুনে সৌমেন্দু বাবু থানায় অভিযোগ জানাতে গেলেও তাঁকে খালি হাতে ফিরতে হয় ৷ কিন্তু লড়াইয থামেনি তাঁর ৷ তিনি রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের পাশাপাশি জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিককে অভিযোগ জানান লিখিতভাবে। রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন সৌমেন্দু বাবুকে উপযুক্ত জায়গায় মৃত্যু এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত অভিযোগ জানানোর কথা বলে। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক থেকে দীর্ঘদিন কোন উত্তর না-পেয়ে এরপর অভিযোগ নিয়ে জেলাশাসকের দ্বারস্থ হন ৷
আরও পড়ুন: এসএসসি'র ভুয়ো শিক্ষকদের তালিকায় নাম থাকার আশঙ্কা, আত্মঘাতী নন্দীগ্রামের শিক্ষিকা
জেলাশাসক সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য দফতরকে চটজলদি এই ঘটনার তদন্ত করে শাস্তি দেওয়ার নির্দেশ দেয় ৷ কিন্তু সৌমেন্দুবাবুর অভিযোগ এর পরেও দীর্ঘদিন কেটে গেলেও তিনি কোনও দিক থেকে সাহায্য পাননি, এমনকী তাকে যে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে সেটিও বাবা মারা যাওয়ার এক মাস আগের। তাই পৌরসভা থেকে দালাল ধরে টাকার বিনিময়ে পেতে হয় পৌরসভার ডেথ সার্টিফিকেট। অপরদিকে ভুল ডেথ সার্টিফিকেট সহ মৃত্যুর বৈধ সার্টিফিকেট না-পাওয়ার জন্য আটকে যায় মেডিক্লেইম। পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য দফতরের কাছে বিচার না-পেয়ে অবশেষে তাই সংবাদমাধ্যমের কাছে দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। সৌমেন্দু বাবুর দাবি একটাই- অবিলম্বে এই নার্সিংহোমের লাইসেন্স বাতিল হোক এবং বাবার মৃত্যুর সঠিক কারণ সামনে আসুক।
যদিও এ বিষয়ে নার্সিংহোম মালিক পার্থ পাল বলেন, "আমাদের একজন নার্স ভুল করে ইনজেকশন দিতে গিয়েছিল ওনার বাবাকে, ভুল ধরা পড়ার পর আমরা তার জন্য ক্ষতিপূরণ দিয়েছি রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের নির্দেশে। কিন্তু তারপরও উনি এ বিষয়ে একাধিকবার অভিযোগ করছেন। কেন করছেন তা বুঝতে পারছি না। ডেথ সার্টিফিকেটের ভুল প্রসঙ্গে তিনি বলেন লিখতে গিয়ে কোন কারণে ভুল হয়ে গিয়েছে, সেজন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।