শালবনি, 20 জুন: মনোনয়ন পর্ব শেষ হয়েছে ৷ এ বার ভোটে লড়ার পালা । রাজ্য রাজনীতিতে শাসক দলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মনোনয়ন দাখিল করেছে বিরোধীরা । তবে সারা রাজ্যের পাশাপাশি শালবনি ব্লকের কর্ণগড়, কাশিজোড়া ও বাঁকিবাঁধ অঞ্চল নিয়ে জেলা পরিষদের 57 নম্বর আসনে লড়াই হবে দু জায়ের । লড়াই মোদি বনাম মমতার । অর্থাৎ একজন লড়ছেন তৃণমূলের হয়ে ও আর এক জা লড়ছেন বিজেপির প্রার্থী হয়ে ৷ কেউই লড়াই না করে জায়গা ছাড়তে রাজি নন ।
ভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে লড়াই ততই জমে উঠেছে । কোথাও ভাইয়ে ভাইয়ে, তো কোথাও বন্ধুর মধ্যে লড়াই । জলপাইগুড়িতে মিমি চক্রবর্তীর পরিরারের তিন জা-কে সম্মুখসমরে নামতে দেখা গিয়েছে ৷ তিন মামিকে শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন যাদবপুরের তৃণমূল সাংসদ ৷ এ বার দুই জায়ের লড়াইয়ের ছবি ধরা পড়ল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৷ সেখানকার 60টি জেলা পরিষদের মধ্যে 57 নম্বর আসনে দুই জায়ের লড়াই ৷ শালবনি ব্লকের কর্ণগড়, কাশিজোড়া ও বাঁকিবাঁধ অঞ্চল নিয়ে জেলাপরিষদের এই 57 নম্বর আসন ।
এই আসনে একদিকে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন ঊষা কুন্ডু । আর ওই আসনে তাঁরই জা চন্দনা কুন্ডু লড়ছেন বিজেপি প্রার্থী হয়ে ৷ একজনের ভরসা মোদি ৷ আর অপর জনের মুখে শুধুই দিদি ৷ প্রচারে বেরিয়ে একজন বাংলার উন্নয়নের কথা তুলে ধরে কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগে সরব হচ্ছেন ৷ একশো দিনের টাকা না দেওয়ার কথা বলছেন । আর একজন দুর্নীতি ও হিংসার অভিযোগ তুলে শোনাচ্ছেন মোদি-শাহের আশ্বাসবাণী ৷ দুজনেরই বাড়ি কর্ণগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের গোবরু এলাকায় । এছাড়াও ওই আসনে সিপিএম ও কংগ্রেসেরও প্রার্থী রয়েছে ।
ঊষা কুন্ডু রাজনীতি করছেন অনেক দিন আগে থেকেই ৷ বিগত 2013 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের জেলা পরিষদের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেছিলেন তিনি । 2018 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়ে শালবনি পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধক্ষ্য হিসাবে কাজ করেন । তাই দল খুশি হয়ে এ বার তাঁকে জেলা পরিষদের আসনে প্রার্থী করেছে । প্রয়াত স্বামী লোচন কুন্ডু কর্ণগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন । স্বামীর মৃত্যুর পরও তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেননি ।
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েতে একই আসনে তিন দলের প্রার্থী তিন মামি, আগাম শুভেচ্ছা মিমির
ঊষা জানান, সবার রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে । তাঁর বিরুদ্ধে জা চন্দনা কুন্ডু বিজেপি দলের প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন । তবে এর কোনও প্রভাব পরিবারে পড়বে না বলে দাবি তৃণমূল প্রার্থীর ৷ সেই সঙ্গে তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে উন্নয়ন করেছেন, তা সকলেই জানেন । তাই উন্নয়নের জন্য মানুষ তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে তাঁকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে তিনি আশাবাদী । তাঁর কথায়, "এখানকার মানুষ একশো দিনের কাজ করে এখনও টাকা পাননি । আবাস যোজনার টাকা পাননি । 67টি জনমুখী প্রকল্প চালু করে মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ।"
অপরদিকে, বিজেপি এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে লোচন কুন্ডুর ভাই গোপাল কুন্ডুর স্ত্রী চন্দনা কুন্ডুকে । রাজনীতিতে তিনি একেবারে নতুন না হলেও, বড় কোনও সাফল্য এখনও পাননি ৷ তবে এ বার জেতার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী ৷ বিজেপি প্রার্থী জানান, দুই জা ভিন্ন দলের হয়ে ভোটে দাঁড়ালেও তার প্রভাব পরিবারে পড়বে না । দলের নীতি আদর্শ তুলে ধরে মানুষের কাছে গিয়ে প্রচার করবেন তিনি । সেই সঙ্গে তিনি বলেন, যে ভাবে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার দুর্নীতি করেছে, তা রাজ্যের মানুষ ভালোভাবে জানেন । তাই তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ তাঁকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলেই তাঁর বিশ্বাস ।
দুই জায়ের লড়াই নিয়ে এই এলাকায় জল্পনা তুঙ্গে ৷ কুন্ডু পরিবারে জোড়া ফুল নাকি পদ্ম ফোটে, সেটাই এখন দেখার ৷