কেশপুর, 5 সেপ্টেম্বর : পুলিশ আধিকারিকের রহস্যমৃত্যুতে খুনের অভিযোগ স্ত্রীর ৷ কাঠগড়ায় পুলিশেরই অন্য এক আধিকারিক ৷ শনিবার সকালে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর থানার পুলিশ ব্যারাকেই উদ্ধার হয় এসআই সঞ্জয় চৌধুরীর (47) ঝুলন্ত দেহ ৷ পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, তিনি আত্মহত্যা করেছেন ৷ কিন্তু মৃতের স্ত্রী ঈপ্সিতা চৌধুরীর দাবি, তাঁর স্বামী এমনটা করতেই পারেন না ৷ ঈপ্সিতার আশঙ্কা, তাঁর স্বামীকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন কেশপুর থানায় কর্মরত ওই পুলিশ আধিকারিক ৷ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীর কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন ঈপ্সিতা ৷
আরও পড়ুন : Police Death : থানা চত্বরে পুলিশ কর্মীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার শীতলকুচিতে
শনিবার সকালে পুলিশ ব্যারাকের যে ঘর থেকে সঞ্জয় চৌধুরীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়, সেই ঘরেই তিনি থাকতেন ৷ সূত্রের দাবি, ওই দিন সকালে রোজের মতোই সঞ্জয়ের ঘর পরিষ্কার করতে ঢোকেন পরিচারিকা ৷ তখনই এসআই-এর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান তিনি ৷ কেশপুর থানার পুলিশ দেহ উদ্ধার করে কেশপুর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় ৷
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার ব্যারাকের অন্য পুলিশকর্মীরা কাজে যোগ দিলেও সঞ্জয় অনুপস্থিত ছিলেন ৷ গোটা ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গিয়েছেন তাঁর সহকর্মীরা ৷ তাঁদের অনুমান, সঞ্জয় আত্মহত্যাই করেছেন ৷ কিন্তু, কেন তাঁকে এমন চরম সিদ্ধান্ত নিতে হল, সেটা বোধগম্য হচ্ছে না পুলিশের কর্মী থেকে আধিকারিক, কারওরই ৷ তাঁরা বলছেন, কেশপুর থানায় আগে কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি ৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা হলেও মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন থানায় কর্মরত পুলিশকর্মী ও আধিকারিকরা ৷
সঞ্জয়ের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি মেদিনীপুরের কুইকোটার বাসিন্দা ৷ তাঁর শ্বশুর বাড়ি মেদিনীপুরেরই গোলাপী চকে ৷ কিন্তু, এতদিন বিষ্ণুপুরে পোস্টিং ছিল তাঁর ৷ সেখানেই থাকতেন নিজের পরিবার নিয়ে ৷ মাস তিনেক আগে বিষ্ণুপুর থেকে কেশপুরে স্থানান্তরিত করা হয় সঞ্জয়কে ৷ তাঁদের একমাত্র ছেলে স্কুলে পড়ে ৷ তাই এখনও ছেলেকে নিয়ে বিষ্ণুপুরেই থাকেন সঞ্জয়ের স্ত্রী ৷ সঞ্জয় এসে ওঠেন কেশপুর থানার পুলিশ ব্য়ারাকে ৷ পুলিশ মহলে তিনি শান্ত, বিনয়ী ও সাহসী বলেই পরিচিত ছিলেন ৷ কারও সঙ্গে কোনও ঝামেলায় জড়ানো পছন্দ করতেন না ৷ এমন একজন মানুষ কেন হঠাৎ আত্মহত্যা করতে যাবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না সঞ্জয়ের সহকর্মীরা ৷
আরও পড়ুন : ব্যবসায়ীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার বসিরহাটে, তদন্তে পুলিশ
প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছে সঞ্জয়ের স্ত্রী ঈপ্সিতার গলাতেও ৷ তিনি জানান, সঞ্জয় বরাবরই পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল ৷ শুক্রবার রাতেও স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল তাঁর ৷ তখনও তাঁর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ করেননি ঈপ্সিতা ৷ তাহলে রাত পোহাতেই কী এমন হল, যে সঞ্জয়কে গলায় দড়ি দিতে হল ! আর এখানেই খটকা লাগছে মৃতের স্ত্রীর ৷ তাঁর দাবি, এটি আত্মহত্যার ঘটনা হতে পারে না ৷ ষড়যন্ত্র করে খুন করা হয়েছে সঞ্জয়কে ৷ এই ঘটনায় পুলিশেরই অন্য এক আধিকারিক জড়িত থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি ৷ প্রকৃত ঘটনা জানতে আইন মাফিকই পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঈপ্সিতা ৷