ঘাটাল, 26 জানুয়ারি: একদিকে পড়ুয়ার অভাবে স্কুলে সরস্বতী পুজো হল না আর একদিকে শিক্ষকের অভাবে ৷ দুই মেদিনীপুরে সরস্বতী পুজোর দিনের এহেন ঘটনা কোথাও গিয়ে আমাদের উন্নতির পাশাপাশি অবনতির দিকটাও তুলে ধরে ৷ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রী ছাড়া স্কুল যে এই যুগেও চলছে এটাই আশ্চর্যের ৷ তবে অবিশ্বাস্য হলেও তা যে চলছে এটাই সত্যি ৷
শিক্ষকের অভাবে স্কুলে সরস্বতী পুজো না হওয়ার ছবি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল ব্লকের বরকতিপুর জুনিয়র হাইস্কুলে (Ghatal Barkatipur Junior High School)। বর্তমানে যে শিক্ষক রয়েছেন তাঁর বক্তব্য, "পুজোর বিষয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি থেকে শুরু করে সকলকেই জানানো সত্ত্বেও কেউ কোনও উদ্যোগ নেয়নি ৷ তার জন্যই স্কুলে পুজো হল না ৷" নিজের স্কুলে পুজো না হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই মুখভার পড়ুয়াদের ৷ স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়ে সেজেগুজে অন্যত্র অঞ্জলি দিতে যাচ্ছে কচি মুখগুলো ৷ এই বিষয়ে স্কুল পরিচালন কমিটির সদস্যরা অবশ্য কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি । তবে সকলেরই দাবী দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে ঘাটাল ব্লকের মনসুকা গ্রাম পঞ্চায়েতের এই বরকতিপুর জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয় । তাই এমন পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
ঘটনা ক্রমে জানা যায়, 2016 সালে স্কুলের অনুমোদন দেয় রাজ্য সরকার । যেখানে দুইজন অতিথি শিক্ষক দিয়ে শুরু হয় স্কুল । ইতিমধ্যে ছাত্র সংখ্যা 200 পেরিয়ে গিয়েছে ৷ এদিকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্কুলে পড়াশোনা চলতে চলতে বয়সের ভারে অবসর নিয়েছেন অতিথিদের শিক্ষকদের একজন । আর কয়েকবছর ধরে বাকি এক শিক্ষকেই চালাচ্ছে গোটা স্কুল ৷ এলাকার কয়েকজন শিক্ষিত বেকার যুবক স্কুলের এমন পরিস্থিতিতে পাশে দাঁড়ালেও, স্কুল পরিচালনায় ব্যাঘাত তো ঘটেই । এই ঘটনায় দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের কাছে এলাকার মানুষ দাবি জানিয়েছিল শিক্ষক নিয়োগের । কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা না 200 থেকে বর্তমানে পড়ুয়ার সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে 50-এ ৷ শিক্ষকের অভাবে স্কুল থেকে মুখে ফেরাচ্ছে পড়ুয়ারা ৷ এমন চলতে থাকলে অচিরেই হয়ত সব পড়ুয়ায় চলে যাবে এই স্কুল ছেড়ে ৷
যদিও বর্তমান স্কুলের শিক্ষক (অবসরপ্রাপ্ত) মনোজ কুমার ভূঁইয়ার দাবি, "আমি কয়েকদিন স্কুলে আসিনি কিন্তু পুজোর বিষয়ে পরিচালন কমিটিকে জানিয়েছিলাম কোনও সাড়া মেলেনি । তবুও আজ সকালে স্কুলে এসেছি সেই ধরনের কোনও ছাত্র-ছাত্রী আজ স্কুলে না আসায় পুজো করা হল না ।" এই বিষয়ে ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি দিলীপ মাজি বলেন, "বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে । তবে পুজো না হওয়ায় আমরা লজ্জিত ।"
প্রসঙ্গত, একটি মাত্র পড়ুয়া আর 3 শিক্ষক নিয়ে এভাবেই ধুঁকছে পূর্ব মেদিনীপুরের আলুয়াচক জুনিয়র হাই স্কুল ৷ সরকারি স্কুলগুলির পরিস্থিতি এরকম হলে তো প্রত্যন্ত গ্রামের পড়ুয়াদের পক্ষে তা ক্ষতিকর হবে ৷ শীঘ্রই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক সরকার, চাইছেন সকলেই ৷
আরও পড়ুন : এক ছাত্র ও তিন শিক্ষক, জুনিয়র হাইস্কুলে ব্রাত্য দেশ ও বাণী বন্দনা